রবিবার, ২০ জুলাই ২০২৫

শিরোনাম

বাংলাদেশে ঐতিহ্যবাহী মণিপুরী নৃত্য

শনিবার, জুলাই ১৯, ২০২৫

প্রিন্ট করুন

সংগ্রাম দত্ত

বাংলাদেশে মণিপুরী নৃত্য একটি ঐতিহ্যবাহী ও জনপ্রিয় নৃত্যধারা। এটি মূলত ভারতের মণিপুর রাজ্য থেকে আগত মণিপুরী সম্প্রদায়ের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বাংলাদেশের সিলেট বিভাগে, বিশেষ করে মৌলভীবাজার, সিলেট, সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জ জেলায় এই সম্প্রদায়ের বসবাস এবং নৃত্যচর্চা বেশি দেখা যায়।

মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলায় সবচেয়ে বেশি মণিপুরী বসবাস করেন। পাশাপাশি সিলেটের বিভিন্ন এলাকা ও হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাটেও রয়েছে তাদের বসতি।

মণিপুরী নৃত্য শুধু বিনোদন নয়, এটি তাদের ধর্মীয় ও সামাজিক জীবনের অংশ। এই নৃত্যধারার বিভিন্ন রূপ রয়েছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—রাসলীলা, জাগোই ও পুং চোলম।

রাসলীলা মণিপুরী নৃত্যের প্রধানতম রূপ। এটি রাধা-কৃষ্ণের প্রেমলীলাভিত্তিক নৃত্যনাট্য, যা বিশেষ করে উৎসব-অনুষ্ঠানে পরিবেশিত হয়। পুং চোলম এক ধরনের গতিশীল নৃত্য, যেখানে শিল্পীরা একযোগে ঢোল বাজিয়ে নৃত্য পরিবেশন করেন।

মণিপুরী নৃত্যের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো এর মার্জিত, শান্ত ও লীলায়িত ভঙ্গি, যা একে অন্যান্য ভারতীয় ধ্রুপদী নৃত্যধারা থেকে আলাদা করে। এতে শরীরের নরম ও ছন্দময় গতিবিধি, বিশেষ করে হাতের সূক্ষ্ম ভঙ্গিমা ও পায়ের হালকা পদক্ষেপ লক্ষণীয়। নৃত্যশিল্পীরা সাধারণত মেঝের কাছাকাছি থেকে নড়াচড়া করেন এবং গোড়ালিতে ঘণ্টা কম ব্যবহার করেন।

এই নৃত্যে হাতের ভঙ্গিমা ও মুদ্রা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিল্পীরা হাতের মাধ্যমে গল্প ও ভাব প্রকাশ করেন, যা নৃত্যকে করে তোলে আরও অর্থবহ ও জীবন্ত।

নৃত্য পরিবেশনের সময় মণিপুরী শিল্পীরা ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরেন, যা নৃত্যের সৌন্দর্য ও আবেদন আরও বাড়িয়ে তোলে। এই পোশাক যেমন রঙিন, তেমনি তা ঐতিহ্য ও আধ্যাত্মিকতার প্রতীকও।

বাংলাদেশে মণিপুরী নৃত্য কেবল একটি শিল্প নয়, এটি একটি সংস্কৃতির বহিঃপ্রকাশ—মণিপুরী জনগোষ্ঠীর জীবনের বিশ্বাস, মূল্যবোধ ও ঐতিহ্যের ধারক।

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন