ইফতেখার ইসলাম:
ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশে এখন চলছে হেমন্তকাল। প্রতিবছর অগ্রহায়ণের এই সময় এদেশের গ্রামে গ্রামে চলে ধান কাটার উৎসব। সকালে সূর্যের কিরণে চকচক করে সোনালী ধান। আর তা দেখে আনন্দে ভরে যায় কৃষক-কৃষাণীর মন।
এবারও তার ব্যতিক্রম কিছু নয়। গ্রাম বাংলায় এখন চলছে আমন ধান কাটার উৎসব। হেমন্তের সায়াহ্নে শেষ রাতে কিছুটা শীত পড়তে শুরু করেছে। সকালে ঘাসের ডগায় দেখা মিলছে শিশির কণা। তবে এর মাঝে কৃষকের সকল ব্যস্ততা পাকা ধান ঘরে তোলা নিয়ে৷
নেই গ্রীষ্মের দাবদাহের রুক্ষতা, নেই বর্ষার বিড়ম্বনা বা শীতের দুঃসহ শৈত্যপ্রবাহ। ঠিক এমনি সময় কৃষকরা ব্যস্ত সময় পার করছেন নতুন ধান কাটায়। যদিও দুপুরে রোদের তীব্রতা কম নয় !
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, এবছর দেশে আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৫ লাখ ৫৭ হাজার হেক্টর। আবাদ হয়েছে ৫৫ লাখ ৮৯ হাজার ৮১২ হেক্টর জমিতে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এবার ১১ শতাংশ বেশি জমিতে রোপা আমন আবাদ হয়েছে। এখন পর্যন্ত কাটা হয়েছে ১৮ লাখ ৮১ হাজার ৫১৮ হেক্টর জমির ধান। এবার আমন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ১ কোটি ৪৭ লাখ ৫২ হাজার ২২০ টন।
এইদিকে দেশের বিভিন্ন স্থানের কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে এবার ধানের ফলন বেশ ভালোই হয়েছে। আর তা স্বস্তি দিচ্ছে করোনা পরবর্তী এই সময়।
কক্সবাজারের রাজারকুলের হাজী পাড়ার কৃষক শামসুল হক জানান, এ বছর তিনি নিজের দুই একর জমিতে আমন ধান চাষ করেছেন। প্রতি একর ধান চাষে তাঁর ১৫ হাজার ৭৫০ টাকা খরচ হয়েছে। প্রতি একরে ২৬ দশমিক ২৫ মণ ধান হবে বলে তিনি আশা করছেন। ধান বিক্রি করে তাঁর বেশ লাভ হবে।
ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার কৃষক জব্বর আলী বলেন, পুরোদমে মাঠে এখন আমন ধান কাটা চলছে। ধান কেটে মাঠেই রাখা হচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেতের ধান বাড়ির উঠানে উঠানো হচ্ছে।অন্যবারের তুলনায় উৎপাদন বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ধানের দামও ভালো। হাজার টাকা মণে ধান বিক্রি হচ্ছে।
এইদিকে চট্টগ্রামের শস্যভাণ্ডার বলে খ্যাত গুমাই বিলেও দেখা গিয়েছে আমন ধান কাটার দৃশ্য। ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকদের মুখে ফুটেছে হাসি। কামাল উদ্দীন নামে এক কৃষক জানান, তাঁর কিছু জমির ধান কাটা শেষ হয়ে গিয়েছে আরো কিছু বাকি আছে। একদিকে জমিতে ধান কাটা চলছে অন্যদিকে বাড়িতে চলছে মাড়াইয়ের কাজ। এ কৃষকও জানান ফলন সন্তোষজনক।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. আসাদুল্লাহ বলেন, এবার ফলন খুব ভালো হয়েছে। ইতোমধ্যেই এক তৃতীয়ংশ জমির ধান কাটা শেষ হয়ে গেছে। এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আমানের আবাদ বেশি হয়েছে। আশা করছি উৎপাদনের যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, উৎপাদনও তারচেয়ে বেশি হবে।
তিনি আরো বলেন, এবার আমন চাষে ১ লাখ ৭৫ হাজার কৃষককে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছিল। নতুন জাতে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। হাইব্রিড আবাদে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। তাই এবার ফসলের উৎপাদন ভালো হচ্ছে।
চলমান নিউইয়র্ক ফেসবুক পেজ লাইক দিন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন