নিজস্ব প্রতিবেদক: রাষ্ট্রপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর মো. আব্দুল হামিদ বলেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) বাঙালি জাতির শিক্ষা, সংস্কৃতি, ইতিহাস-ঐতিহ্য, জ্ঞান-গবেষণা, মুক্তবুদ্ধি চর্চা, প্রগতিশীল ভাবনা, জাতি-গঠন ও দেশাত্মবোধের চেতনার এক তেজোদীপ্ত আলোকবর্তিকা; বাঙালির আশা-আকাঙ্ক্ষার এক অনন্য বাতিঘর।
বুধবার (১ ডিসেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষপূর্তি ও মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উৎসবের অনুষ্ঠানে ভার্চ্যুয়ালি সংযুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের মতো মুক্তির লড়াইয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা। জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ও মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর সঙ্গে একই সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ উদযাপনের এ মাহেন্দ্রক্ষণ শতবর্ষ পালনের অনুষ্ঠানকে আরো তাৎপর্যপূর্ণ করে তুলেছে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ বৃদ্ধি পেতে থাকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আইয়ুব খান সরকার ১৯৬১ সালে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অর্ডিন্যান্স’ জারি করে, যা ‘কালা কানুন’ হিসেবে পরিচিত। স্বাধীনতা পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেই অর্ডিন্যান্স বাতিল করেন এবং ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আদেশ ১৯৭৩’ জারি করেন। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে চিন্তার স্বাধীনতা ও মুক্তবুদ্ধি চর্চার পরিবেশ নিশ্চিত হয়।
লাদেশ সৃষ্টির পূর্বেকার ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় স্বাধীনতা-উত্তর সময়েও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সকল অগণতান্ত্রিক, অপসংস্কৃতি এবং সামরিক স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে চলেছে। এরই স্বীকৃতি স্বরুপ ২০১৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করা হয়। মুজিব জন্মশতবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফর পিস অ্যান্ড লিবার্টি’ স্থাপনও একটি অনন্য উদ্যোগ।
বিশ্বমানের পাঠক্রম তৈরির দিকে জোর দিয়ে আব্দুল হামিদ বলেন, বর্তমান শতাব্দীতে উন্নয়নশীল বিশ্বে উচ্চশিক্ষার গতি-প্রকৃতি নিয়ে আমাদেরকে নানাভাবে ভাবতে হচ্ছে। বিশ্বায়ন ও তথ্য-প্রযুক্তির অভাবনীয় বিস্ফোরণে সৃষ্ট ডিজিটাল বিভক্তি, উন্নত বিশ্বের সঙ্গে উন্নয়নশীল বিশ্বের যে ব্যবধান সৃষ্টি করেছে তার মোকাবেলা এবং পুঁজি ও শ্রমনির্ভর অর্থনীতি থেকে জ্ঞান নির্ভর-অর্থনীতিতে উত্তরণ এখন শিক্ষার প্রধান বিবেচ্য। এই পরিস্থিতিতে বিশ্বজ্ঞানের সঙ্গে ব্যক্তিক ও সামষ্টিক চেতনার সমন্বয় ঘটানোই বিশ্ববিদ্যালয়ের লক্ষ্য হওয়া উচিত।
কালের পরিক্রমায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা যেমন বেড়েছে তেমনি বেড়েছে এর অবকাঠামো ও শিক্ষা কার্যক্রমের পরিধি। আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে প্রতিযোগিতারও আন্তর্জাতিকীকরণ হয়েছে। তাই একজন শিক্ষার্থীকে ডিগ্রি অর্জনের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মান অর্জন করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকেও কারিক্যুলাম নির্ধারণ ও পাঠ দানের ক্ষেত্রে বিশ্বমানের কথা বিবেচনায় রাখতে হবে। মাতা-পিতা ও অভিভাবকগণ অনেক আশা-আকাঙ্ক্ষা নিয়ে ছেলেমেয়েদেরকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠান। এছাড়া তাদের পেছনে দেশ ও জনগণের বিনিয়োগও যথেষ্ট। তাই শিক্ষার্থীদেরকে পবিবার, দেশ ও জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরনের সক্ষমতা অর্জন করতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন- ভূটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ এবং ঢাবি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশেনের সভাপতি এ কে আজাদ, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মাকসুদ কামাল প্রমুখ।
আইআই/
চলমান নিউইয়র্ক ফেসবুক পেজ লাইক দিন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন