ইফতেখার ইসলাম: গেলো দুই বছর করোনায় স্তব্ধ হয়েছিলো পুরো পৃথিবী। নিউইয়র্ক সিটিও এই স্থবিরতার বাইরে ছিলো না। চারদিকে শুনশান নিরবতা আর তালাবদ্ধ অবস্থায় ছিলো শহরের দোকানগুলো। তবে এবারের রমজানের চিত্রটা খানিকটা ভিন্ন৷ পৃথিবী আবার সুস্থ হতে শুরু করেছে। স্বাভাবিক হয়েছে সবকিছু। নেই কোন বিধিনিষেধ, নেই ভয় । আর এমন ফুরফুরে পরিস্থিতিতে নিউইয়র্কে জমেছে ইফতারের বাজার। যা সত্যি নজর কাড়ছে।
মুরগির কাবাব, চিকেন কাঠি, শামিকাবাব, শিকের ভারী কাবাব, জিলাপি, শাহী জিলাপি, সমুচা, হালিম, দইবড়া, কাশ্মীরি সরবত, খোরমা, নানা জাতের মিষ্টি, ইসবগুলের সরবত, পুরি, পিঁঁয়াজু, বেগুনী, ছোলা, চপ,কাচ্চি – এসব জিনিসে সেজে আছে নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটস ও জ্যামাইকাসহ বিভিন্ন শহরের রাস্তা ও রেস্তোরাঁগুলো। দেখে মনে হবে এ যেন পুরান ঢাকা বা চকবাজারের কোন একটি স্থান। দেশীয় ইফতার আর হরেক রকমের খাবার দাবার নিয়ে সেজেছে শহরটি। আর সন্ধ্যের ঠিক আগে এই স্থানগুলোতে বিরাজ করে উৎসবের আমেজ।
নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটস, জ্যামাইকা, চার্চ-ম্যাকডোনাল্ড, ওজনপার্ক, ব্রঙ্কস, এষ্টোরিয়াসহ বিভিন্ন এলাকার সড়ক, ফুটপাত ও দোকান এখন রকমারি ইফতার সামগ্রীতে সাজানো। আর বিকেল হতে শুরু করলে ভিড় জমায় মানুষ। জ্যাকসন হাইটস ও জ্যামাইকা অঞ্চল বাংলাদেশি অধ্যুষিত হওয়ায় বেশিরভাগ মানুষই বাঙ্গালি। ইফতারের বাজারে বাংলা শব্দে সরগরম হয়ে উঠে পুরো এলাকা। এছাড়া স্থানীয় মানুষজনও ভিড় জমায় এসব দোকানে। আর বেশ আগ্রহের সাথে ভেক্তাদের সেবা দিয়ে থাকেন দোকানিরাও।
নারী,পুরুষ, বৃদ্ধা, শিশু প্রায় সবাই ভিড় জমান এই ইফতারের বাজারে। নিজেদের পছন্দের খাবার কিনতে ছুটে আসে শহরের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষজন। আর এই ইফতারের বাজারগুলো নিয়ে মানুষের আছে বাড়তি আমেজ ও উৎসাহ৷
সরজমিনে জ্যাকসন হাইটসের নবান্ন, ইত্যাদি,মোনলাইট,হাটবাজার – রেস্তোরাঁগুলো ঘুরে দেখা গেছে বাহারি ইফতারের সমাহার৷ তারমধ্যে ‘নবান্নের’ লাচ্ছি পরটা, বিহারি কাবাব, চিকেন বিহারি ও কাচ্চি বিরানির সুনাম মানুষের মুখে মুখে। এইদিকে ‘ইত্যাদির’ জিলাপি আর হালিমের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ক্রেতারা। আরবি ও বাঙালি খাবারের মিশিয়ে ইফতারের আয়োজন হয়েছে ‘হাটবাজার’ রেস্তোরাঁয়। দোকানদার বলছেন, এখানে একসাথে আরবি ও বাঙালি স্বাদের ইফতার পাওয়া যায়। আর তা ক্রেতাদের কাছেও বেশ আগ্রহের। তাছাড়া রাখা হয়েছে প্রয়োনীয় স্বাস্থ্যকর খাবার, ফল ও শাকসবজি।
এইদিকে ইফতারের জমজমাট আয়োজন বসেছে জ্যামাইকা শহরেও। শহরের সাগর রেস্টুরেন্টে, গরোয়া সুইট এন্ড রেস্টুরেন্ট, কিং কবাব, কাবাব হাউজ, প্রিমিয়াম সুইটসহ আরো বেশ কিছু বাঙালি দোকান ঘুরে দেখা গেছে উপচে পড়া ভিড়। দোকানদার ও ক্রেতারা পার করছেন ব্যস্ত সময়। দুপুরের দিকে ভিড় কম থাকলেও বেলা হেলে পড়ার সাথে সাথে বাড়ে ক্রেতার সংখ্যা। আর এসব দোকানেও বাঙালি খাবারের পাশাপাশি আরব ও চায়না খাবার রয়েছে। ক্রেতারা সহজেই কিনতে পারছেন পছন্দের খাবার।
জানতে চাইলে রোকনউদ্দীন নামে এক বাংলাদেশি বলেন, আমি জ্যাকসন হাইটসের বাসিন্দা। এখানে বেশ কিছু দোকান ও ফুটপাতে ইফতারের আয়োজন করা হয়। বেশ ভালো লাগে৷ আমি প্রতিদিন এখান থেকে ইফতার নিয়ে যাই। আর দোকানের কর্মীরাও বেশ আন্তরিক। তারা খুব ভালো করে পরিবেশন করে। এইদিকে মুনতাহা মোস্তফা নামে আরেক বাংলাদেশি বলেন, এখানে আসলে মনেই হয় না আমরা দেশের বাইরে আছি। চারদিকে বাঙালি খাওয়ারের ছড়াছড়ি। আর খাবারের মানও বেশ ভালো। দামও মোটামুটি সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে।
এইদিকে দোকান মালিক রহমান বলেন, জ্যাকসন হাইটসে অনেক বাঙালি বসবাস করে।আমরা তাদের ইফতারের জন্য খাবার প্রস্তুত করি। আমরা আসলে ভাগ্যবান যে আমরা বিদেশের বুকে বাঙালি খাবার পরিবেশন করতে পারেছি। এছাড়া বিগত দুই বছর করোনার কারনে সব বন্ধ ছিলো তাই বেচা-বিক্রিও বন্ধ ছিলো। তখন দোকান কর্মচারীদের সামলাতেও বেশ সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে। তবে এখন সেরকম কোন বাঁধা নেই৷ তাই ব্যবসায়ে আবারও স্বস্তি ফিরেছে।
চলমান নিউইয়র্ক ফেসবুক পেজ লাইক দিন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন