বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

শিরোনাম

বিএনপির মার্কা পেতে এক আসনে কমপক্ষে ৫ নেতা

বৃহস্পতিবার, জুলাই ৩, ২০২৫

প্রিন্ট করুন

সারা দেশের ৩০০ আসনেই বিএনপির মনোনয়ন পেতে ১টি আসনে কমপক্ষে ৫ জন করে নেতা জনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের মধ্যে থানা এবং ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতারাও আছেন। বিএনপির রাজনীতিতে কিছুটা পরিচিত হলেও তাদের সিংহভাগই জাতীয় নির্বাচনে নতুন মুখ।

ঢাকা-৭ (লালবাগ-চকবাজার-হাজারীবাগ) আসনে জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির কোনো হেভিওয়েট প্রার্থী নেই। এই আসন থেকে মনোনয়ন পেতে আগ্রহী প্রয়াত নাসির উদ্দিন পিন্টুর সহধর্মিণী নাসিমা আক্তার কল্পনা, বিএনপির যুববিষয়ক সহ-সম্পাদক মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হামিদুর রহমান হামিদ। এ ছাড়া সাবেক কাউন্সিলর মোশাররফ হোসেন খোকন, মনির চেয়ারম্যান, মহানগর নেতা শহীদুল ইসলাম বাবুল এবং নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টুর ভাই রিয়াজউদ্দিন আহমেদ মনিও মনোনয়নপ্রত্যাশী বলে জানা গেছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে কল্পনা বিএনপির মনোনয়ন পেলেও নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি। এ ছাড়া অন্যরা কেউই এর আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেননি।

গাইবান্ধা-৪ (গোবিন্দগঞ্জ) আসনে এবার বিএনপির মনোনয়ন পেতে আগ্রহী দলের সাবেক এমপি শামীম কায়সার লিংকন, বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও রংপুর বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ফারুক আহম্মেদ, সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফারুক কবীর আহমেদ, পৌর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সানোয়ার হোসেন দিপু, সাংবাদিক গাওসুল আজম বিপু ও আয়কর আইনজীবী ওবায়দুল হক সরকার বাবলু। এখানে শামীম কায়সার লিংকন ছাড়া সবাই নতুন।

রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেতে জনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন বাগমারা উপজেলা আহ্বায়ক ডিএম জিয়াউর রহমান জিয়া, সচিব অধ্যাপক কামাল হোসেন, সাবেক ছাত্রদল নেতা ও আমেরিকা প্রবাসী ড. জাহিদ দেওয়ান শামীম, রাজশাহী জেলা যুবদলের সদস্য সচিব রেজাউল করিম টুটুল, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যবিষয়ক সহ-সম্পাদক ডা. আশফাকুর রহমান শেলী, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সদস্য ব্যারিস্টার সালেকুজ্জামান সাগর। মনোনয়নপ্রত্যাশীরা সবাই নতুন।

চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে মনোনয়ন পেতে আগ্রহী ২০১৮ সালে বিএনপির প্রার্থী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কর্নেল (অব.) মো. আজিম উল্লাহ বাহার। নতুনদের মধ্যে জনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য ডা. খুরশিদ জামিল চৌধুরী, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সাবেক বিচারপতি ফয়সাল মাহমুদ ফয়জী, ২০০৮ সালে নবম সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী ও তার চাচা গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী।

বরিশাল-১ (আগৈলঝাড়া-গৌরনদী) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক সংসদ সদস্য জহির উদ্দীন স্বপন, দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও অ্যাসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ারের (অ্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সোবাহান, দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির বরিশাল বিভাগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান এবং কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ফোরামের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট গাজী কামরুল ইসলাম স্বজল। তাদের মধ্যে জহির উদ্দীন স্বপন ২০১৮ সালে বিএনপির প্রার্থী হয়েছিলেন।

রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনে মনোনয়ন পেতে কাজ করছেন ২০১৮ সালে মনোনয়ন পাওয়া রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ। এ ছাড়া নতুনদের মধ্যে রয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য দেবাশীষ রায় মধু, জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ও জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি আনোয়ার হোসেন উজ্জ্বল, জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও আহ্বায়ক কমিটির সদস্য গোলাম মোস্তফা মামুন, বাঘা উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নুরুজ্জামান মানিক।

বরিশাল-২ (উজিরপুর-বানারীপাড়া) আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন কেন্দ্রীয় নেতা এস শরফুদ্দিন আহম্মেদ সান্টু, কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশবিষয়ক সহসম্পাদক কাজী রওনাকুল ইসলাম টিপু, সদস্য দুলাল হোসেন, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাইদ মাহমুদ জুয়েল, কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতা কর্নেল (অব.) আনোয়ার হোসেন, কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক লায়ন আক্তার সেন্টু এবং জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান। শুধু ঢাকা, গাইবান্ধা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও বরিশাল নয়Ñসারা দেশের ৩০০ আসনেই এমন অবস্থা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনি ট্রেনের হুইসেল বেজে গেছে। আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের ১২ তারিখে এই নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। শিগগিরই নির্বাচনি রোডম্যাপ ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন। এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের অন্যতম বড় দল বিএনপিতে মনোনয়নপ্রত্যাশী নতুন মুখের দৌড়ঝাঁপ বেড়েছে। নিজ আসনে গণসংযোগের পাশাপাশি লবিংয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা।

বিএনপি নেতাকর্মীরা বলছেন, এবার জাতীয় নির্বাচনে ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ করার সম্ভাবনা খুবই কম। ফলে নির্বাচনি মাঠ অনেকটাই ফাঁকা। এ অবস্থায় যে-ই ধানের শীষ মার্কা পাবেন তিনিই জয়ী হবেন। এমনটা ধরে নিয়ে অনেকেই বিএনপির মনোনয়নের জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন। বিশেষ করে যারা কখনোই জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেননি বা অতীতে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য কোনো ধরনের প্রচার কার্যক্রমও চালাননি এমন নেতারাও মনোনয়নের জন্য দলের হাইকমান্ড ও শীর্ষ নেতাদের নেকনজরে আসার চেষ্টা চালাচ্ছেন। চলছে নানামুখী প্রতিযোগিতা। মনোনয়ন না পেলেও মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করার কথা জানিয়েছেন অগণিত মাঠ পর্যায়ের নেতা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজনীতিতে প্রায় সবাই নেতা হতে চান। রাজনীতিবিদদের কাজই হচ্ছে জনসেবা করা। জনসেবা করতে হলে জনপ্রতিনিধি হতে হবে। দলীয়ভাবে জনপ্রতিনিধি হতে হলে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য দলীয় মনোনয়ন জরুরি। বিএনপির মতো বড় দলে ১টি আসনে অনেক মনোনয়নপ্রত্যাশী থাকা স্বাভাবিক। তবে এবার দলীয় মার্কা পাওয়া গেলে জয়ের সম্ভাবনা অনেকটাই নিশ্চিত। এ জন্য এবার বিএনপিতে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সংখ্যা বেশি হবে। মাঠ পর্যায়ে সেটাই দেখা যাচ্ছে। তাদের মধ্য থেকে ১ জন মনোনয়ন পাবেন। নিশ্চয়ই বিএনপি তাদের ক্রাইটেরিয়া অনুযায়ী দক্ষ ও যোগ্য নেতাকে মনোনয়ন দেবে, যাতে সেই নেতা নির্বাচিত হয়ে সংসদে কথা বলতে পারেন এবং এলাকার উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারেন।

দলের শীর্ষ নেতারা বলছেন, বিএনপি দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল। এখানে হাজার হাজার নেতা রয়েছেন। অনেক নেতাই চান দলীয় মার্কা নিয়ে নির্বাচিত হতে। এবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার জন্য একটি আসনে একাধিক নেতা জনসংযোগ চালাচ্ছেন। এবার বিএনপির প্রার্থীদের জয়ের সম্ভাবনা বেশি হওয়ায় মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সংখ্যাও বেশি। এদের মধ্য থেকে পরীক্ষিত নেতাকে বাছাই করে মনোনয়ন দেওয়া হবে। সেই প্রক্রিয়া ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। একটি আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে কোনো নেতা এলাকায় জনপ্রিয়, ত্যাগী-নির্যাতিত, গত ১৫ বছর আন্দোলন-সংগ্রামে কী ভূমিকা রেখেছেন- তা জরিপ করা হচ্ছে। এর ভিত্তিতে মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হবে।

এ বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন খান মোহন সময়ের আলোকে বলেন, একটা রাজনৈতিক দলে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা থাকবেই, নির্বাচনে প্রার্থী দেওয়ার ক্ষেত্রেও তা থাকবে, এটা স্বাভাবিক। আগেও এই প্রতিযোগিতা ছিল, তবে আগের প্রতিযোগিতা সুষ্ঠু ছিল। এখানকার প্রতিযোগিতা হচ্ছে টাকার প্রতিযোগিতা।

তিনি বলেন, একটি আসনে বিএনপির এত প্রার্থী বিষয়টি খারাপ নয়। প্রতিযোগিতা নেতৃত্বের বিকাশ ঘটায়। তাই বলে সবার সংসদ সদস্য হওয়ার জন্য উদগ্র হয়ে মাঠে নামাটাও ঠিক নয়। সংসদ সদস্যরা আইন প্রণয়ন করবেন, সেই বিষয়ে জ্ঞান থাকতে হবে। যেনতেন কাউকে সংসদ সদস্য বানালে হবে না।

তিনি বলেন, এবার বিএনপির জন্য মাঠ খালি, যেই মনোনয়ন পাবেন তার জন্য ‘শিওর শট’। এ জন্য হয়তো অনেকে মনোনয়ন পেতে চেষ্টা করছেন। প্রার্থীরা এলাকায় গণসংযোগ করছেন- এর সুবিধা হচ্ছে নেতাকর্মীরা চাঙা হচ্ছে। মনোনয়ন না পেলেও প্রার্থী হতে আগ্রহীরা যেন দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার পক্ষে কাজ করেন। তা হলে দল উপকৃত হবে।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সময়ের আলোকে বলেন, অন্য দলের অনেক নেতাও বিএনপির প্রতীকে নির্বাচন করেছেন, এখনও করতে চান। কারণ বিএনপি দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দল। সেখানে এক আসনে দলের একাধিক নেতা মনোনয়ন চাইবেন-এটা তো স্বাভাবিক। ত্যাগী, যোগ্য ও জনপ্রিয় নেতাদের মূল্যায়ন করবে বিএনপি।

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন সময়ের আলোকে বলেন, বিএনপিতে সবসময়ই মনোনয়নপ্রত্যাশী প্রার্থী বেশি থাকে। গত ২০১৮ সালের নির্বাচনেও ১:৮ প্রার্থী ছিল। এবার মনোনয়নপ্রত্যাশী বেশি হলেও প্রার্থী চূড়ান্ত করতে বিএনপির কোনো সমস্যা হবে না।

কারণ হিসেবে তিনি বলেন, কয়েকটি ক্রাইটেরিয়ার ভিত্তিতে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে যারা ত্যাগী, দলের আদর্শে বিশ্বাসী, গত ১৫ বছরে আন্দোলনে সক্রিয় ছিল, জনপ্রিয় এবং এলাকায় জনগণ পছন্দ করে, এসব বিষয় জরিপ করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। জরিপে তরুণ নেতারা এগিয়ে থাকলে তারা অগ্রাধিকার পাবেন।

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন