বৈরি পরিবেশে সাহসী সাংবাদিকতা

মনজুরুল হক »

স্বাভাবিক সময়ের পাশাপাশি প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও বৈরি পরিবেশে সাহসী কলমযোদ্ধা বা সাংবাদিকের উদহারণ কোন অংশে কম নয়। যেমন যুদ্ধক্ষেত্রে সাংবাদিকরা জীবনের ঝুকি নিয়ে তথ্যে সংগ্রহ করে পৌঁছে দেন পাঠকের কাছে। নেশা ও দায়িত্ববোধ থেকে সাংবাদিকরা ঝুঁকি নিয়ে থাকেন। সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে নেপথ্যে একজন সাংবাদিকের কষ্টের কথা পাঠকদের বিরাট অংশ তেমন একটা অনুভব করেন না। এমনকি বিষয়টি অনেক সংবাদ পত্রের মালিকরাও দেখেও না দেখার ভান করে থাকেন, অথচ সংবাদ তৈরি করার আগে যথাযথ তথ্যে উপাত্ত সংগ্রহ করার নিদারুন কষ্ট ও ঝুঁকি লুকিয়ে থাকে। তথ্যে উপাত্ত যদি সঠিক না হয় তাহলে পাঠকের কাছে সাংবাদিকতা প্রশ্নবিদ্ধ হয় অনায়াসে। সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিড়ম্বনায় পড়তে হয় সাংবাদিকদের। চাপ আসে সংশ্লিষ্ঠ মহল থেকে। আর যদি সঠিক তথ্য সংবাদে উঠে না আসে তাহলে যিনি সংবাদ লিখেছেন শুধু তার উপর দোষ পড়েনা, তখন গোটা সাংবাদিক সমাজের উপর আঙ্গুল তুলে কথা বলেন পাঠক ও সংশ্লিষ্ঠ মহল। তাই সব সময়ে সাংবাদিকতা করতে হলে সঠিক তথ্য যাচাই বাছাই করে সংবাদ পরিবেশন করা একজন সাংবাদিকের নৈতিক দায়িত্ব। তথ্য যাচাই বাছাই করার প্রক্রিয়াও এখন অনেকটা সহজতর । কারণ সবার হাতে এখন মুঠোফোন, যে কোন সময়ে গুগল করে যে কোন তথ্য বের করা যায় অতি সহজে।

লোভ স্বার্থ এবং দলীয় লেজুড়বৃত্তির কাছে কতিপয় সাংবাদিক নিজেদের বিলিয়ে দিয়েছেন এই রকম সংখ্যা কম নয়। আবার বিরাট একটি অংশ লোভের কাছে কোন প্রকার আপোষ করেন না। হলুদ সাংবাদিকতার কারণে মানুষ আজ প্রতিনিয়ত বিড়ম্বনার শিকার। অপর দিকে তথ্য নির্ভর সাংবাদিকতার কারনে পৃথিবীর মানুষ আজ অনেকাংশে সচেতন ও উপকৃত হ”েছন। সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বহু সাংবাদিক। বিপর্যয়ের মধ্যে সঠিক সংবাদ প্রকাশ করে জাতিকে দিক নির্দেশনা দেয়ার দৃষ্টান্ত অহরহ। করোনা মহামারির শুরুতে সর্তকতা নিয়ে গণমাধ্যমে যে ভাবে ফলাও করে সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে তা নিশ্চয় সবার জানা। এই তথ্য যদি সঠিক সময়ে প্রকাশিত না হতো তাহলে গোটা বিশে^ হয়তো যততত্র ভাবে লাশের ¯‘প পড়ে থাকতো ।

বিশে^র সব চাইতে ক্ষমতাধর রাষ্ট্র প্রধানের মিথ্যা বক্তব্যের সরাসরি সম্প্রচার কি ভাবে বয়কট করতে হয় তাও শিখিয়ে দিয়েছে গনমাধ্যম। মানুষের অধিকার ও গণতন্ত্র রক্ষায় গনমাধ্যম সাহসী ভ‚মিকায় সব সময় ছিল অবিচল। যার কারনে প্রভাবশালীদের দ্বারা খুন,গুম, মামলা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বহু সংবাদকর্মী। বিভিন্ন পেশায় বা ব্যবসায় যেমন কিছু অসৎ লোক আছে তেমনি কিছু কালো টাকার মালিকও এখন গনমাধ্যম ব্যবসা খুলে বসেছেন। এ মাধ্যমকে তারা হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করছেন। মোটা অংকের বেতন নির্ধারন করে সাংবাদিকদের চাকরি দি”েছন। সাংবাদিকরা বাধ্য হয়ে মালিকের নির্দেশে সংবাদ লিখেন বা পরিবেশন করেন। পাঠক বা দর্শক বুঝতে পারে এসব গনমাধ্যমের উদ্দেশ্যে কি? বোদ্ধা পাঠকরা সহজেই এসব গনমাধ্যমকে বয়কট করেন। আবার ফেসবুকে নাম সর্বস্ব গনমাধ্যমের কথা বলে পাঠক বা দর্শকদের ধোকা দেওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করেন নামধারী কতিপয় সাংবাদিক।

ডিজিটাল বিশ^ায়নের যুগে সৎ ও তথ্য বহুল সাংবাদিকতা না করলে পাঠকরা সাংবাদিকতার উদ্দেশ্যে নিয়ে প্রশ্ন করবে এটাই স্বাভাবিক। তাই পথ প্রদর্শক, অনুসন্ধানী ও সাহসী সাংবাদিকতার সুনাম সাংবাদিকদেরই রক্ষা করতে হবে। এর কোন বিকল্প নেই। বৈরি পরিবেশে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হবে এটাই সবাইকে মনে রাখতে হবে।

প্রবাসে কমিউনিটি সাংবাদিকতার ধরনও একই। তবে এখানে দেশীয় কৃষ্টি, কালচার, সভ্যতা, সাহিত্য, সাংস্কৃতি চর্চা এবং ভাতৃত্ব বন্ধনের উপর রিপোর্ট গুলোকে গুরুত্ব দেয়া হয় বেশী। তবে এ বন্ধনকে আরো সুদৃঢ় করতে সাংবাদিক ও সংবাদপত্র মালিকদের সমন্বয়ে গোল টেবিল বৈঠক, সেমিনার করে একটি সুন্দর ও আদর্শ কমিউনিটি বিনির্মানে করনীয় শীর্ষক আলোচনা করা যেতে পারে। একই সাথে সাংবাদিকতা করার ক্ষেত্রে ঝুঁকির বিষয়টিও কম নয়। কমিউনিটিতে হরেক রকমের অসংগতি, অনিয়ম, দূর্নীতি ও জালিয়াতির খবর যখনি প্রকাশ করা হয় তখনি চাপ আসে সংশ্লিষ্ট মহল থেকে। এ সব ঝামেলা বা মামলা, হামলার ঝুঁকি উপেক্ষা করে বৈরি পরিবেশে সাংবাদিকরা তাদের দায়িত্ব পালন করে যা”েছন, নি:সন্দেহে বিষয়টি প্রসংশনীয়।

লেখক
মনজুরুল হক
চীফ রির্পোটার, প্রথম আলো নর্থ আমেরিকা
সাধারণ সম্পাদক, আমেরিকা বাংলাদেশ প্রেসক্লাব