সম্পাদকীয়
আজকের বিশ্ব যুদ্ধের আগুনে দগ্ধ। কোথাও রকেট, কোথাও মিসাইল, কোথাও আবার বোমা ও গুলির শব্দে কেঁপে উঠছে জনপদ। একেকটি রাষ্ট্র প্রতিনিয়ত বাড়িয়ে চলেছে নিজেদের সামরিক ব্যয়। উন্নত প্রযুক্তিতে তৈরি করা হচ্ছে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন, পারমাণবিক অস্ত্র ও সুপারসনিক যুদ্ধবিমান। কিন্তু প্রশ্ন হলো এই অগ্রগতি কি মানবতার সেবায়, না ধ্বংসের পথে সভ্যতাকে ঠেলে দেওয়ার জন্য?
একদিকে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে সমরাস্ত্র তৈরিতে, অন্যদিকে একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে আমরা এখনো পরাজিত একটুখানি ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার কাছে। কোভিড-১৯ আমাদের শিখিয়েছে আধুনিক অস্ত্র দিয়ে ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ জয় সম্ভব নয়। মহামারির সময় বিশ্বের অসংখ্য মানুষ চিকিৎসার অভাবে প্রাণ হারিয়েছে, অথচ তখনও মিলিটারির বাজেট ছিল অক্ষুণ্ণ।
এই বৈপরীত্য শুধু দুঃখজনক নয়, ভয়ংকরও। একদিকে যুদ্ধের জন্য মজুত হচ্ছে বারুদের স্তূপ, অন্যদিকে টিকাদান কর্মসূচির জন্য অর্থের অভাব। হাসপাতালগুলোতে জায়গা নেই, ডাক্তার-নার্সদের নিরাপত্তা নেই, গবেষণাগারে পর্যাপ্ত অর্থ নেই। এই যদি হয় বাস্তবতা, তবে সভ্যতার অর্জন কোথায়?
‘বাঁচার বিজ্ঞান’ বলতে বোঝায় স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, কৃষি, পরিবেশ ও মানবকল্যাণে পরিচালিত গবেষণা। এগুলিই মানুষকে রক্ষা করতে পারে মহামারি, দুর্ভিক্ষ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা জলবায়ু বিপর্যয় থেকে। অথচ এই বিজ্ঞানই আজ সবচেয়ে বেশি অবহেলিত। উন্নত দেশগুলো যেখানে যুদ্ধের নামে প্রযুক্তিকে ব্যবহার করছে ধ্বংসে, সেখানে উন্নয়নশীল দেশগুলো অস্ত্র প্রতিযোগিতায় নামতে বাধ্য হচ্ছে কূটনৈতিক চাপে।
এটা শুধু অর্থনৈতিক ভারসাম্যের সংকট নয়, এটি নৈতিকতার বিপর্যয়ও। রাষ্ট্রের কর্তাব্যক্তিরা যদি বিশ্বাস করেন যে অস্ত্রই শান্তি আনে, তবে সেটিই সভ্যতার সবচেয়ে বড় ভুল বোঝাবুঝি। আসলে, শান্তি আসে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, গবেষণা ও মানবিক উন্নয়ন দিয়ে যেখানে প্রতিটি মানুষের জীবন মূল্যবান, প্রতিটি প্রাণ রক্ষা করাই বড় বিজয়।
বিজ্ঞানকে যদি ধ্বংসের নয়, বাঁচার অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করি, তবে তবেই আমরা সার্থকভাবে সভ্য বলে নিজেদের দাবি করতে পারব। না হলে আমাদের এই উন্নত প্রযুক্তি, মেগা সিটি, ডিজিটাল সংস্কৃতি—সবই হবে পলকা এক আস্তরণ, যার নিচে লুকিয়ে থাকবে মৃত্যুর ছায়া।
তাই এখনই সময় বিশ্ববাসীর ঘুম ভাঙানোর। যুদ্ধ নয়, বিনিয়োগ হোক গবেষণাগারে। বোমা নয়, পুষ্টি গবেষণায় বরাদ্দ হোক বাজেট। ক্ষেপণাস্ত্র নয়, টিকাদান কর্মসূচিতে বাড়ুক মনোযোগ। শান্তি, স্বাস্থ্যের অধিকার ও মানবতার স্বার্থেই আজকের শ্লোগান হওয়া উচিত “বোমা নয়, বাঁচার বিজ্ঞানেই হোক বিনিয়োগ।”
চলমান নিউইয়র্ক ফেসবুক পেজ লাইক দিন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন