আবু ধাবি, আরব আমিরাত: ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় চলমান টি-২০ বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভে টানা দ্বিতীয় হারের স্বাদ পেল বাংলাদেশ। বুধবার (২৭ অক্টোবর) সুপার টুয়েলভে গ্রুপ-১এর ম্যাচে ইংল্যান্ডের কাছে আট উইকেটে হেরেছে বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচে শ্রীলংকার কাছে পাঁচ উইকেটে হেরেছিল মাহমুদুল্লাহর দল। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচটি স্মরনীয় করে রাখতে পারল না বাংলাদেশ।
ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করে ২০ ওভারে নয় উইকেটে ১২৪ রান করে বাংলাদেশ। জবাবে ৩৫ বল বাকী রেখেই সহজ জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় ইংল্যান্ড। নিজেদের প্রথম ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ছয় উইকেটে হারিয়েছিল ইংলিশরা। তাই দুই খেলা শেষে দুই জয়ে চার পয়েন্ট ইংলিশদের। সমানসংখ্যক ম্যাচে দুই হারে এখনো পয়েন্টের দেখা পায়নি বাংলাদেশ।
আরব আমিরাতের আবু ধাবির জায়েদ স্টেডিয়ামের ম্যাচে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং করতে নামে বাংলাদেশ। একটি পরিবর্তন নিয়ে একাদশ সাজায় টাইগাররা। ইনজুরিতে বিশ্বকাপ শেষ হয়ে যাওয়া মোহাম্মদ সাইফুদ্দিনের বদলে সুযোগ পান পেসার শরিফুল ইসলাম। ব্যাট হাতে ইনিংসের প্রথম ওভারের ইংল্যান্ডের স্পিনার মঈন আলির শেষ দুই বলে বাউন্ডারি আদায় করে নেন ওপেনার লিটন দাস। তাই শুরুটা মারমুখী মেজাজেই করেছিলেন লিটন। তবে তৃতীয় ওভারে লিটনকে প্যাভিলিয়নের পথ দেখান মঈন। সুইপ শট স্কয়ার লেগে লিয়াম লিভিংটকে ক্যাচ দেন আট বলে নয় রান করা লিটন। একই ওভারের দ্বিতীয় বলে লিটনের আউটের পরও, পরের বলে বাউন্ডারি আদায় করে নিতে গিয়ে মিড-অনে ক্যাচ দেন আরেক ওপেনার মোহাম্মদ নাইম। সাত বলে পাঁচ রান করেন তিনি। এতে ১৪ রানেই দুই উইকেট হারায় বাংলাদেশ। দুই ওপেনারের বিদায়ে ক্রিজে নতুন দুই ব্যাটসম্যান সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিম দলকে বিপদমুক্ত করেন। তবে জুটিটা বড় করতে পারেননি তারা। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে পেসার ক্রিস ওকসের বলে লেগ সাইডে খেলতে গিয়ে আকাশে বল তুলে দেন সাকিব। শর্ট ফাইন লেগে দুর্দান্ত ক্যাচ নেন আদিল রশিদ। ফলে সাত বলে চার রান করে প্যাভিলিয়নে ফেরেন সাকিব।
দলীয় ২৬ রানে তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে সাকিবকে হারানোয় মহাচাপে পড়ে বাংলাদেশ। এ অবস্থায় বড় জুটির প্রত্যাশায় ছিলো টাইগাররা। সেই প্রত্যাশা পূরণের চেষ্টায় ক্রিজে মুশফিকের সাথী হন অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ।
উইকেট ধরে খেলে রানের গতি বাড়ান মুশফিক-রিয়াদ। তাই পাওয়ার প্লেতে যেখানে রান ছিল তিন উইকেটে ২৭ রান। দশ ওভার শেষে রান রেট গিয়ে দাঁড়ায় ছয়ে। অর্থাৎ, দশ ওভার শেষে তিন উইকেটে ৬০ রান পায় বাংলাদেশ।
মুশফিক-রিয়াদ উইকেটে সেট হয়ে যাওয়ায়, তাদের হাত ধরেই আরো ভালো অবস্থায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখছিল টাইগাররা। কিন্তু মুশফিক-রিয়াদের পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ান অকেশনাল স্পিনার লিভিংস্টোন। ১১তম ওভারে প্রথম বারের মত আক্রমণে এসে মুশফিককে লেগ বিফোর ফাঁদে ফেলেন তিনি। রিভার্স সুইপ মারতে গিয়ে বিপদে পড়েন মুশি। রিভিউ নিয়েও নিজের উইকেট বাঁচাতে পারেননি মুশফিক। তিনটি চারে ৩০ বলে ২৯ রান করে ফেরেন মুশফিক। চতুর্থ উইকেটে অধিনায়কের সাথে ৩২ বলে ৩৭ রান যোগ করেন তিনি। এ অবস্থায় দলের স্কোর চার উইকেটে ৬৩ রান।
মুশফিকের আউটের পর শতরানের পা দেয়ার আগে আরো গুরুতপূর্ণ তিন উইকেট হারায় বাংলাদেশ। আফিফ হোসেন পাঁচ ও রিয়াদ ১৯ রান করে লিভিংস্টোনের দ্বিতীয় শিকার হন। ২৪ বল খেলে একটি চার মারেন রিয়াদ। দুইটি চারে ইনিংস শুরু করা মাহেদি হাসান ১১ রানের বেশি করতে পারেননি।
মাহেদির আউটের পর বাংলাদেশের ইনিংসে ১৭ বল বাকী ছিল। তখন স্বীকৃত ব্যাটসম্যান হিসেবে ছিলেন উইকেট রক্ষক নুরুল হাসান। নুরুলের ব্যাটে চার-ছক্কার আশায় ছিল দল। কিন্তু পারেন নি নুরুল। পেরেছেন আরেক প্রান্তে থাকা নাসুম। ১৯তম ওভারে মঈনকে দুইটি ছক্কা ও একটি চার মারেন নাসুম। ওই ওভার থেকে ১৭ রান পায় বাংলাদেশ। আর শেষ ওভারের শেষ দুই বলে নুরুল ও মুস্তাফিজুর রহমানকে শিকার করে বাংলাদেশ স্কোর ১২৪ রানের বেশি যেতে দেননি ইংল্যান্ডের বাঁ-হাতি পেসার টাইমাল মিলস। ১৮ বলে ১৬ রান করেন নুরুল। নয় বলে ১৯ রান তুলে অপরাজিত থাকেন নাসুম। ইংল্যান্ডের মিলস তিনটি, মঈন-লিভিংস্টোন দুইটি করে উইকেট নেন।
জয়ের জন্য ১২৫ রানের টার্গেটে সাকিবের করা প্রথম ওভারের প্রথম ডেলিভারিতে চার মারেন ইংল্যান্ডের ওপেনার জেসন রয়। আর দ্বিতীয় ওভারের শেষ দুই বলে মুস্তাফিজের বলে চার আদায় করেন রয়। তৃতীয় ওভারে সাকিবকে ছক্কা ও চতুর্থ ওভারে শরিফুলকে চার মেরে দ্রুত রান তুলতে থাকেন আরেক ওপেনার জশ বাটলার। এতে চার ওভার শেষে ৩৭ রান পায় ইংল্যান্ড। প্রথম চার ওভারে তিন বোলার ব্যবহারের পর পঞ্চম ওভারে স্পিনার নাসুমকে আক্রমণে আনেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ। বল হাতে নিয়ে পঞ্চম ডেলিভারিতে ব্রেক-থ্রু এনে দেন নাসুম। এক্সট্রা কভারে ১৮ বলে ১৮ রান করা বাটলারের ক্যাচ নেন নাইম।
পাওয়ার প্লেতে বাটলারকে হারালেও ৫০ রান পায় ইংল্যান্ড। পাওয়ার প্লে শেষ হবার পরও মারমুখী ছিলেন রয়। এতে ১২তম ওভারেই শতরান স্পর্শ করে ইংল্যান্ড। নাসুমের করা ওই ওভারের চতুর্থ বলে ছক্কা মেরে দলের রান তিন অংকে পৌঁছে দেয়ার পাশাপাশি ৩৩ বলে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের সপ্তম হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন রয়।
১৩তম ওভারের দ্বিতীয় বলে শরিফুলকে ছক্কা মারার পর পঞ্চম বলে বিদায় নেন রয়। ৩৮ বলে পাঁচটি চার ও তিনটি ছক্কায় নিজের ৬১ রানের ইনিংসটি সাজান তিনি। দ্বিতীয় উইকেটে মালানের সাথে ৪৮ বলে ৭৩ রান তুলেন রয়। সেখানে তার অবদান ছিলো ২৭ বলে ৪৪। আর মালান করেছিলেন ২১ বলে ২২।
রয় যখন ফেরেন, তখন ম্যাচ জিততে ১৩ রান দরকার ছিল ইংল্যান্ডের। দলের প্রয়োজন মিটিয়েছেন মালান ও জনি বেয়ারস্টো। ১৫তম ওভারের প্রথম বলে শরিফুলকে চার মেরে জয় নিশ্চিত করেন তারা। মালান তিনটি চারে ২৫ বলে অপরাজিত ২৮ ও বেয়ারস্টো আট রানে অপরাজিত ছিলেন। বাংলাদেশের শরিফুল-নাসুম একটি করে উইকেট নেন। ম্যাচ সেরা হন রয়।
আগামী ২৯ অক্টোবর গ্রুপ পর্বে নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে খেলবে বাংলাদেশ। আর ৩০ অক্টোবর নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হবে ইংল্যান্ড।
চলমান নিউইয়র্ক ফেসবুক পেজ লাইক দিন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন