সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

ভবিষ্যতে পুঁজিবাজারে আসার পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছে ‘নগদ’

মঙ্গলবার, জুলাই ২৭, ২০২১

প্রিন্ট করুন
নিউইয়র্কে হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালে নগদের প্রদর্শনী 1

মোহাম্মদ আলী: বাংলাদেশে ব্যবসায় করার জন্য যে রাস্তাগুলো খোলা আছে, সেগুলোকে আন্তর্জাতিকভাবে প্রমোট করতে চান বলে জানিয়েছেন দেশের অন্যতম শীর্ষ স্থানীয় মোবাইল ফোন ভিত্তিক ডিজিটাল লেনদেন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ‘নগদ’ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তানবীর আহমেদ মিশুক।

তিনি বলেন, ‘ফেসবুক, গুগল, অ্যামাজনের মত আন্তর্জাতিক জায়ান্ট কোম্পানিগুলো নগদ এর প্রতি আগ্রহী। নগদ চায়, বাংলাদেশকে বিশ্বের মানচিত্রে তুলে ধরতে।’ সম্প্রতি একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল আয়োজিত ‘বিজনেস টক’ শিরোনামের অনুষ্ঠানে তানবীর আহমেদ মিশুক এসব কথা বলেন।

বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) কর্তৃক আমেরিকার চার সিটিতে সোমবার (২৬ জুলাই) থেকে আয়োজিত ‘দ্যা রাইজ অব বেঙ্গল টাইগার: পটেনশিয়ালস অফ বাংলাদেশ ক্যাপিট্যাল মার্কেটস’ শিরোনামের ‘রোড শো’র কো-স্পন্সর হয়েছে নগদ।

‘নগদ’ একটি আন্তর্জাতিক পার্টনার খুঁজছে। যার মাধ্যমে এটি উন্নত প্রযুক্তি ও ডিজিটাল ব্যাংকের প্রচলন করবে। এ সম্পর্কে তানবীর আহমেদ মিশুক বলেন, ‘নগদ এর ৫১ শতাংশ অংশীদার বাংলাদেশ সরকার, ৪৯ শতাংশ বেসরকারি। বর্তমানে পাঁচ কোটি গ্রাহক, দিনে সাড়ে ৪০০ কোটি লেনদেন। ডিজিটাল বাংলাদেশের সাথে তাল মিলিয়ে যদি নগদ এগিয়ে যেতে চায়, তাহলে পরবর্তী পর্যায় হচ্ছে ডিজিটাল ব্যাংক। ডিজিটাল ব্যাংক করতে হলে নগদ-কে বিদেশী টেকনোলজির সহযোগিতা নিতে হবেই। লোকাল প্রযুক্তি দিয়ে ডিজিটাল ব্যাংক করতে গেলে অনেক সময় লেগে যাবে। তাই আমরা বাইরের এমন একজন পার্টনার চাচ্ছি, যারা আমাদেরকে পরবর্তী প্রযুক্তিতে নিয়ে যেতে পারবে।’

‘নগদ’ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তানবীর আহমেদ মিশুক।

বর্তমানে ‘নগদ’ টেকনোলজি নিয়ে কাজ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দেশে ৬৪টি ব্যাংক, ১৭টি এমএফএস (মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা), কিছু এজেন্ট ব্যাংকিং আছে। সবাই মিলে এখনো আমরা ৫০ শতাংশ মানুষকে ফিন্যান্সিয়াল সেবার আওতায় আনতে পারিনি। এর প্রধান কারণ- ব্যাংক কখনো চিন্তা করে না, একজন কৃষক, একজন রিক্সাওয়ালাকে প্রমোট করবে। ১৭টি এমএফএসের মধ্যে ব্যবসায় করছিল মূলত একটি। মনোপলির মত ব্যবসায় করছিল তারা। তাদের যে কস্ট অফ ট্রানজেকশন ছিল, সেটা কৃষকের জন্য ফিজিবল ছিল না। নগদ এ পরিবর্তনগুলো এনেছে। এ জন্য দুই বছরের মধ্যে পাঁচ কোটি গ্রাহক চলে এসেছে নগদের। বিশ্ব ব্যাংকের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৫২ শতাংশ ইনফরমালিকরণী। আমিও এটার সাথে একমত। কারওয়ান বাজারের মুরগী ব্যবসায়ী, সবজী ব্যবসায়ী তাদেরও কিন্তু দিনে এক থেকে দেড় লাখ টাকা লেনদেন করতে হচ্ছে। সেটা কিন্তু তাদেরকে ব্যাংকেও আনলোড করা যাচ্ছে না। এমএফএসের লিমিটেও তাকে পারমিট করছে না। সুতরাং ৫২ শতাংশ টাকা কিন্তু আছে বালিশের নিচে। বালিশের নিচের টাকাগুলোকেও যদি ফরমাল রুটে আনতে পারি, আমাদের অর্থনীতি কোথায় যাবে, চিন্তুা করেন। আমাদের একটাই উপায় আছে, সবচেয়ে কম খরছে কাস্টমারদেরকে লেনদেন করতে দেয়া। এটার জন্য একটাই অপশন, ডিজিটাল ব্যাংকিং। ভারতসহ সারা বিশ্ব এটাতে মুভ করছে। আমরা গত এক বছর ধরে ডিজিটাল ব্যাংকিং নিয়ে কাজ করছি। এখন আমরা টেকনোলজি নিয়ে কাজ করছি।’

‘নগদ’ ৫০০ কোটি টাকার জিরো কুপন বন্ড ছাড়ার জন্য বিএসইসির কাছে আবেদন করেছে। এ সম্পর্কে তানবীর আহমেদ মিশুক বলেন, ‘আমরা যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছি, বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে সেভাবে যদি টেকনোলজির উন্নতি করতে না পারি, তাহলে কিন্তু আমরা পিছিয়ে যাব। যেহেতু ডাক বিভাগ আমাদের পার্টনার, ডাক বিভাগ ও আমরা মিলে পরিবর্তী পর্যায়ে যেতে হলে আমাদের বিনিয়োগ করার চেয়ে মার্কেটে যদি জিরো কুপন বন্ড ছাড়ি, তা কাস্টমারের জন্য বেনিফিট হবে। কারণ সরকার এতে ‘কর’ ফ্রি করে দিয়েছে। এ ফান্ডটা দিয়ে আসলে আমরা বিশ্বের সেরা টেকনোলজি বাংলাদেশে ইমপ্লিমেন্ট করতে পারব। যখন আমরা বন্ডটা বাজারে ছাড়ব, ছাড়ার পর ফান্ডটা যখন আসবে, দুই বছর নগদ’কে বিশ্বের নম্বর ওয়ান টু ডিজিটাল ব্যাংকের সাথে কমপেয়ার করতে পারবেন।’

পুঁজিবাজারে অন্তর্ভুক্ত করার ইচ্ছা আছে কিনা? এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা আসলে পুরোপুরি নির্ভর করছে, ডাক ও টেলিযোগ মন্ত্রণালয় ও ডাক বিভাগের উপর। কারণ তারা মেজরিটি শেয়ার হোল্ডার। তারা যদি সিদ্ধান্ত নেয়, এটাকে পুঁজিবাজারে আনবে, অবশ্যই আমরাও একমত। নগদ-কে পুঁজিবাজারে নিয়ে আসব।’

এ সম্পর্কে তানবীর আহমেদ আরো বলেন, ‘পুঁজিবাজারে ভাল কোম্পানি কিন্তু বেশি নেই। টেলিকম সেক্টরের কোম্পানিগুলো সবাই লাভে আছে। তারা কিন্তু পুঁজিবাজারে আসছে না। ভাল ভাল কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে আসা উচিত। আমি মনে করি, এমএফএসগুলোও পুঁজিবাজারে আসা উচিত। তাহলে পুঁজিবাজারটা অনেক চাঙ্গা হবে। কারণ, ভাল কোম্পানি যত আসবে, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতে মানুষের আগ্রহ তত বাড়বে। আমরা ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব, মহাপরিচালক সবার সাথে কথা বলছি। তবে এটা এ বছর নয়, আমরা হয়তো এ বছর বন্ড দিয়ে নেক্সট স্টেপে যাব। ডিজিটাল ব্যাংক যদি আমরা করতে পারি, তারপর হয়তে ডিজিটাল ব্যাংক নিয়ে আমরা পুঁজিবাজারে আসব। বলতে পারেন, ভবিষ্যতে পুঁজিবাজারে আসার পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছে ‘নগদ’।

‘নগদ’ তার নিজের ইনোভেশন নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘হাজারে ২০ টাকা ক্যাশ আউট চার্জ নিয়ে মনোপলি করেছিল একটা এমএফএস। এরপর আরো ৩০টি এমএফএস লাইসেন্স নিয়েছিল, এখন ১৭টি আছে। কেউ সাকসেসফুল হতে পারেনি অথবা কেউ সাকসেসফুল হতে দেয় নি, এতে পাওয়ারপুল ছিল। বাট নগদ কিন্তু মার্কেটে এসে দুই বছরে ওই  এমএফএসের ৪০ শতাংশ মার্কেট দখল করেছে। বাংলাদেশে যে জিনিসগুলো মানুষ কখনো দেখেও নি, নগদ তার ইনোভেশন দিয়ে সে জিনিসগুলো নিয়ে এসেছে। এখন নগদ’কে কপি করছে সব এমএফএস। এমনকি ব্যাংকও নগদের টেকনোলজি কপি করছে। নগদ ২০১৯ সালে এমন একটি টেকনোলজি নিয়ে এসেছে, যার মাধ্যমে নগদ এক মিনিটে একাউন্ট খুলে দিচ্ছে। প্রথমে এটা নিয়ে অনেকে সমালোচনা করেছে। বর্তমান সব এমএফএস ও ব্যাংক এ টেকনোলজি ফলো করছে। এ টেকনোলজির জন্য নগদ এগারোটি পুরস্কার পেয়েছে। ইনোভেশনই নগদের সাকসেসের মূল কারণ।’

নগদ’ এর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে তানবীর আহমেদ বলেন, ‘নগদ’ আসার আগে মাত্র ৩৩ শতাংশ মানুষ আর্থিক অন্তর্ভুক্তির মধ্যে ছিল। নগদ’ আসার পর একটা বড় পরিবর্তন হয়েছে। সরকারি ভাতা পেত এমন আড়াই কোটি গ্রাহককে আমরা আর্থিক অন্তর্ভুক্তি করেছি। বিগ লেবেলে ৫২ শতাংশ মানুষ, যারা বালিশের নিচে টাকা রাখে, তাদেরকে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি করতে হলে এমএফসির মাধ্যমে হবে না। ব্যাংক দিয়েও হবে না। তাদের জন্য দরকার ডিজিটাল ব্যাংক। আমরা যদি তাদের টাকাটা আর্থিক অন্তর্ভুক্তি করতে পারি, তাহলে রেমিট্যান্সের আশায় বসে থাকতে হবে না। আমাদের লোকাল ইকোমি দিয়ে বাংলাদেশ স্বচ্ছলভাবে চলতে পারবে এবং আরো এগিয়ে যেতে পারবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘একজন মুদি দোকানদার। সে ১০০ মানুষকে সার্ভিস দিচ্ছে। সে কিন্তু পুরোটা ক্যাশ করছে। তার টাকাটা কিন্তু ইকোনোমির ভিতরে নেই। এ ছোট ছোট ব্যবসায়ী, এসএমই, মাইক্রো এসএসই ৫২ শতাংশ। এদের লেনদেন করতে এমএফএসের কাছে আসতে পারে না লিমিটের কারণে। ডিজিটাল ব্যাংক হয়ে গেলে লিমিটের সমস্যার সমাধান হবে। ৫২ শতাংশ মানুষের এমাউন্টটা ছোট। তাদের হচ্ছে হাজারে টাকা। তাদের টাকা রাখার জন্য ব্যাংক কিন্তু নিরোৎসাহিত করে। ব্যাংক চায় কোটি কোটি লাখ লাখ টাকা। এ জন্য তাদেরকে ব্যাংক দশ পাতার ফর্ম দিয়ে বলে ফিলাপ কর, এ কমপ্লায়েন্স, ওই কমপ্লায়েন্স। যে ২০ হাজার টাকা জমা রাখবে, তাকে যদি বিশ পাতার ফর্ম দেই, সে কিন্ত ব্যাংকে একাউন্ট খুলবে না। ব্যাংকও ডিসকারেজ করছে, আর এমএফসির অপশনই নেই। সুতরাং তাদেরকে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি করাই নগদের প্রধান উদ্দেশ্যে, ডিজিটাল ব্যাংক দিয়ে।’

তানবীর আহমেদ মিশুক বলেন, ‘দেশের ৬৪টি ব্যাংকের মধ্যে মেজরিটির রেভিনিউ কিন্তু করপোরেটের দিকে। একটি মাত্র ব্যাংক ছাড়া কেউ কিন্তু এসএমইতেও ফোকাস করছে না। আর আমরা চিন্তা করছি, এসএমই এবং বিলো এসএমই। একদম যাদের দুই হাজার টাকা, পাঁচ হাজার টাকা ঋণ লাগে, যারা এনজিও থেকে ৩০ শতাংশ সুদে ঋণ নেয়, তাদেরকে আমরা নিয়ে আসতে চাই সিঙ্গেল ডিজিটের সুদে লোনে। ডিজিটাল ব্যাংক হলেও আমরা কিন্তু টাকাগুলো এ ব্যাংকগুলোর ভিতরই রাখব। আমরা কিন্তু ৬৪টি ব্যাংকের কালেক্টিভ এজেন্ট হিসেবে কাজ করব। সুতরাং আমাদের যত প্রবৃদ্ধি হবে, এ ব্যাংকগুলির তত প্রবৃদ্ধি হবে এবং বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হবে।’

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন