মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

ভয়ংকর বন্যায় বিপর্যস্ত ৯ জেলা, সাহায্য চেয়ে বন্যার্তদের করুণ আকুতি

বৃহস্পতিবার, আগস্ট ২২, ২০২৪

প্রিন্ট করুন

সিএন প্রতিবেদন: পাহাড়ি ঢল আর বৃষ্টিতে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যায় বিপর্যস্ত দেশের নয়টি জেলা। বাড়িঘরে হাঁটু থেকে কোমরসমান পানি ওঠায় বিপাকে পড়েছেন এসব জেলার বেশিরভাগ মানুষ। এছাড়া, বন্যার পানিতে গ্রামীণ সব সড়ক ও ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে পুকুর ও খামারের মাছ। সাহায্য চেয়ে করুণ আকুতি জানাচ্ছেন পানিবন্দি হাজারো মানুষ।

বন্যাকবলিত জেলাগুলো হলো, ফেনী, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, কুমিল্লা, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, লক্ষ্মীপুর ও খাগড়াছড়ি।

ফেনী : এখন পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুযায়ী, বন্যায় সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা ফেনীর তিন উপজেলা পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়ায়। প্লাবিত হয়েছে এই তিন উপজেলার শতাধিক গ্রাম, পানিবন্দী লক্ষাধিক মানুষ।

বন্যা পরিস্থিতিতে ডিঙি নৌকায় পানিবন্দী মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসা শুরু করেছেন স্বেচ্ছাসেবীরা। উদ্ধারে নামেন ফায়ার সার্ভিসের লোকজনও।

ফেনীর আনন্দপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য মোহাম্মদ সেলিম বলেন, সর্বশেষ ১৯৮৮ সালে ভয়াবহ বন্যার মুখোমুখি হয়েছিলেন ফেনীর বাসিন্দারা। গত ৩৬ বছরে অনেকবার বন্যা হলেও এ ধরনের ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়নি। এবারের বন্যায় পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়ার ৯০ শতাংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

সর্বশেষ বুধবার বিকেল থেকে পানিবন্দী মানুষকে উদ্ধারে নেমেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। ছয়টি স্পিডবোটে করে উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছেন সেনাসদস্যরা। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যরাও তিনটি স্পিডবোটে উদ্ধারকাজ শুরু করেছেন।

জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, উদ্ধার তৎপরতায় বাংলাদেশ কোস্টগার্ডও যুক্ত হচ্ছে। বন্যার কারণে ফেনী-পরশুরাম আঞ্চলিক সড়কসহ স্থানীয় সব গ্রামীণ সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।

নোয়াখালী : নোয়াখালীর নয়টি উপজেলার মধ্যে আটটিতেই জলাবদ্ধতা প্রকট আকার ধারণ করেছে। তিন দিন ধরে বেশির ভাগ ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে আছে।

নোয়াখালী শহরের লক্ষ্মীনারায়ণপুর, হরিনারায়ণপুর, কাজি কলোনি, লইয়ার্স কলোনি, রশিদ কলোনি ও কৃষ্ণরামপুর এলাকার বেশিরভাগ বাসাবাড়ির আঙিনায় বৃষ্টির পানি থই থই করছে।

চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার ১৮টি ইউনিয়নের সবকটিই বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন উপজেলার প্রায় এক লাখ মানুষ। ঘরবাড়ি, ফসলি জমি প্লাবিত হওয়ার পাশাপাশি পাহাড়ি ঢলে ভাঙন দেখা দিয়েছে ধুরং নদের বেড়িবাঁধের কয়েকটি স্থানে। ফটিকছড়ির ইউএনও মোজাম্মেল হক চৌধুরী জানিয়েছেন, বন্যায় পাশের রাউজান উপজেলার প্রায় আটটি ইউনিয়ন এবং হাটহাজারী উপজেলার ৮-১০টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে।

কুমিল্লা : কুমিল্লার গোমতী নদীতে পানি বেড়ে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। গত মঙ্গলবার রাত থেকে বৃষ্টি ও ঢলের পানি ক্রমাগতভাবে বাড়ছে। গোমতী নদীর আদর্শ সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, গোমতীর তীর ঘেঁষে আছড়ে পড়ছে ঢেউ। চরাঞ্চলের কয়েক হাজার একর সবজিখেত পানিতে তলিয়ে গেছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, গত ১০ বছর গোমতী নদীতে এত পানি দেখেননি।

খাগড়াছড়ি : খাগড়াছড়ি সদর ও পানছড়ি উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও দীঘিনালা উপজেলায় আরও অবনতি হয়েছে। দীঘিনালায় এখনো হাজারো মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় আছেন।

দীঘিনালার সঙ্গে রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলা ও লংগদু উপজেলার সরাসরি যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।

মৌলভীবাজার : মৌলভীবাজারে টানা বৃষ্টির সঙ্গে পাহাড়ি ছড়া ও নদ-নদী দিয়ে তীব্র বেগে ভারত থেকে আসছে পানি। মনু নদের পানি বিপৎসীমার ১১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

অন্য প্রধান তিন নদ-নদী ধলাই, জুড়ী ও কুশিয়ারার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কুলাউড়া ও জুড়ী উপজেলার বিভিন্ন স্থানে নদ-নদীর বাঁধ ভেঙে, উপচে ৬২টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

সুনামগঞ্জ : সুনামগঞ্জে বৃষ্টি, উজানের পাহাড়ি ঢল সুরমাসহ অন্যান্য নদীর পানি বাড়ছে। সুরমা নদীর পানি বুধবার ১২ সেন্টিমিটার বেড়েছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। নদী ও হাওর এমনিতেই ভরা বর্ষার পানিতে টইটম্বুর। তাই পানি বাড়লে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সুনামগঞ্জে জুন মাসের মাঝামাঝি ও জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে দুই দফা বন্যা হয়েছে। এতে অসংখ্য ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাটের ক্ষতি হয়েছে। সরকারি হিসাবেই বন্যায় ৩০ হাজার ঘরবাড়ির বিধ্বস্ত হয়েছে।

সুনামগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন হাওলাদার বলেছেন, দুই দিন ধরে সুনামগঞ্জ ও সুনামগঞ্জের উজানে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি হওয়ার কারণেই মূলত পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। পানি আরও বাড়তে পারে। তবে সুনামগঞ্জে বড় বন্যার কোনো পূর্বাভাস নেই।

হবিগঞ্জ : টানা ভারী বৃষ্টি ও ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে হবিগঞ্জের খোয়াই নদের পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আজ বুধবার বিকেল পাঁচটায় খোয়াই নদের মাছুলিয়া পয়েন্টে পানি ১৯৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এমন পরিস্থিতিতে ঝুঁকিতে আছে শহর প্রতিরক্ষা বাঁধ।

সিলেট : বুধবার বৃষ্টির পরিমাণ কিছুটা কমলেও কমেনি মানুষের ভোগান্তি। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির ফলে ঘর থেকে বাইরে বেরিয়ে লোকজন ভোগান্তিতে পড়েন। অনেকেই এমন বৃষ্টির কারণে ঘর থেকে প্রয়োজন ছাড়া বের হননি।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে আখাউড়া স্থলবন্দর ও আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন পুলিশ চেকপোস্ট প্লাবিত হয়েছে। বুধবার সকাল ১০টার পর ইমিগ্রেশনের সব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।

সিএন/এমটি

Views: 5

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন