বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫

শিরোনাম

মমতাজ ভায়ের স্নেহমাখা কন্ঠটি আর কোনদিন শুনবোনা

রবিবার, মে ৯, ২০২১

প্রিন্ট করুন
Joynal

মমতাজ ভাইয়ের স্নেহমাখা কণ্ঠটি আর কোনোদিন শুনবো না— এটি মেনে নেওয়া আমার জন্যে খুবই কষ্টের। আজ ভোরে মমতাজ ভাই পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চলে গেছেন। উনি আর ভাবী (রাইহান মমতাজ) আমার পরিবারের যেভাবে খোঁজ রাখেন, তা আমাকে সবসময় কৃতজ্ঞতায় বেঁধে রাখে।

সে তুলনায় আমিই উনার খোঁজ নিতে পারিনি। করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন সপরিবারে। ভেবেছি সুস্থ হলেই ফের দেখা হবে বাংলা একাডেমিতে। তার আগেই চলে গেলেন!

খুবই কম সংখ্যক মানুষ আছেন আড়াল থেকে অনেক কাজ করে যান। নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়াবার মতোই অনেকটা। মমতাজ ভাই ছিলেন তেমনই একজন। সবসময়ই প্রচারবিমুখ। উনি নতুন প্রজন্মের জন্যে অনেক কিছু রেখে গেছেন। ইতিহাস মনে রাখবে তাঁকে। ১৭টি গ্রন্থ লিখেছেন। বেশিরভাগই ইতিহাসধর্মী। ইতিহাস, ঐতিহ্যের পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধ, বধ্যভূমি, গণহত্যা নিয়েও তাঁর গবেষণাধর্মী বই রয়েছে।

তিনি এমন একজন গবেষক, লেখক ছিলেন; যিনি নিজেকে ওভাবে উপস্থাপন করেননি। বাতির নিচেই থাকতে পছন্দ করতেন। প্রচারবিমুখ এই লেখক যখন কিছু লিখতেন, সে বিষয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞান অন্বেষণ, সরেজমিনে ঘুরে বেড়ানো, ঘটনা থেকে ঘটনার মূলে ঢুকে পড়তেন। সব কাজেই সঙ্গে রাখতেন ভাবীকে। এই নিঃসঙ্গতা ভাবী কিভাবে কাটিয়ে উঠবেন, সেটা ভেবেই খারাপ লাগছে।

গত বছর অমর একুশে গ্রন্থমেলা কাভার করার সুবাদে ঘনঘন দেখা হয়েছিল মমতাজ ভাইয়ের সঙ্গে। উনি বাংলা একাডেমির দায়িত্বে ছিলেন। অফিসে তাঁর সঙ্গে বসলে কখন যে বেলা পেরিয়ে যেতো টেরই পেতাম না। যতক্ষণ বলতেন, ততক্ষণই মুগ্ধ শ্রোতার মতো বসে থাকতে ইচ্ছে করতো।

মমতাজ ভাইয়ের বাড়ির পাশ দিয়েই বয়ে গেছে ফেনী নদী। ভারতীয়রা যখন অবৈধ পন্থায় নদীর পানি তুলে নিচ্ছিলো, তাতে এ পারে কৃষকদের পানির হাহাকার লেগে যেতো, সে বিষয়গুলো নিয়ে আমরা একসঙ্গে বহু কাজ করেছি। এসব এখন স্মৃতি হয়ে আছে।

ওপারে ভালো থাকবেন প্রিয় মমতাজ ভাই। আল্লাহ আপনাকে জান্নাতের মেহমান বানিয়ে নিক। আমরা চিরকাল আপনাকে মনে রাখবো। আপনি ইতিহাসের সহোদর।

[ ছবি : বাংলা একাডেমি, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ]

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন