বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫

শিরোনাম

মশার আতঙ্ক? ঘরেই সমাধান: বারান্দায় রাখুন এই পাঁচটি গাছ

বুধবার, জুলাই ৩০, ২০২৫

প্রিন্ট করুন
মশা

মশার উৎপাত বাড়েই বর্ষাকাল এলে। মশা বিশেষ করে ঢাকার মতো ঘনবসতিপূর্ণ শহরে টানা বৃষ্টিতে পানি জমে থাকা ও নিষ্কাশন ব্যবস্থার দুর্বলতায় জন্ম নেয়। এর ফলে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, চিকুনগুনিয়ার মতো প্রাণঘাতী রোগে আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়তে থাকে চোখে পড়ার মতো। এসব রোগ ঠেকাতে একদিকে যেমন প্রয়োজন প্রশাসনিক ব্যবস্থা, তেমনি ব্যক্তি পর্যায়ে সচেতনতা ও প্রাকৃতিক উপায়ে মশা নিয়ন্ত্রণ করাও জরুরি।

রাসায়নিক স্প্রে বা কয়েলের বদলে যদি ঘরে রাখা যায় কিছু নির্দিষ্ট উদ্ভিদ, তাহলেই মশা আসবে না ধারে-কাছেও। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন কিছু গাছ রয়েছে যেগুলোর গন্ধ, নির্যাস বা তেল মশার ঘ্রাণ গ্রহণ ক্ষমতাকে নষ্ট করে দেয়, ফলে তারা ওই পরিবেশ এড়িয়ে চলে।

নিচে আমরা তুলে ধরছি এমন পাঁচটি গাছ, যেগুলো বারান্দায় রাখলেই আপনার বাড়ির পরিবেশ হয়ে উঠতে পারে মশামুক্ত ও প্রাকৃতিকভাবে সুগন্ধিময়:

লেমনগ্রাস

লেমনগ্রাস – প্রাকৃতিক মশা দূরকারী ও হালকা সুগন্ধের উৎস

লেমনগ্রাসের মধ্যে রয়েছে “সিট্রোনেলা” নামক এক ধরনের প্রাকৃতিক তেল, যা মশার জন্য অত্যন্ত বিরক্তিকর। এই তেলের গন্ধে মশা শুধু দূরে থাকে না, বরং আশপাশে আসতেও চায় না। বারান্দায় বড় টবে বা বালতিতেও লেমনগ্রাস চাষ করা যায় খুব সহজে। এই গাছ দ্রুত বৃদ্ধি পায়, বিশেষ করে বর্ষাকালে।
লেমনগ্রাসের আরেকটি দারুণ দিক হচ্ছে—এটি শুধু মশা তাড়ায় না, চা তৈরিতে ব্যবহৃত হলে তা শরীর ঠান্ডা রাখে এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। মানে এক ঢিলে দুই পাখি!

তুলসি – গন্ধে মশা দূরে, গুণে শরীর সুস্থ

তুলসি (বিশেষ করে ব্যাসিল প্রজাতির) গাছের গন্ধ মশাদের জন্য বিষের মতো কাজ করে। তুলসির পাতায় রয়েছে ইউজেনল নামক এক ধরনের যৌগ, যা মশার স্নায়ুতন্ত্রকে বিভ্রান্ত করে। এর ফলে মশা ভুলেও এ গাছের আশপাশে আসে না।
তবে এই গাছ রোদের খুব প্রয়োজন। তাই বারান্দার এমন স্থানে রাখুন যেখানে পর্যাপ্ত আলো পৌঁছায়। অন্যদিকে, তুলসি গাছ পরিবেশ বিশুদ্ধ করতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

পুদিনা

পুদিনা – রান্নায় যেমন স্বাদ, মশা তাড়াতেও তেমনি কাজের
পুদিনা পাতার তীব্র সুগন্ধ মশাদের কাছে অত্যন্ত অস্বস্তিকর। সহজেই টবে চাষ করা যায় পুদিনা। একটি শিকড়সহ ডাল লাগালেই কয়েক সপ্তাহে তা ছড়িয়ে পড়ে। রান্নার পাশাপাশি ঠান্ডা লাগা, হজমের সমস্যা, এমনকি ত্বকের যত্নেও ব্যবহৃত হয় পুদিনা।
বর্ষার আর্দ্র আবহাওয়ায় পুদিনা খুব দ্রুত বংশবিস্তার করে। আপনি চাইলে রান্নাঘরের জানালার ধারে বা বারান্দায় একটি মাঝারি টবেই এই গাছ লাগাতে পারেন।

ল্যাভেন্ডার – মশা নয়, মন মাতানো ঘ্রাণে ঘর স্নিগ্ধ
ল্যাভেন্ডার ফুলের গন্ধ আমাদের জন্য আরামদায়ক হলেও, মশাদের কাছে তা একেবারে অসহনীয়। এই গাছের নির্যাস বা তেল বহু আগ থেকেই মশা তাড়াতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। একটি ছোট টবে ল্যাভেন্ডার চাষ করে বারান্দায় রাখলে একদিকে যেমন মশা আসবে না, অন্যদিকে ফুলের সৌন্দর্য ও সুবাসে আপনার ঘর হয়ে উঠবে প্রশান্তির এক কোণ।

রোজমেরি

রোজমেরি – মশা তাড়ানোয় আধুনিক জীবনের প্রাকৃতিক অস্ত্র
রোজমেরির পাতায় রয়েছে ক্যামফর ও পিনিন জাতীয় উপাদান, যা মশার স্নায়ুতন্ত্রে ঝাঁকুনি দেয়। তবে এই গাছের জন্য প্রয়োজন হালকা রোদ ও ঠাণ্ডা বাতাস। অতিরিক্ত গরমে বা স্যাঁতস্যাঁতে জায়গায় এটি ভালো থাকে না। আপনি চাইলে শুধু গাছ নয়, রোজমেরি এসেনশিয়াল অয়েলও ব্যবহার করতে পারেন – ইনডোর স্প্রে হিসেবে বা ডিফিউজারে দিয়ে।
ল্যাভেন্ডার ও রোজমেরির তেলের সংমিশ্রণেও পাওয়া যাবে আরও ভালো ফলাফল।

বিকল্প পন্থা: যাদের সময় নেই বা গাছ লাগাতে পারছেন না
যদি আপনি খুব ব্যস্ত থাকেন বা বারান্দা না থাকে, তাহলে এসেনশিয়াল অয়েল (Essential Oils) ব্যবহার করতে পারেন। লেমনগ্রাস, ল্যাভেন্ডার, রোজমেরি, পুদিনা ইত্যাদির তেল কিছুটা পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করলেই মিলবে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে মশা নিয়ন্ত্রণের সহজ সমাধান।

পরিবেশবান্ধব জীবিকা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষার দিকে পদক্ষেপ
বিশেষজ্ঞদের মতে, কেমিক্যালযুক্ত মশা তাড়ানো পণ্য যেমন আমাদের শরীরে নানা ক্ষতি করে, তেমনি পরিবেশেও দীর্ঘস্থায়ী নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। পক্ষান্তরে এসব উদ্ভিদ শুধু মশা তাড়ায় না, বরং বাতাস বিশুদ্ধ করে, ঘরে অক্সিজেন সরবরাহ বাড়ায় এবং মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও ভালো।

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন