কক্সবাজারের মহেশখালীতে কোস্টগার্ডের নেতৃত্বে যৌথবাহিনীর অভিযানে অংশ নিয়েছেন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী ও যুবদল নেতা হত্যা মামলার আসামিরা। এ ছাড়াও এ অভিযানের সোর্স হিসেবে রাখা হয়েছে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত পলাতক ও হত্যাসহ একাধিক মামলার আসামিদের।
এ দিকে গত শনিবার (১৮ অক্টোবর) সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত উপজেলার কালারমার ছড়া ইউনিয়নের মোহাম্মদ শাহ ঘোনা গ্রামে কোস্টগার্ডের নেতৃত্বে একটি অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় চট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ তানভীরের বসতবাড়ি ও আশপাশের খালবিলের ধানক্ষেত ও পান বরজে এ অভিযান চালানো হয়। এ সময় ভাঙচুর করে তছনছ করা হয় শহীদ তানভীরের বাড়ি ও ঘরের বিভিন্ন আসবাবপত্র।
এ অভিযানে দেশীয় অস্ত্র হাতে দেখা গেছে হত্যাসহ একাধিক মামলার আসামিদের। এই অস্ত্রধারীদের ভিডিও বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। অভিযান শুরুর আগেই সোর্স হিসেবে থাকা হত্যাসহ একাধিক মামলার আসামি আবু বক্করকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনি যুবদল নেতা তোফাইল হত্যাসহ একাধিক মামলার পলাতক আসামি।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মহেশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনজুরুল হক। তিনি বলেন, আবু বক্কর কালারমার ছড়া বাজার থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা (হত্যা মামলা মহেশখালী থানার মামলা-৩৫/২৫ ও ১৩১/২৫সহ একাধিক রয়েছে)। আরও মামলা আছে কিনা আমরা খতিয়ে দেখছি।
এর আগেও গত ২০ মার্চ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হত্যাসহ একাধিক মামলার আসামিদের সোর্স হিসেবে ব্যবহার করার অভিযোগ উঠে কোস্টগার্ডের বিরুদ্ধে। সেই ছবিও মুহূর্তে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
সম্প্রতি কক্সবাজার থেকে কোস্ট গার্ডের সোর্স নামে পরিচিত আনছার উল্লাহকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আনছার উল্লাহর ব্যবহৃত অস্ত্রও উদ্ধার করা হয়।
জানা গেছে, ওইসব সোর্সের হাতে দেশীয় তৈরি অস্ত্র থাকায় আতঙ্কে ছিল স্থানীয়রাসহ বিলে ধানক্ষেত ও পানবরজে কর্মরত কৃষকরা।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শহীদ তানভীর ভাই যুবদল নেতা মিজানুর রহমান মাতব্বরে বলেন, আওয়ামী লীগের তাণ্ডবে ও নির্যাতনের কারণে আমরা ১৭ বছর ধরে তাদের ঘরবাড়িকে থাকতে পারিনি। এ দীর্ঘ সময়ে আমাদের শত শত একর জায়গা জায়গা-জমি দখল করে ভোগ করেছে। ৫ আগস্ট স্বৈরাচার সরকারের পতনের পর আমরা বসবাস শুরু করি। কিন্তু আমরা এখনো শান্তিতে নেই। একের পর এক মহেশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তারেক শরীফের মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে আওয়ামী লীগ বিরোধী পরিবারের উপর প্রশ্নবিদ্ধ অভিযান পরিচালনা করে হয়রানি করছে।
প্রত্যক্ষদর্শী কালারমারছড়া ইউনিয়ন যুবদল আহবায়ক নাজমুল হোসাইন ছিদ্দিকী বলেন, কোস্ট গার্ডের পরিকল্পিত ভুয়া অভিযানে এলাকায় আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে। কোস্টগার্ডের অভিযানে বিভিন্ন হত্যা মামলার আসামি সোর্স আবু বক্করকে ব্যবহার অভিযানকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
এদিকে অভিযানের পর আটকৃতদের ও অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়ে শনিবার কক্সবাজারের শহরের নুনিয়ার ছড়া ঘাট সংলগ্ন অস্থায়ী ক্যাম্পে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে কোস্টগার্ড।
সেখানে একাধিক হত্যা মামলার আসামি সদ্য গ্রেপ্তার হওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী আনছার উল্লাহ কিভাবে কোস্টগার্ডের সোর্স হিসেবে এতদিন কাজ করেছে এমন প্রশ্ন করা হলে কোস্টগার্ডের এক কর্মকর্তা জানান, তার মামলা ও অপরাধ সম্পর্কে আমরা জানতাম না। আজকেও কোস্টগার্ডের অভিযানে দেশীয় অস্ত্রসহ হত্যা ও বিভিন্ন মামলার আসামিদের দেখা গেছে এমন প্রশ্ন করা হলে সেটি এড়িয়ে যান তারা।
সমন্বিত প্রবাসী বাংলাদেশি ঐক্য পরিষদের সৌদি আরবের সভাপতি ফয়সাল মাহমুদ ফেসবুকে লিখেন, মহেশখালী উপজেলার কালারমার ছড়া ইউনিয়নের মোহাম্মদ শাহ ঘোনা গ্রামে আমার জন্ম। এ গ্রামটি একদম বাজারের সঙ্গে লাগোয়া। আজকে কোস্টগার্ড আমার গ্রামে অভিযান পরিচালনা করেছে। আগেও কয়েকবার করেছে। এবারের অভিযানে চট্টগ্রামের দুই সাংবাদিককে তারা নিয়ে গেছেন। অভিযানের সময় তারা দুজন লাইভে গিয়ে বলছে, কোস্টগার্ড মহেশখালীর দুর্গম এলাকায় সন্ত্রাসী আস্তানায় অভিযান পরিচালনা করছে।
দুর্গম এলাকা কাকে বলে? কারো বসতবাড়ি কি সন্ত্রাসী আস্তানা কি-না? কোস্টগার্ডও স্বৈরাচার আওয়ামী সরকারের পতনের পর থেকে তাদেরই এজেন্ডা বাস্তবায়নে ব্যস্ত। আমি এক কোটি টাকার চ্যালেঞ্জ করতে চাই কোস্টগার্ডকে, তারা স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের পতরের পর কোন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ছাত্রলীগ নেতাকে মহেশখালী থেকে গ্রেপ্তার করেছে কি-না? উপরন্তু আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীদের প্রত্যক্ষ মদদে আমার গ্রামে অভিযান পরিচালনা করছে। সন্ত্রাসী কি সব মোহাম্মদ শাহ ঘোনা গ্রামে। এ এলাকার বিএনপি জামায়াতের সবাই কি সন্ত্রাসী? আরে জানোয়ারের দল আওয়ামী লীগের শাসনামলে দীর্ঘ ১৭ বছর এ মানুষগুলো ঘর ছাড়া ছিল। নতুন বাংলাদেশে তারা নতুনভাবে জীবন শুরু করেছে।
তিনি বলেন, আমার গ্রামে অভিযানের নামে আবারও আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের প্রতিষ্ঠিত করতে মরিয়া কোস্টগার্ড লীগ। এর আগেও কোস্টগার্ড অভিযান পরিচালনা করে আবু চাচাকে গুলি করে হত্যা করে। পরে আমরা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে যথাযথ প্রমাণসহ অভিযোগ দিলে তখনকার দায়িত্বরত সব কোস্টগার্ড সদস্য প্রত্যাহার হয়। তবে, আমরা আবু চাচা হত্যার বিচার আল্লাহর দরবারে দিয়েছিলাম। এ হত্যাকাণ্ডের পর কিছুদিন চুপ ছিল কোস্টগার্ড লীগ। এখন আবারও আমার গ্রামে অভিযানের নামে জুলুম শুরু করেছে। এটি আল্লাহ সইবে না। আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে এ যথাযথ প্রতিকার চাইবো। আমার গ্রামের একজন সদস্য বেঁচে থাকতে কোন আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীকে প্রতিষ্ঠিত হতে দিবো না।
চলমান নিউইয়র্ক ফেসবুক পেজ লাইক দিন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন