যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও জনবহুল নগরী নিউইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচনে জোহরান মামদানির ঐতিহাসিক বিজয় শুধু দেশটির একটি স্থানীয় ফলাফল নয়, এটি মার্কিন রাজনীতির গতিপথের একটি গুরুত্বপূর্ণ বাঁকবদলও বটে। শহরের শত বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সি, প্রথম মুসলিম ও এশিয়া বংশোদ্ভূত প্রথম ব্যক্তি হিসাবে তার এই জয় নিউইয়র্কের প্রগতিশীল, বহু সাংস্কৃতিক পরিচয়ের এক সুস্পষ্ট প্রতিফলন। ভারতীয় বংশোদ্ভূত শিক্ষাবিদ মাহমুদ মামদানি এবং চলচ্চিত্র নির্মাতা মীরা নায়ারের সুযোগ্য পুত্র নিউইয়র্কবাসীর মধ্যে যে আশার সঞ্চার করেছেন, তার পূর্ণ প্রয়োগে তিনি সফল হবেন নিশ্চয়ই। যুগান্তরের পক্ষ থেকে তার প্রতি রইল উষ্ণ অভিনন্দন।
বলা বাহুল্য, মামদানির এ বিজয় কেবল ভোটের সংখ্যার খেলা নয়; এটি পরিবর্তনের এক শক্তিশালী ম্যান্ডেটও। যেখানে সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো এবং রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়ার মতো অভিজ্ঞ প্রতিদ্বন্দ্বীরা ছিলেন, সেখানে মামদানির জয় প্রমাণ করে নিউইয়র্কবাসী নতুন ধারার রাজনীতির জন্ম দিতে প্রস্তুত। মামদানির প্রচার কৌশল, যা ট্রাম্পের মতো ব্যক্তিত্বের ব্যক্তিগত আক্রমণের বিপরীতে সাধারণ মানুষের বাস্তব সমস্যা, যেমন-অর্থনীতি, স্বাস্থ্যসেবা ও জীবনযাত্রার ব্যয় নিয়ে বেশি মনোযোগ দিয়েছে-তা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে। তার বিজয় ভাষণে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে উদ্দেশ করে দেওয়া সেই চ্যালেঞ্জ-‘ডোনাল্ড ট্রাম্প, আমি জানি আপনি দেখছেন। আপনার জন্য আমার তিনটা শব্দ আছে-আওয়াজটা বাড়িয়ে দিন’ কিংবা গাজায় গণহত্যার দায়ে বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে নিউইয়র্কে আসামাত্র গ্রেফতারের ঘোষণার কথা উল্লেখ করতেই হয়। এমন আত্মবিশ্বাস নিঃসন্দেহে আগামী দিনে তার শক্তিশালী অবস্থানের ইঙ্গিত বহন করে। এই জয় রিপাবলিকানদের জন্য একটি বড় ধাক্কা তো বটেই, তার প্রগতিশীল নীতি ও মধ্যপন্থি বাস্তববাদের সংমিশ্রণ ডেমোক্র্যাটদের জন্যও নতুন পথ খুলে দিতে পারে।
এই ঐতিহাসিক মুহূর্তে একটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন হলো, দুটি গুরুত্বপূর্ণ পদে দুই বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মুসলিম নারীর অধিষ্ঠিত হওয়া। সিটি কাউন্সিলর হিসাবে শাহানা হানিফের মতো প্রগতিশীল নেত্রীর বিজয় বাংলাদেশিসহ বৃহত্তর মুসলিম ও অভিবাসী সম্প্রদায়ের জন্য এক বিশাল গর্বের বিষয়। একইসঙ্গে নিউইয়র্ক স্টেট সুপ্রিমকোর্টের বিচারক পদে সোমা সাঈদের জয় প্রমাণ করে, নাগরিক সমাজ থেকে উঠে আসা প্রার্থীরাও সর্বোচ্চ পদে আসীন হতে পারে। এই নির্বাচন প্রমাণ করল, গণতন্ত্রে মানুষের ইচ্ছা সবকিছুর ঊর্ধ্বে; এবং নিউইয়র্ক আবারও প্রমাণ করল এটি বিশ্বকে রাজনৈতিক অন্ধকারের মুখেও আলোর পথ দেখাতে পারে। জোহরান মামদানির নেতৃত্বে নিউইয়র্কের নতুন যাত্রা সফল হোক।



চলমান নিউইয়র্ক ফেসবুক পেজ লাইক দিন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন