মুখে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়াছে প্রতিনিয়ত। দাঁতের ক্ষয়কে অনেকেই সামান্য সমস্যা ভেবে অবহেলা করেন। কিন্তু চিকিৎসকরা বলছেন—এটি কেবল দাঁত হারানোর কারণই নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদে মুখের ক্যানসারের মতো প্রাণঘাতী রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই দাঁতের স্বাস্থ্য রক্ষায় সচেতনতা জরুরি।
ক্যানসার দাঁতের ক্ষয় কীভাবে হয়?

আমরা প্রতিদিন নানা ধরনের খাবার খাই—মিষ্টি, ভাজাপোড়া, স্টার্চযুক্ত খাবার ইত্যাদি। এগুলোর সূক্ষ্ম কণা প্রায়শই দাঁতের ফাঁকে আটকে যায়। মুখের লালায় থাকা প্রোটিন, ব্যাকটেরিয়া ও খাবারের কণার মিশ্রণে তৈরি হয় ডেন্টাল প্লাক। সময়মতো এই প্লাক পরিষ্কার না করলে এটি শক্ত হয়ে টার্টার বা ক্যালকুলাসে রূপ নেয়, যা মাড়ি ও দাঁতের মারাত্মক ক্ষতি করে।
প্রাথমিকভাবে এর লক্ষণ হতে পারে—
- মাড়ি থেকে রক্ত পড়া
- মাড়িতে প্রদাহ
- দাঁতের সংবেদনশীলতা
- দাঁতের রং পরিবর্তন
- মুখে দুর্গন্ধ
যদি এই সমস্যা দীর্ঘদিন অবহেলা করা হয়, তাহলে এটি পিরিয়োডন্টাল ডিজিজে পরিণত হতে পারে, যা দাঁতের আশেপাশের হাড় নষ্ট করে দেয়। দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ ও সংক্রমণ মুখের ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
দাঁতের ক্ষয় ও মুখের ক্যানসারের সম্পর্ক
গবেষণায় দেখা গেছে, মুখগহ্বরের দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ, ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ও ক্ষত সঠিকভাবে নিরাময় না হলে মুখের কোষে জেনেটিক পরিবর্তন ঘটতে পারে। এ থেকেই শুরু হয় ওরাল ক্যানসার। বিশেষ করে যারা ধূমপান বা তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার করেন, তাদের ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়।
বেসিক ওরাল হাইজিনের নিয়ম

দিনে দুইবার ব্রাশ করা
রাতে ঘুমানোর আগে ব্রাশ করলে মুখে ব্যাকটেরিয়ার জমা কমে যায়, ফলে সারারাত প্লাক তৈরি হয় না। সকালে নাস্তার পর ব্রাশ করলে সারাদিন দাঁত পরিষ্কার থাকে।
নিয়মিত ফ্লসিং
ব্রাশ দাঁতের সব ফাঁকে পৌঁছাতে পারে না। ফ্লস দাঁতের ফাঁকে জমে থাকা খাবারের কণা ও প্লাক সরিয়ে দেয়। প্রতিদিন রাতে ব্রাশের পর ফ্লস ব্যবহার করা অভ্যাস করুন।
লবণ পানি দিয়ে কুলি
গরম লবণ পানি মুখের ভেতরের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া কমায় এবং মাড়ির প্রদাহ কমাতে সহায়তা করে। দিনে অন্তত একবার এটি করতে পারেন।
সঠিক ব্রাশ ও পেস্ট নির্বাচন
মিডিয়াম বা সফট ব্রিসল যুক্ত ব্রাশ এবং ফ্লোরাইডযুক্ত টুথপেস্ট ব্যবহার করুন। খুব শক্ত ব্রাশ দাঁতের এনামেল ক্ষতি করতে পারে।

প্রতি ৬ মাসে একবার ডেন্টিস্টের চেকআপ
প্রাথমিক পর্যায়ে সমস্যাগুলো শনাক্ত করা গেলে দাঁতের ক্ষয় বা ক্যানসারের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়।
অতিরিক্ত সতর্কতা
- অতিরিক্ত মিষ্টি বা চিনি জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন।
- ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য সম্পূর্ণ বর্জন করুন।
- পর্যাপ্ত পানি পান করুন, যাতে মুখ শুষ্ক না হয়।
- ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস সমৃদ্ধ খাবার খান, যা দাঁতের জন্য উপকারী।
বিশেষজ্ঞ মত
ডা. (কাল্পনিক) আরিফুল ইসলাম, মুখ ও দাঁতের রোগ বিশেষজ্ঞ, বলেন “দাঁতের ক্ষয়কে অবহেলা করলে তা শুধু দাঁত হারানোর ঝুঁকিই বাড়ায় না, বরং দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ মুখের ক্যানসারের জন্য পরিবেশ তৈরি করে। তাই দাঁতের স্বাস্থ্য রক্ষা মানে পুরো শরীরের স্বাস্থ্য রক্ষা।”
চলমান নিউইয়র্ক ফেসবুক পেজ লাইক দিন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন