মেডিটেশন শুধু আত্মিক চর্চা নয়, মেডিটেশন বরং বিজ্ঞানের চোখেও এটি শরীর ও মনের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলার একটি প্রমাণিত উপায়। মেডিটেশন বর্তমান সময়ের ব্যস্ত জীবন, মানসিক চাপ এবং দুশ্চিন্তায় ভরা প্রতিদিনের মধ্যে একটু শান্তি খুঁজে পাওয়াই যেন অনেক কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই দৌড়ঝাঁপের জীবনেই অনেকেই খুঁজে ফিরছেন মানসিক প্রশান্তি এবং শারীরিক স্বস্তি—আর এখানেই মেডিটেশন বা ধ্যান এক কার্যকর পন্থা হতে পারে।
বিশ্বজুড়ে চিকিৎসক, মনোবিজ্ঞানী এবং গবেষকেরা একমত যে মেডিটেশন মানুষের মস্তিষ্কে ভালো রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটায়, যা মন শান্ত রাখে এবং দেহ সুস্থ রাখে। বিশ্ব মেডিটেশন দিবস উপলক্ষে জেনে নিন পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ, যেগুলোর জন্য মেডিটেশন আমাদের জীবনের অপরিহার্য অংশ হতে পারে।

মেডিটেশন কী, কেন মেডিটেশন করা হয়?
মেডিটেশন হলো মনের ব্যয়াম। শারীরিক সুস্থ্যতার জন্যে যেমন ব্যয়াম প্রয়োজন, মনের সুস্থতার জন্যেও তেমনি ব্যায়াম প্রয়োজন। মেডিটেশন এর বাংলা হচ্ছে ধ্যান। প্রতিটি ধর্মই ধ্যানের স্তরে এসেছে। হযরত মোহাম্মদ (সঃ) দীর্ঘদীন হেরাগুহায় ধ্যান মগ্ন ছিলেন। ধ্যানের এক স্তরেই তিনি ওহী লাভ করেন। মহামতি বুদ্ধ দীর্ঘদীন অশোক গাছের নিচে ধ্যানরত অবস্থায় বোধি লাভ করেন। আগেরদিনে মুনীঋষিরা তপোবনে চলে যেতেন সিদ্ধি লাভ করার জন্যে।
মেডিটেশন একজন মানুষকে স্থির করে। একজন ধ্যানী তাঁর নিজের মনের উপর তাঁর নিয়ন্ত্রণ লাভ করে। তিনি ভেতর থেকে শুদ্ধি লাভ করেন। পরিশুদ্ধ আত্মা নিয়ে তিনে সৃষ্টির সেবা ও স্রষ্টার ইবাদতে ব্রত হন। ধ্যানী সমসময় স্থির, প্রশান্ত, ও ইতিবাচক থাকেন। একজন ধ্যানী কখনো অন্যের ক্ষতি চিন্তা করতে পারেন না। ধ্যানীরা সাধারণত জ্ঞানী হন। আর সে জ্ঞানের আলোকে নিজের ও অন্যের কল্যাণ নিশ্চিত করেন।

মেডিটেশন মানসিক চাপ কমায়
মেডিটেশনের সবচেয়ে বড় উপকারিতা হলো এটি মনকে শান্ত করে এবং মানসিক চাপ কমায়। হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত মেডিটেশন করেন, তাদের কর্টিসল হরমোনের মাত্রা কম থাকে। এই হরমোনই মূলত স্ট্রেস বাড়ায়। ধ্যানের মাধ্যমে শ্বাস-প্রশ্বাসের ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করলে মন ধীরে ধীরে শান্ত হয়ে আসে, যা উদ্বেগ, দুশ্চিন্তা, এমনকি মানসিক অবসাদ কমাতে সাহায্য করে।
২. মনোযোগ বাড়ায়
বর্তমান ডিজিটাল যুগে মানুষের মনোযোগের পরিধি খুবই ছোট হয়ে গেছে। তবে নিয়মিত মেডিটেশন মনোযোগ ধরে রাখার ক্ষমতা বাড়ায়। ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যারা দিনে ১৫ মিনিট করে মেডিটেশন করেন, তারা পড়াশোনা, কাজ কিংবা যেকোনো মনোসংযোগ প্রয়োজন এমন কাজে অনেক ভালো পারফর্ম করেন।
৩. মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি
ধ্যান শুধু স্ট্রেস কমায় না, এটি হতাশা, দুশ্চিন্তা ও আবেগজনিত ভারসাম্য রক্ষায়ও কার্যকর। মাইন্ডফুলনেস-বেইজড স্ট্রেস রিডাকশন (MBSR) এবং মাইন্ডফুলনেস-বেইজড কগনিটিভ থেরাপি (MBCT) নামের দুটি মেডিটেশন ভিত্তিক পদ্ধতি মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে খুবই কার্যকর বলে বিবেচিত। এই চর্চার ফলে মন শান্ত থাকে, আবেগ নিয়ন্ত্রণে আসে এবং মানুষ নিজের ভেতর বেশি সচেতন হয়ে ওঠে।

৪. স্মৃতিশক্তি ও সৃজনশীলতা বাড়ায়
ধ্যান মস্তিষ্কের ‘হিপোক্যাম্পাস’ অংশকে সক্রিয় করে, যা স্মৃতিশক্তি ও শেখার সঙ্গে জড়িত। যারা নিয়মিত মেডিটেশন করেন, তাদের শেখার দক্ষতা বাড়ে এবং সৃজনশীল চিন্তা আরও উজ্জ্বল হয়। লেখক, চিত্রশিল্পী কিংবা যেকোনো সৃজনশীল পেশার মানুষেরা আজকাল নিয়মিত মেডিটেশন করছেন শুধুমাত্র তাদের চিন্তা শক্তিকে উন্মুক্ত রাখার জন্য।
৫. শরীরের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে
শুধু মানসিক নয়, মেডিটেশন শরীরের প্রতিও দারুণ উপকারী। এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে, হৃদস্পন্দন স্বাভাবিক রাখে এবং ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে। মেডিটেশন করার সময় আমাদের দেহ একপ্রকার “রিল্যাক্সড মোড”-এ চলে যায়, যেখানে কোষগুলো নিজেদের মেরামত করতে পারে। এটি নিয়মিত করলে হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, অনিদ্রা এবং এমনকি কিছু দীর্ঘমেয়াদি ব্যথাও কমে যায়।
শেষ কথা
মেডিটেশন এখন আর শুধুমাত্র আধ্যাত্মিকদের অনুশীলন নয়, বরং এটি হয়ে উঠেছে একটি বিজ্ঞানসম্মত জীবনচর্চা। দিনে মাত্র ১০-১৫ মিনিট সময় ব্যয় করেই আপনি নিজেকে তৈরি করতে পারেন একজন মানসিকভাবে শক্তিশালী, আবেগে ভারসাম্যপূর্ণ ও শারীরিকভাবে সুস্থ মানুষ হিসেবে। ধ্যান করার জন্য কোনো বিশেষ জায়গা বা সময় প্রয়োজন নেই—শুধু প্রয়োজন নিজের প্রতি যত্ন এবং ধৈর্য। শুরু করুন আজ থেকেই কয়েক মিনিটের মেডিটেশন আপনার আগামীকাল বদলে দিতে পারে।
শরীরের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে
শুধু মানসিক নয়, মেডিটেশন শরীরের প্রতিও দারুণ উপকারী। এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে, হৃদস্পন্দন স্বাভাবিক রাখে এবং ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে। মেডিটেশন করার সময় আমাদের দেহ একপ্রকার “রিল্যাক্সড মোড”-এ চলে যায়, যেখানে কোষগুলো নিজেদের মেরামত করতে পারে। এটি নিয়মিত করলে হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, অনিদ্রা এবং এমনকি কিছু দীর্ঘমেয়াদি ব্যথাও কমে যায়।
চলমান নিউইয়র্ক ফেসবুক পেজ লাইক দিন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন