নিজস্ব প্রতিবেদক: একই মঞ্চে একই প্রতিযোগীতায় জয়ী হয়ে ছবি তুলেছেন মা-ছেলে। দু’জনেই হাস্যেজ্জ্বল, চেহারায় তৃপ্তির চাপ। বিষয়টি ছবিতে দেখতে যতটুকু সুন্দর, বাস্তবে আরো রোমাঞ্চকর। ছবিতে যে দুই জনকে দেখা যাচ্ছে তাদের একজন বাংলাদেশের প্রথম ব্ল্যাক বেল্ট প্রাপ্ত নারী কারাতেকা শামিমা আখতার তুলি এবং অপরজন তার ছেলে লিওন। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের লাসভেগাসে অনুষ্ঠিত ‘দি ওজাওয়া কাপ’ টুর্নামেন্টে তিন ব্রোঞ্জপদক জিতে বাজিমাত করেছেন এই দুই বাংলাদেশি মা-ছেলে।
জানা গেছে, এই প্রতিযোগীতায় ভ্যাটেরার্ন ৪৫-৫৯ বছর ক্যাটাগরিতে কাতা ইভেন্টে অংশ নিয়ে কারাতেকা তুলি ব্রোঞ্জ জিতেছেন। যেখানে ৩০ দেশের প্রায় নয়শ’ কারাতেকা নিজেদের নৈপূণ্য প্রদর্শন করেন। এইদিকে লিওন ১৮-৩০ বছর ক্যাটাগরিতে কাতা ও কুমি ইভেন্টে দুটি ব্রোঞ্জপদক জেতেন। একটি টুর্নামেন্টে মা ও ছেলের তিন পদক জয় বাংলাদেশের ক্রীড়া ইতিহাসে নতুন ঘটনা।
১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হন তুলি। দেশে থাকতে নিজ ক্যারিয়ারে ১৯৮৯ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত টানা পাঁচবার জাতীয় শিরোপা ঘরে তুলেছেন। কারাতে ছাড়াও ইয়োগা, পিলাত, বডিবিল্ডিং, পাওয়ারলিফটিং, সাভাতে, কুংফু, ক্রাভ মাগার মতো বিভিন্ন ইভেন্টে খেলতে ১০টি দেশ ভ্রমণ করেছেন। ‘ব্যায়াম ছেড়ে দিলে কি মোটা হয়ে যাব?’ শীর্ষক একটি বইও লিখেছেন তুলি। এছাড়া নারীদের ব্যায়ামের জন্য ২০ বছর যাবত কমব্যাট জিম নামে একটি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে আসছেন।
এতকিছুর পরেও তুলিকে প্রতিনিয়ত চারপাশের মানুষের কাছ থেকে বাধার সম্মুখীন হতে হতো। মহিলাদের জন্য ব্যয়াম অশোভন- এরকম বুলির শিকারও হয়েছেন তিনি। তবে হাল না ছেড়ে দিয়ে ২৮ বছরের বিরতির পর আবারো নিজেকে প্রমাণ করলেন তুলি। ৪৮ বছর বয়সে প্রতিযোগিতার ম্যাটে ফিরে আমেরিকা ও নিজ মাতৃভূমি বাংলাদেশের জন্য জিতে নেন পদক।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স ও মাস্টার্স করা তুলি রত্নগর্ভা মা রওশন আরা বেগমের কনিষ্ঠ সন্তান। প্রফেসর ভাইবোনদের ভিড়ে তথাকথিত নিশ্চিত জীবিকার পথ না মাড়িয়ে বেছে নেন ব্যায়ামবিদ হওয়ার জীবন।
তুলি পদক জয়ের অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, এই টুর্নামেন্টে দেশের হয়ে আমি ও আমার ছেলে দু’টি পদক জিতেছি। যা দেশের ইতিহাসে নতুন এক মাত্রা। এভাবেই সামনের দিনগুলোতে এগিয়ে যেতে চাই।
এইদিকে মা-সন্তানের এমন অর্জনে উল্লাসের শেষ নেই বাংলাদেশিদেরও। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুলি ও তার সন্তানকে শুভেচ্ছা জানিয়ে নিজেদের অনুভূতি ছড়িয়ে দিচ্ছেন নেটিজেনরা।
প্রসঙ্গত, জাপান কারাতে অ্যাসোসিয়েশনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও সোতোকান কারাতের প্রতিষ্ঠাতা জাপানের ওসামু ওজাওয়ার নামে প্রতিবছর এই টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হয়। যা ১৯৮১ সালে প্রথম উদ্বোধন করা হয়। এটি বিশ্বের বৃহত্তম ঐতিহ্যবাহী কারাতে টুর্নামেন্টগুলোর মধ্যে অন্যতম।
আইআই/সিএন
Views: 0
চলমান নিউইয়র্ক ফেসবুক পেজ লাইক দিন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন