নিজস্ব প্রতিবেদক: যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন চার বছরের জন্য। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দুই বছর পর যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় সেটাই মধ্যবর্তী নির্বাচন। মার্কিন সংবিধান ও সংসদীয় ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ অংশ এই মধ্যবর্তী নির্বাচন। ক্ষমতা ধরে রাখার পাশাপাশি জনপ্রিয়তা যাচাইয়েরও অন্যতম মাধ্যম এটি। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। বেশ উৎসবমুখর পরিবেশে গত ৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী নির্বাচন। এখনো পর্যন্ত প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতে উচ্চকক্ষ সিনেট এবং নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভস বা প্রতিনিধি পরিষদে এগিয়ে রয়েছে বিরোধী দল রিপাবলিকান পার্টি। তবে এসবের বাইরে কিছু ব্যক্তিগত অর্জন ছুঁয়ে গেছে সকলকে।
কেটি ব্রিট : রিপাবলিকান ৪০ বছর বয়সী কেটি ব্রিটের অ্যালাবামা রাজ্যের প্রথম নারী সিনেটর হিসেবে নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন । ডেমোক্র্যাট প্রার্থী উইন বয়েডকে হারিয়ে চলতি মেয়াদ শেষে ৩৬ বছর পর অবসর নিতে যাওয়া রিচার্ড শেলবির স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন ব্রিট। ১৯৩২ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত ৫৮ জন মহিলা মার্কিন সিনেটর হিসাবে কাজ করেছেন। ১০০ সদস্যের মার্কিন সেনেট প্রথম নারী প্রতিনিধি পায় ১৯৩২ সালে; এরপর থেকে এখন পর্যন্ত মাত্র ৫৮ নারী সেই পদাঙ্ক অনুসরণ করতে পেরেছে।
ব্রিট বলছেন, তিনি হতে যাচ্ছেন সেনেটের একমাত্র নারী রিপাবলিকান, যার স্কুলগামী সন্তান রয়েছে। ২০২২ সালকে ‘অভিভাবকদের বছর’ অ্যাখ্যা দেওয়া এ নারী তরুণদের জন্য সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ গড়ার অঙ্গীকার করেছেন।
ম্যাক্সওয়েল ফ্রস্ট : ২৫ বছর বয়সী ম্যাক্সওয়েল ফ্রস্ট ফ্লোরিডার দশম কংগ্রেসনাল আসন থেকে জিতে প্রতিনিধি পরিষদে যাচ্ছেন বলে ভোটের হারে দেখা যাচ্ছে। আনুষ্ঠানিকভাবে বিজয়ী ঘোষিত হলে তিনি হবেন মার্কিন কংগ্রেসে ‘জেনারেশন জেড’ এর প্রথম সদস্য।
১৯৯৭ সালে জন্ম নেওয়া এ তরুণের জয় অনুমিতই ছিল। তার নির্বাচনী প্রচারে বন্দুক সহিংসতা, জলবায়ূ পরিবর্তন, গর্ভপাতের অধিকার, স্বাস্থ্যসেবার আওতা বাড়ানোর মতো ইস্যুগুলো অনেক তরুণ ভোটারকে আকৃষ্ট করেছিল।
জেনারেশন জেডের প্রতিনিধি হিসেবে তার সঙ্গী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে রিপাবলিকান ক্যারোলিন লিভিটেরও; তিনি লড়ছেন নিউ হ্যাম্পশায়ারের প্রথম কংগ্রেসনাল ডিস্ট্রিক্টে। জিতলে তিনি মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদে প্রথম আফ্রিকান-কিউবানও হবেন। যদিও সর্বশেষ খবর অনুযায়ী প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্র্যাট ক্রিস পাপাসের তুলনায় অনেকখানি পিছিয়েই আছেন।
মাউরা হেলি : যুক্তরাষ্ট্রে প্রথমবারের মতো সমকামী নারী গভর্নর নির্বাচিত হয়েছেন ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের ডেমোক্রেটিক প্রার্থী মাউরা হিলি। এবারের নির্বাচনে গভর্নর প্রার্থীদের মধ্যে মাত্র দুজন প্রকাশ্যে নিজেদের সমকামী ঘোষণা করেছিলেন। তাদের একজন মাউরা হিলি। দ্বিতীয় নারী হিসেবে ম্যাসাচুসেটসের গভর্নর পদে বসছেন তিনি। এর আগে রিপাবলিকান জেন সুইফট ২০০১ সালে সেখানকার গভর্নর নির্বাচিত হয়েছিলেন।
সারাহ হাকাবি স্যান্ডার্স : আরকানসাস অঙ্গরাজ্যের প্রথম নারী গভর্নর নির্বাচিত হয়েছে সারাহ হাকেবি স্যান্ডার্স। তিনি দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রেস সেক্রেটারি ছিলেন। সারাহ হাকেবি স্যান্ডার্স প্রথম নারী হিসেবে গভর্নর নির্বাচিত হলেও আরকানসাসের গভর্নরের প্রাসাদ তাঁর কাছে অপরিচিত নয়। কারণ তাঁর বাবা মাইক স্যান্ডার্স ১৯৯৬ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত সেখানকার গভর্নর ছিলেন।
নির্বাচনে স্যান্ডার্সের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ডেমোক্রেট প্রার্থী ক্রিস জোনস। রিপাবলিকান অধ্যুষিত আরকানসাসে তিনি জয় পাবেন-এমনটা আগে থেকেই ধারণা করা হচ্ছিল।
আরকানসাসের গভর্নর নির্বাচনে তহবিল সংগ্রহেও রেকর্ড গড়েছেন সারাহ হাকেবি স্যান্ডার্স। তিনি ৯০ লাখ ডলারের একটি তহবিল গড়ে তোলেন। গভর্নর নির্বাচিত হলে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও কট্টর বামপন্থীদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি।
ওয়েস মুর : ডেমোক্র্যাট ওয়েস মুরের বয়স ৪৪। মেরিল্যান্ডের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ গভর্নর হিসাবে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন তিনি। ম্যাসাচুসেটসের ডেভাল প্যাট্রিক এবং ভার্জিনিয়ার ডগলাস ওয়াইল্ডারের পাশাপাশি দেশের ২৪৬ বছরের ইতিহাসে নির্বাচিত তৃতীয় কৃষ্ণাঙ্গ গভর্নর মুর। দারিদ্র্যবিরোধী সংস্থা রবিন হুডের সাবেক প্রধান।
মার্কওয়েন মুলিন : ওকলাহোমা থেকে প্রথম নেটিভ আমেরিকান সিনেটর হিসাবে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন রিপাবলিকান প্রার্থী মার্কওয়েন মুলিন (৩৫)। আসনটি ১৯৮৭ সাল থেকে রিপাবলিকানদের দখলে রয়েছে। চেরোকি জাতির একজন নাগরিক মুলিন প্রথম ২০১২ সালে প্রতিনিধি পরিষদে নির্বাচিত হন এবং কংগ্রেসনাল নেটিভ আমেরিকান ককাসে অন্তর্ভুক্ত হন।
জেমস রোজেনার : ২৬ বছর বয়সি ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জেমস রোজেনার। মার্কিন ইতিহাসে প্রথম প্রকাশ্য হিজড়া পুরুষ হিসাবে যে কোনো রাষ্ট্রীয় আইনসভায় নির্বাচিত হন। এ বছর রেকর্ডসংখ্যক ট্রান্স প্রার্থীদের একজন রোজেনার। তিনি নিজ রাজ্য নিউ হ্যাম্পশায়ারে গর্ভপাতের অধিকার, মহিলাদের জন্য সমান বেতন, সমকামী বিয়ের স্বীকৃতি ও সমকামীদের অধিকার সুরক্ষায় নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন।
ক্যাথি হোকুল : নিউইয়র্কের প্রথম নির্বাচিত মহিলা হিসাবে জয়ী হয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন ডেমোক্রেটিক গভর্নর ক্যাথি হোচুল। তিনি রিপাবলিকান লী জালদীনকে পরাজিত করেন। গত বছরের আগস্টে যৌন হয়রানির অভিযোগে সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্র– কুওমোর পদত্যাগের পর স্থলাভিষিক্ত হয়েছিলেন হোচুল। এবার সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হয়ে পদটিতে পূর্ণ মেয়াদের জন্য লড়াই করেছেন তিনি।
ডেলিয়া রামিরেজ : ইলিনয় অঙ্গরাজ্য থেকে প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন ডেমোক্র্যাট ডালিয়া রমিরেজ (৩৯)। এই অঙ্গরাজ্য থেকে প্রথম লাতিন হিসেবে নির্বাচিত হলেন তিনি। ২০১৮ সালে প্রথম গুয়েতেমালান–আমেরিকান হিসেবে ইলিনয় জেনারেল অ্যাসেম্বলির সদস্য নির্বাচিত হন ডালিয়া রমিরেজ। আবাসন সাশ্রয়ী করা ও গর্ভপাতের অধিকার রক্ষায় সোচ্চার রয়েছেন তিনি।
আইআই/সিএন
চলমান নিউইয়র্ক ফেসবুক পেজ লাইক দিন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন