বৃহস্পতিবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

শিরোনাম

যুক্তরাষ্ট্রে ডিমের উচ্চমূল্য রেস্তোরাঁ ও সাধারণ ভোক্তাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ

রবিবার, ফেব্রুয়ারী ১৬, ২০২৫

প্রিন্ট করুন

রোকেয়া দীপা: যুক্তরাষ্ট্রে সকালের নাশতার প্রয়োজনে রেস্তোরাঁগুলোর চাহিদা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে, সম্প্রতি পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও বার্জ ফ্লু সনাক্তকরণে ডিমের দাম রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে, যা খাদ্যসামগ্রীর বাজারে নতুন চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করছে এবং রেস্তোরাঁ ও সাধারণ ভোক্তাদের জন্য এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

রিভিউ ওয়েবসাইট ইয়ালপ জানিয়েছে, গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে ৬ হাজার ৪২১টি নতুন ব্রেকফাস্ট ও ব্রাঞ্চ রেস্তোরাঁ খোলা হয়েছে, যা ২০১৯ সালের তুলনায় ২৩ শতাংশ বেশি। স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে উৎপাদকরা এই অতিরিক্ত চাহিদার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারলেও বিস্তৃত বার্ড ফ্লু প্রাদুর্ভাবের ফলে খামারগুলোকে এখন পর্যন্ত প্রায় ১৫৯ মিলিয়ন মুরগি, টার্কি ও অন্যান্য পাখি হত্যা করতে বাধ্য হয়েছে এবং শুধুমাত্র ডিসেম্বরের শুরু থেকে ৪৭ মিলিয়নেরও বেশি পাখি নিধন করা হয়েছে। এর ফলে ডিমের সরবরাহ সংকুচিত হয়েছে ও দাম বেড়েছে। এ বছরের জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রে ডিমের গড় মূল্য রেকর্ড ৪ দশমিক ৯৫ ডলার প্রতি ডজনে পৌঁছেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের রেস্তোরাঁগুলোতে সকালের নাশতার চাহিদা ব‍্যাপক। রেস্তোরাঁগুলোতে সবচেয়ে জনপ্রিয় নাশতার অর্ডার হল ব্রেকফাস্ট স্যান্ডউইচ, যেখানে ডিমের চাহিদা বেশ। এছাড়া, মার্কেট রিসার্চ ফার্ম ‘সারকানা’ও জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের রেস্তোরাঁ মেনুর ৭০ শতাংশ ব্রেকফাস্ট স্যান্ডউইচে ডিম থাকে। ‘সারকানা’ আরো জানায়, ২০১৯ সালের পর থেকে সকালের খাবারের জন্য রেস্তোরাঁয় যাওয়া গ্রাহকের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৪ সালে দুপুরের আগের সময়সীমা রেস্তোরাঁয় মোট ভিজিটের সংখ‍্যা ২১ শতাংশ।

ব্রেকফাস্ট, লাঞ্চ পরিবেশন করা ব্রাঞ্চ ‘ফার্ট ওয়াচ’ গত দশকে তাদের শাখার সংখ্যা প্রায় চারগুণ বাড়িয়ে ৫৭০-তে উন্নীত করেছে। ‘এগ আপ গ্রিল’ ২০১৮ সালে মাত্র ২৬টি শাখা নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও এখন এটি ৯টি দক্ষিণী স্টেটে ৯০টি রেস্তোরাঁ পরিচালনা করছে। ফ্লোরিডাভিত্তিক ‘এনাদার ব্রোকেন এগ ক‍্যাফে’ গত বছর তার ১০০তম শাখা উদযাপন করেছে।

ফাস্ট-ফুড চেইনগুলোও সকালের নাশতার মেনুতে নতুন আইটেম যুক্ত করছে। ‘স্টারবাক্স’ ২০১৭ সালে ‘এগ বাইটস’ চালু করেছিল, এখন তাদের ব্রেকফাস্ট মেনুতে ১২টি আলাদা ডিমভিত্তিক আইটেম রাখছে। ‘উইন্ডি’ ২০২০ সালে ব্রেকফাস্ট মেনু পুনরায় চালু করে এবং এখন ১০টি ডিম সংবলিত আইটেম অফার করছে।

‘এগ আপ গ্রিল’-এর সিইও রিকি রিচার্ডসন বলেন, ‘কোভিড-১৯ মহামারির পর ব্রেকফাস্ট রেস্তোরাঁর জনপ্রিয়তা বেড়েছে, কারণ মানুষ সামাজিক সংযোগের জন্য বাইরে বের হতে চেয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘মুদ্রাস্ফীতি খাদ্যের দাম বাড়ালেও গ্রাহকরা ব্রেকফাস্ট ও লাঞ্চকে তুলনামূলক সাশ্রয়ী বাহ্যিক খাবারের বিকল্প হিসেবে দেখছেন।’

কোভিড-১৯ মহামারি ও বার্ড ফ্লুর প্রভাব পড়ার আগে, ‘ইউএসডিএ’ অনুমান করেছিল যে, আমেরিকানরা আরও বেশি করে ডিম খাবে। তবে ২০২৩ সালে জনপ্রতি ডিম খাওয়ার পরিমাণ কমে ২৪৯টিতে নেমে আসে। এছাড়াও, বিভিন্ন প্রবণতা ডিমের বাজারকে প্রভাবিত করেছে। পশু অধিকারের কথা মাথায় রেখে ম্যাকডোনাল্ড’সসহ কিছু প্রতিষ্ঠান ১০০ শতাংশ খাঁচামুক্ত ডিম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা তাদের সরবরাহের উৎস সীমিত করেছে। এর পাশাপাশি, ক্যালিফোর্নিয়া ও কলোরাডোসহ ১০টি স্টেট আইনে নির্দিষ্ট করেছে যে শুধুমাত্র খাঁচামুক্ত পরিবেশে উৎপাদিত ডিমই বিক্রি করা যাবে।

ডিমের বাড়তি মূল‍্য রেস্তোরাঁগুলোকে কঠিন পরিস্থিতিতে ফেলেছে। ‘ইউএসডিএস’-এর তথ্যানুযায়ী, গত সপ্তাহে পাইকারি ডিমের দাম প্রতি ডজন ৭ দশকি ৩৪ ডলারে পৌঁছেছে, যা বছরের শুরুর তুলনায় ৫১ শতাংশ বেশি। পাইকারি দাম খুচরা দামের চেয়ে বেশি হতে পারে। কারণ সুপারমার্কেটগুলো ডিম কম দামে বিক্রি করে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে চায়।

এ নিয়ে ইন্টারন্যাশনাল ফুডসার্ভিস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফিল কাফারাকিস বলেন, ‘কিছু রেস্তোরাঁ, যেমন ওয়াফেল হাউস, ডিমের বাড়তি খরচ সামলাতে অতিরিক্ত চার্জ যোগ করেছে। অন্যরা ডিমের বিকল্প, যেমন ট্যাপিয়োকা স্টার্চ ব্যবহার করতে পারে বা মেনু থেকে কিছু ডিমভিত্তিক খাবার বাদ দিতে পারে।’

ফার্স্ট ওয়াচের প্রেসিডেন্ট ও সিইও ক্রিস টোমাসো বলেন, ‘ডিম তাদের ব্র্যান্ডের মূল অংশ এবং বেশিরভাগ খাবারেই ব্যবহৃত হয়। এখনো তারা পর্যাপ্ত ডিম পেয়ে যাচ্ছে এবং বাড়তি চার্জ নিচ্ছে না। তবে ডিম ছাড়া খাবার, যেমন মাংস ও আলুর পরিমাণ বাড়াচ্ছে।’

‘এগস আপ গ্রিল’-এর রিচার্ডসন বলেন, ‘তিনি সম্প্রতি ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। কিন্তু তারা অতিরিক্ত চার্জ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’

তিনি বলেন, ‘ডিম সব সময় ছিল এবং থাকবে আমেরিকান খাদ্যাভ্যাসের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।’

সকালের নাশতার প্রতি ভোক্তাদের ক্রমবর্ধমান চাহিদা রেস্তোরাঁ ব‍্যবসার জন্য ইতিবাচক হলেও, এটি বর্তমানে ডিমের বাজারে সংকট সৃষ্টি করেছে। বার্ড ফ্লু মহামারির কারণে সরবরাহে বাধা সৃষ্টি হওয়ায় দাম বেড়ে চলেছে। অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই প্রবণতা সাময়িক হলেও নিকট ভবিষ্যতে ডিমের উচ্চমূল্য রেস্তোরাঁ বানিজ‍্য ও সাধারণ ভোক্তাদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রে রেস্তোরাঁ ও অন্যান্য স্থান যেমন মুদির দোকান বা খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে কী পরিমাণ ডিম সরবরাহ করা হচ্ছে, সে সম্পর্কিত নির্দিষ্ট কোনো তথ্য প্রকাশ্যে পাওয়া যায়নি। তবে ‘ইউ্স ফুডস’ রেস্তোরাঁ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এবং যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় শেল এগ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ‘ক‍্যাল-মেইনে ফুডস্’ এ বিষয়ে মন্তব্য করতে ‘দ‍্য এসোশিয়েটেড প্রেস’-এর অনুরোধের সাড়া দেয়নি।

সিএন/আলী

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন