নিজস্ব প্রতিবেদক: যুক্তরাষ্ট্রে কোন কিছুতেই থামছেনা বন্দুক হামলা। প্রতিদিন দেশটিতে প্রাণহানি ঘটছে বন্দুকের গুলিতে। শিশু-বৃদ্ধ কোন বয়সের নাগরিক রেহাই পাচ্ছেনা এই হামলা থেকে। বিদ্যালয়গুলোতেও ঘটছে হামলা। যা দেশটির মানুষকে প্রতিনিয়ত আতঙ্কিত করে রেখেছে। চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত দেশটিতে ৬০৭টি বন্দুক হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে নিহত হয়েছেন ৬৩৭ জন। যা গত বছরের চেয়ে কিছুটা কম হলেও স্বস্তিদায়ক নয় বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
সম্প্রতি মার্কিন গবেষণা সংস্থা গান ভায়োলেন্স আর্কাইভের প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের ২২ নভেম্বর পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে ৬০৭টি বন্দুক হামলায় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন তিন হাজার ১৭৯ জন। এর মধ্যে নিহত হয়েছেন ৬৩৭ জন এবং আহত হয়েছেন আড়াই হাজারের বেশি।বন্দুক হামলায় চলতি বছর প্রাণহানি ঘটেছে ছয় শতাধিক।
পরিসংখ্যান বলছে গত বছর একই সময়ে এ সংখ্যা কিছুটা বেশি ছিল। ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ৬৯০টি বন্দুক হামলার ঘটনা ঘটে। এতে সর্বমোট ৩ হাজার ২৬৭ জন গুলিবিদ্ধ হন। তাদের মধ্যে থেকে ৬৪৫ জন মারা গেছেন।অপরদিকে ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ৬১০টি হামলায় ২ হাজার ৮৭৩ জন গুলিবিদ্ধ হয়। এর মধ্য থেকে নিহত হন ৪৬৩ জন।
বিশ্লেষকদের শঙ্কা, চলতি বছর শেষ হতে এখনো বাকি আরও এক মাস। এই এক মাসে যদি আরও ভয়াবহ কোনো হামলা ঘটে তবে বন্দুক সহিংসতার দিক থেকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বছরের তালিকায় ২০২২ সালের নাম উঠে যাবে।
গান ভায়োলেন্স আর্কাইভ জানায়, বছরের এখন পর্যন্ত মোট দিনের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক হামলার ঘটনা অনেক বেশি। ২০১৯ সাল থেকেই এই প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে। নভেম্বরের মাঝামাঝিতে মাত্র এক সপ্তাহেই যুক্তরাষ্ট্রের সাতটি অঙ্গরাজ্যের বিভিন্ন স্থানে বন্দুক সহিংসতায় ২৪ জন নিহত ও কমপক্ষে ৩৭ জন আহত হয়েছেন।
নভেম্বরের শুরু থেকে ২২ তরিখ পর্যন্ত দেশটিতে অন্তত ৩২টি বন্দুক হামলা হয়েছে। সবগুলো হামলায় মোট ১৭৭ জন গুলিবিদ্ধ এবং নিহত হয়েছেন ৪৩ জন। গত বছরের একই সময়ে ৩৬টি হামলায় ১৬০ জন গুলিবিদ্ধ ও ৩৪ জন নিহত হন।
এদিকে গত এপ্রিলে প্রকাশিত ইউএস সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আইনিভাবে আগ্নেয়াস্ত্র রাখার সুযোগ অনেকটা অবাধ হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের ৩২ কোটি নাগরিকের হাতে রয়েছে ৩৯ কোটি আগ্নেয়াস্ত্র। বিভিন্ন সময়ে এসব আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণের দাবি উঠলেও অস্ত্র উৎপাদক ও ব্যবসায়ীদের চাপে তাতে কোনো কাজ হয়নি। উল্টো করোনা মহামারির মধ্যে বন্দুক সহিংসতা আরও বেড়ে যায়।
আগ্নেয়াস্ত্রের কারণে ২০২০ সালে ১ থেকে ১৯ বছর বয়সী শিশুর মৃত্যু পূর্বের চেয়ে ৩৩.৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছিল। বিগত বছরগুলোতে তরুণ আমেরিকানদের মৃত্যুর প্রধান কারণ ছিল গাড়ি দুর্ঘটনা, এরপর বন্দুক হামলা।
সিডিসির গবেষণা অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে আগ্নেয়াস্ত্রে শিশু-কিশোরদের সার্বিক প্রাণহানির হার ২৯.৫ শতাংশ। গুলিতে মৃত্যুর ঘটনাগুলোর মধ্যে হত্যার পাশাপাশি রয়েছে আত্মহত্যা, ‘অবহেলাজনিত’ ও ‘অনিচ্ছাকৃত’ মৃত্যু। এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতে অ্যানালস অব ইন্টারনাল মেডিসিনে প্রকাশিত পৃথক এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে প্রথমবারের মতো আগ্নেয়াস্ত্র কিনেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ৭৫ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিক, যা জনসংখ্যার ৩ শতাংশের মতো।
আইআই/সিএন
চলমান নিউইয়র্ক ফেসবুক পেজ লাইক দিন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন