আপনার অজান্তেই ফ্রিজ হতে পারে ভয়ংকর বিস্ফোরণের কারণ? ফ্রিজ আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অপরিহার্য অংশ। খাবার সংরক্ষণ, ঠান্ডা পানি কিংবা আইসক্রিম—সবকিছুতেই ফ্রিজের গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু জানেন কি, আপনার অজান্তেই ফ্রিজ হতে পারে ভয়ংকর বিস্ফোরণের কারণ। শুধু কয়েকটি সাধারণ ভুল বা অবহেলা থেকেই ঘটে যেতে পারে মারাত্মক দুর্ঘটনা—যা শুধু ফ্রিজ নয়, পুরো ঘরবাড়ি পর্যন্ত ধ্বংস করতে পারে।
কিন্তু আপনি জানেন কি, ফ্রিজও হতে পারে ভয়াবহ বিপদজনক? হ্যাঁ, ভুল ব্যবহার, ত্রুটিপূর্ণ যন্ত্রাংশ বা অযত্নের কারণে ফ্রিজে বিস্ফোরণ বা আগুন লাগার মতো দুর্ঘটনাও ঘটে যেতে পারে।
সম্প্রতি ফ্রিজ বিস্ফোরণের ঘটনা অনেক সময় সংবাদেও উঠে এসেছে। বিশেষ করে পুরোনো ফ্রিজ বা কম্প্রেসার সমস্যা থাকলে এই ধরনের ঝুঁকি আরও বেশি দেখা দেয়।
কিন্তু বর্তমানে এসি, শর্ট সার্কিটসহ ফ্রিজ বিস্ফোরণের ঘটনা প্রায়ই ঘটে। রেফ্রিজারেটর বিস্ফোরণের পেছনে অনেক কারণ সম্পর্কে জানিয়েছেন ইলেক্ট্রিকাল ইন্জিনিয়ার মনিরুজ্জামান মিন্টু। চলুন সেগুলো জেনে নিই….
কিছু ভুল অভ্যাস ও কারণ যা ফ্রিজে বিস্ফোরণ ডেকে আনতে পারে

১. পুরোনো ফ্রিজ ব্যবহার
অনেকেই ১০-১৫ বছর পুরোনো ফ্রিজ এখনও ব্যবহার করে থাকেন। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যন্ত্রাংশ দুর্বল হয়ে পড়ে, বিশেষ করে কম্প্রেসার। দীর্ঘ সময় ব্যবহার করলে কম্প্রেসারের ওপর চাপ পড়ে এবং তা পুড়ে বা ফেটে গিয়ে বিস্ফোরণের ঝুঁকি তৈরি করে। পুরোনো ফ্রিজের ক্ষেত্রে নিয়মিত সার্ভিসিং না করালে এই ঝুঁকি আরও বাড়ে।
২. অতিরিক্ত জিনিস রাখা
ফ্রিজে খুব বেশি খাবার詫 রেখে দিলে ঠান্ডা বাতাস সঠিকভাবে চলাচল করতে পারে না। এতে ফ্রিজের ভেতরে চাপ তৈরি হয়, এবং যন্ত্রকে বেশি পরিশ্রম করতে হয়। এর ফলে অতিরিক্ত গরম হয়ে শর্ট সার্কিট বা কম্প্রেসার ওভারলোড হয়ে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। একই সঙ্গে বিদ্যুৎ বিলও বেড়ে যায়।
৩. নিম্নমানের প্লাগ বা সকেট ব্যবহার
ফ্রিজের মতো ভারী বৈদ্যুতিক যন্ত্রে নিম্নমানের প্লাগ বা সকেট ব্যবহার করলে তা শর্ট সার্কিটের কারণ হতে পারে। বিশেষ করে যদি ভোল্টেজ ওঠানামা বেশি হয়, তাহলে অবশ্যই স্ট্যাবিলাইজার ব্যবহার করা উচিত। না হলে কম্প্রেসার অতিরিক্ত গরম হয়ে ফেটে যেতে পারে।

৪. ফ্রিজ পরিষ্কার না রাখা
ফ্রিজের ভেতর ও বাইরে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা জরুরি। পেছনের অংশে যদি ধুলাবালি জমে যায়, তা তাপ নির্গমনে বাধা দেয়। এতে কম্প্রেসার অতিরিক্ত গরম হয়ে যেতে পারে। অন্তত ৬ মাস পরপর ফ্রিজ সার্ভিসিং করানো উচিত।
৫. কুলিং কয়েলের গ্যাস লিক
ফ্রিজে ব্যবহৃত কুলিং গ্যাস (রেফ্রিজারেন্ট) যদি লিক করে, তা অত্যন্ত বিপজ্জনক। কারণ সেই গ্যাস যদি আগুন বা ইলেকট্রিক স্পার্কের সংস্পর্শে আসে, তাহলে তা বিস্ফোরণে রূপ নিতে পারে। এ কারণে কখনোই ফ্রিজ ভিজিয়ে পরিষ্কার করা উচিত নয়।
৬. স্পার্ক বা গন্ধ উপেক্ষা করা
আপনার ফ্রিজ থেকে যদি জ্বলন্ত গন্ধ, স্পার্ক, ধোঁয়া বা অস্বাভাবিক শব্দ আসে, তাহলে অবহেলা না করে দ্রুত একজন ইলেকট্রিশিয়ান বা সার্ভিস টেকনিশিয়ানের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। এসব উপসর্গ অনেক সময় বড় দুর্ঘটনার পূর্বাভাস হতে পারে।

৭. ভুল ইনস্টলেশন ও বায়ু চলাচলের অভাব
অনেক সময় ফ্রিজ এমন জায়গায় রাখা হয় যেখানে পেছনের অংশে বায়ু চলাচলের সুযোগ থাকে না। ফলে তাপ আটকে গিয়ে যন্ত্রপাতি গরম হয়ে পড়ে। ফ্রিজ রাখার সময় পেছনে অন্তত ৪-৫ ইঞ্চি ফাঁকা জায়গা রাখা উচিত, যেন হিট এক্সচেঞ্জ ভালোভাবে হয়।
৮. সতর্কতা ও যত্নই নিরাপত্তা
সবশেষে, ফ্রিজ ব্যবহার করলেই বিপদ হবে— এমনটা নয়। বরং নিয়ম মেনে সঠিকভাবে ব্যবহার, নির্ধারিত সময়ে সার্ভিসিং এবং সতর্ক দৃষ্টি থাকলেই আপনি এই গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রটি অনেক বছর নিরাপদে ব্যবহার করতে পারবেন। ফ্রিজ যেমন আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গী, তেমনি অসচেতনতার ফলে এটি হয়ে উঠতে পারে বড় দুর্ঘটনার কারণ। তাই ব্যবহার করবেন সাবধানে, যত্নে ও নিয়ম মেনে।
কীভাবে নিরাপদ থাকবেন?
- নিয়মিত ফ্রিজ পরিষ্কার করুন, বিশেষ করে পেছনের অংশ।
- সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবরাহে স্ট্যাবিলাইজার ব্যবহার করুন।
- মাল্টিপ্লাগে অতিরিক্ত ইলেকট্রনিক ডিভাইস সংযুক্ত করা এড়িয়ে চলুন।
- ফ্রিজে দাহ্য পদার্থ, কাচের বোতল বা গ্যাস ক্যান রাখবেন না।
গ্যাস লিক বা ফ্রিজ থেকে অদ্ভুত গন্ধ পেলে সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করুন ও টেকনিশিয়ান ডাকুন।
একটি ছোট ভুল বা অসাবধানতা আপনার পুরো পরিবারকে বিপদের মুখে ফেলতে পারে। তাই আজই নিজের ফ্রিজটি একবার দেখে নিন, কোথাও বিপদ লুকিয়ে আছে কি না! সচেতনতা থাকলেই রক্ষা পাবে মূল্যবান জীবন ও সম্পদ।
চলমান নিউইয়র্ক ফেসবুক পেজ লাইক দিন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন