কিডনি আমাদের শরীরে অন্যতম একটি প্রধান অঙ্গ। কিডনি একবার বিকল হয়ে গেয়েলে শরীরে অনেক লক্ষন দেখা দেয়। সাধারণত আমরা তখনই চিকিৎসকের কাছে যাই যখন শরীরে কোনো গুরুতর বা তীব্র লক্ষণ দেখা দেয়। কিন্তু শরীর অনেক সময় নীরবে, ধীরে ধীরে গুরুতর রোগের ইঙ্গিত দিতে শুরু করে।
বিশেষ করে কিডনি সমস্যার ক্ষেত্রেও এমনটাই ঘটে। কিডনি হলো আমাদের শরীরের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, যা রক্ত থেকে বিষাক্ত পদার্থ এবং অতিরিক্ত পানি সরিয়ে শরীরকে পরিষ্কার রাখে। যখন কিডনি ঠিকমতো কাজ করে না, তখন শরীরে নানা রকম সমস্যা দেখা দিতে শুরু করে এবং প্রাথমিক প্রভাব অনেক সময়ই পায়ে প্রকাশ পায়।
অনেকে হয়তো পায়ে কিছু অস্বস্তি বা সমস্যা হলে তা পাত্তা দেন না, কিন্তু আসলে এসব ছোটখাটো লক্ষণ আপনার কিডনির স্বাস্থ্য সম্পর্কে গুরুতর বার্তা দিতে পারে। তাই পায়ের কোন কোন লক্ষণ হলে সতর্ক হওয়া উচিত, তা জেনে নেওয়া জরুরি।
কিডনির সমস্যায় পা ফুলে যাওয়া

সকালের দিকে ঘুম থেকে ওঠার পর যদি আপনার পা, গোড়ালি বা পায়ের আঙুল বিশেষভাবে ফুলে থাকে, তাহলে তা সাধারণ ক্লান্তির লক্ষণ নয়। এটি কিডনি সমস্যা থাকার ইঙ্গিত হতে পারে। কারণ কিডনি যখন ঠিকভাবে কাজ করে না, তখন শরীর থেকে অতিরিক্ত সোডিয়াম এবং লবণ বের করতে পারে না। এর ফলে শরীরের বিভিন্ন অংশে বিশেষ করে পায়ে পানি জমে যায়, যার কারণে পা ফুলে যায়।
ফুটে যাওয়া পা অনেক সময় ব্যথা, ভার অনুভব, হাঁটতে অসুবিধার কারণ হতে পারে। এ ধরনের সমস্যা দীর্ঘ সময় থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ নেওয়া উচিত।
পায়ে ঘন ঘন খিঁচুনি

পেশীর খিঁচুনি বা আকস্মিক টান অনেকেই সময় সময় অনুভব করেন। কিন্তু যদি পায়ে খিঁচুনি বারবার এবং কোনও বিশেষ কারণ ছাড়াই হয়, তাহলে এটা খেয়াল রাখা দরকার। কিডনি সমস্যার কারণে শরীরের ইলেক্ট্রোলাইট ব্যালান্স অস্বাভাবিক হয়ে যেতে পারে। বিশেষ করে ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম ইত্যাদির মাত্রা কমে বা বেড়ে পেশীতে টান, খিঁচুনি দেখা দিতে পারে। এই অবস্থায় পেশি অনেক সময় অত্যন্ত সংবেদনশীল হয়ে পড়ে, যা পায়ের বিভিন্ন অংশে অস্বস্তি তৈরি করে।
পায়ের ত্বক শুষ্ক ও চুলকানিযুক্ত হওয়া

কিডনি কাজ কমিয়ে দিলে শরীরে বিষাক্ত পদার্থ জমে যায়। এসব পদার্থ ত্বকের পুষ্টি কমিয়ে দেয় এবং ত্বক শুকনো ও রুক্ষ হয়ে পড়ে। পায়ের ত্বক এই শুষ্কতা ও চুলকানি বেশী অনুভূত হয়, কারণ পায়ের ত্বক তুলনামূলকভাবে অন্যান্য জায়গার থেকে পাতলা ও সংবেদনশীল। যাদের কিডনি সমস্যা আছে, তাদের পায়ে ত্বকের খসখসে ভাব, লালচে ভাব ও চুলকানি ঘনঘন দেখা দেয়।
এছাড়া ত্বকের এ রকম পরিবর্তন অনেক সময় ক্ষুদ্র ক্ষত বা ফাটল তৈরি করতে পারে, যা সংক্রমণের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। তাই এই লক্ষণগুলো উপেক্ষা করা উচিত নয়।
পায়ে ঝিনঝিন বা অসাড়তা
কিডনি সমস্যা শরীরের স্নায়ুতন্ত্রেও প্রভাব ফেলে। কিডনি ভালো না হলে শরীরের কিছু অংশে সঠিকভাবে রক্ত সঞ্চালন ও পুষ্টি পৌঁছায় না, যার ফলে পায়ে ঝিনঝিনানি, অসাড়তা, অবশ ভাব হতে পারে। বিশেষ করে যদি পা দীর্ঘক্ষণ একই অবস্থানে থাকে অথবা রাতে ঘুমের সময় এমন সমস্যা হয়, তাহলে তা কিডনির অস্বাস্থ্য সূচক হতে পারে। পায়ের এমন ঝিনঝিনানি ও অসাড়তা অনেক সময় ব্যক্তির দৈনন্দিন চলাফেরায় বিঘ্ন ঘটায় এবং চলাফেরায় সমস্যা তৈরি করে।
কিডনি সমস্যায় কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন?

যদি উপরে বর্ণিত যেকোনো লক্ষণ ৫ থেকে ৭ দিনের বেশি সময় ধরে একটানা দেখা যায়, তাহলে দেরি না করে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। চিকিৎসক সাধারণত একটি প্রস্রাব পরীক্ষা ও রক্তের মাধ্যমে কিডনির অবস্থা নির্ণয় করতে পারেন। এতে দ্রুত সমস্যা শনাক্ত করে যথাযথ চিকিৎসা শুরু করা সম্ভব হয়।
কিডনি রোগ ধীরে ধীরে অগ্রসর হয় এবং অনেক সময় প্রথম পর্যায়ে কোনো স্পষ্ট লক্ষণ দেখা যায় না। তাই রোগ যখন লক্ষণ প্রকাশ করে, তখন অনেক সময় ইতোমধ্যে বেশ ক্ষতি হয়ে গেছে। এজন্য শরীরের ছোট ছোট সংকেতগুলোকে গুরুত্ব দেওয়া এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো গুরুত্বপূর্ণ।
কিডনির সুরক্ষায় করণীয়
নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করুন, অতিরিক্ত লবণ ও প্রসেসড খাবার এড়িয়ে চলুন, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন ও নিয়মিত হাঁটাচলা বা ব্যায়াম করুন, ধূমপান ও মাদক সেবন থেকে বিরত থাকুন, রক্তচাপ ও রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়মিত পরীক্ষা করান, কোনো ধরনের ফার্মেসি ঔষধ স্বেচ্ছায় নেওয়া থেকে বিরত থাকুন।
সুতরাং পায়ের যেকোনো অস্বাভাবিক পরিবর্তনকে নাকচ করবেন না। সময়মতো চিকিৎসা নিলে কিডনি রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় এবং জীবনযাত্রা অনেকটাই স্বাভাবিক রাখা সম্ভব। নিজের ও প্রিয়জনের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন থাকাই জীবনের সবচেয়ে বড় সম্পদ।
চলমান নিউইয়র্ক ফেসবুক পেজ লাইক দিন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন