নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে প্রভাষক পদে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ঘোষিত ফলাফলের শর্ত পূরণ না করেই ডাক পেয়েছেন এক প্রার্থী। মিজানুর রহমান নামের ওই প্রার্থী একটি রাজনৈতিক দলের সাবেক নেতা বলে জানা গেছে।
সোমবার অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় নিয়োগ বিধি লঙ্ঘন করে মিজানুর রহমানকে শিক্ষক বানানোর সমস্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বলে আভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে। বিষয়টি জানাজানি হলে বিশ্ববিদ্যালয়েজুড়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা।
জানা গেছে, ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের প্রার্থীর মিজানুর রহমান দাখিল (এসএসসি) ও আলিম(এইচএসসি) রেজাল্ট যথাক্রমে ৩ দশমিক ৬৭ ও ৩ দশমিক ৫৮। অনার্স ও মাস্টার্স রেজাল্ট যথাক্রমে ৩ দশমিক ৪৫ ও ৩ দশমিক ৮৫।
২০১৯ সালের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির শর্ত অনুযায়ী, এ প্রার্থী নিয়োগের অযোগ্য। কারণ এই বিজ্ঞপ্তির অন্যতম একটি শর্ত ছিল এসএসসি অথবা এইচএসসি বা সমমান পরীক্ষায় ন্যূনতম কোনো একটিতে ৪. ০০(৫.০০ এর মধ্যে) থাকতে হবে। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির শর্ত অনুযায়ী যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও এ প্রার্থী দরখাস্ত জমা দেন। তবে প্ল্যানিং কমিটি যাচাই-বাছাই করে তার দরখাস্ত অযোগ্য বলে সুপারিশ করেন।
এরপর ২০২৫ সালে আবারও যখন ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে প্রভাষক পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে অনার্স ও মাস্টার্স পরীক্ষায় নূন্যতম ৩ দশমিক ৫ শর্ত রাখা হয়। এবারও এই প্রার্থী নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির শর্ত পূরণ না হওয়ায় অযোগ্য হয় বলে প্ল্যানিং কমিটি সুপারিশ করেননি। তার অনার্সের রেজাল্ট ৩ দশমিক ৪৫। যেটি নিয়োগ বিধি অনুযায়ী শর্ত পূরণ হয়নি।
দুই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির অনুয়ায়ী, মিজানুর রহমান প্ল্যানিং কমিটির সুপারিশের আলোকে অযোগ্য বলে বিবেচিত হয়। কিন্তু অলৌকিক কারণে ওই প্রার্থীকে মৌখিক পরীক্ষার আগের দিন চলতি বছরের ২১ জুলাই সন্ধ্যায় অবৈধভাবে ভাইভা কার্ড দেওয়া হয়। পরের দিন ২২ জুলাই সকাল ১০টায় লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এমন পরিস্থিতিতে প্রার্থীকে অবৈধভাবে ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের শিক্ষক নিয়োগে সুপারিশ করার শঙ্কা রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা জানান, বর্তমান প্রশাসন একজন অযোগ্য প্রার্থীকে অবৈধভাবে ভাইভা কার্ড সরবরাহ দিয়েছে। যেটি গুরুতর অপরাধ। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি তাকে নিয়োগ দেয় তাহলে ২৪ শের জুলাই শহীদের রক্তের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করবে।
অভিযোগ রয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে অনার্স ও মাস্টার্স পরীক্ষায় প্রথম স্থান অর্জন করা অনেক যোগ্য প্রার্থীকে লিখিত পরীক্ষা অকৃতকার্য বলে ফলাফল দেওয়া হয়েছে। অনেক যোগ্য প্রার্থীকে বাদ দিয়ে একটি বিশেষ রাজনৈতিক পরিচয়ধারী গোষ্ঠীকে নিয়োগের ভাইভা বোর্ডে সুযোগ দেওয়া হয়েছে। তাই একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের প্রার্থীদেরকে শিক্ষক হিসেবে সুপারিশের শতভাগ আশঙ্কা রয়েছে। লিখিত পরীক্ষা থেকে বাদ দেওয়া অনেক প্রার্থী প্রহসনের নিয়োগ পরীক্ষা এবং একটি রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তি করা প্রশাসনের শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডের সুপারিশকৃত নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিলের জোর দাবি জানায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সিনিয়র অধ্যাপক বলেন, মিজানুর রহমান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের ২০০৬-২০০৭ সেশনের শিক্ষার্থী। তিনি এমফিল করেছেন রাবি ফারসি বিভাগের শিক্ষক ড. মো. কামাল উদ্দিনের অধীনে। যিনি জামায়াতে ইসলামীর একজন শীর্ষ নেতা। নিয়োগ বিধির শর্ত পুরণ না হওয়ার কারণে মিজান প্রথমে ভাইবা কার্ড পাননি। কিন্তু আগের দিন সন্ধ্যায় অনৈতিকভাবে মিজানকে ভাইবা কার্ড দেয়।
নিয়োগের শর্ত পূরণ না হওয়ার কারণে আব্দুর রউফ সালাফী নামে একজন আবেদনকারীর (যার রেজাল্ট ৩ দশমিক ৪২) ভাইবা কার্ড পাননি। ৩ দশমিক ৫ এর নিচে রেজাল্টের কারণে অন্যরা ভাইবা কার্ড না পেলেও বেআইনিভাবে মিজানকে সুযোগ দেয়া হয় এবং তাকে সিলেক্ট করা হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে। আমরা জেনেছি আগামীকাল সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভা রয়েছে সেখানে যেন এমন অন্যায় কাজকে প্রশ্রয় না দেয়।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মঈনুদ্দিন বলেন, এ ধরনের কোন ব্যক্তিকে নিয়োগ দেওয়া হবে না। যাদের নিয়োগ দেওয়া হবে তারা সবাই নিয়োগ বিধি মেনে, নিয়োগের সমস্ত শর্ত পূরণ করে এসেছেন।
চলমান নিউইয়র্ক ফেসবুক পেজ লাইক দিন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন