নিজস্ব প্রতিবেদক: জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার মদদ, আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের চাপে নিয়োগ, আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন হলুদ দলের সক্রিয় সদস্য ও ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকাসহ নানা অভিযোগ রয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ফারজানা ইয়াসমিনের বিরুদ্ধে। এবার তার পদোন্নতি নিয়ে শুরু হয়েছে নতুন বিতর্ক।
এরআগে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড.শিরীণ আখতারের শেষ সময়ে বির্তকিত এই আর্টিকেলের ভিক্তিতে সহযোগী অধ্যাপক পদে পদন্নোতি পাওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন তিনি। তখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক আইন অনুষদের ডিন ও ইউজিসি সদস্য প্রফেসর ড.বিশ্বজিৎ চন্দ আপনার পদন্নোতি বোর্ড বিশেষজ্ঞ সদস্য হিসেবে উপস্থিত হয়ে শেখ মুজিবকে নিয়ে লেখা গবেষণা প্রবন্ধটিকে প্রেডেটরি (জাল) টাকার বিনিময়ে ছাপানো হিসিবে চিন্হিত করেন এবং ফলস্বরূপ ফারজানা ইয়াছমিনের পদন্নোতি বাতিল করেন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, তিনি সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির জন্য কয়েকটি গবেষণা জমা দিয়েছেন এর মধ্যে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রের ভিত্তিতে গত ২৪ জুলাই সিন্ডিকেট সভায় সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির অপেক্ষায় ছিলেন। গবেষণাটি নিয়ে পেশাগত ও ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ ওঠে একাধিক প্রশ্ন। শুরু গয় নানামুখী আলোচনা-সমালোচনা।
‘The Legal Philosophies of Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman: As Articulated in the Constitution of Bangladesh’ শিরোনামের এই গবেষণাপত্রটি ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে IOSR Journal of Humanities and Social Science-এ প্রকাশিত হয়।
এতে ফারজানা ইয়াসমিন দাবি করেন যে, বাংলাদেশের সংবিধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আইন দর্শনের প্রতিফলন, এবং তিনি এককভাবে এটি তৈরি করেন। অথচ বিশেষজ্ঞদের মতে, শেখ মুজিবের তেমন কোনো সুসংগঠিত “আইন দর্শন” ছিল না। এই দাবিকে অনেকে মনগড়া ও একপাক্ষিক।
এছাড়া সংবিধান প্রণয়নের জন্য ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে আলাদা কমিটি গঠন করে দীর্ঘ সময়ে বাহাত্তরের সংবিধান প্রণয়ন করা হয়। এই সংবিধানের কৃতিত্ব কোনো একক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের উল্লেখ করা ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তের সাথে বেইমানির শামিল।
এছাড়াও, গবেষণায় বাংলাদেশের সংবিধানকে খ্রিস্টানদের ধর্মীয় প্রতীক “হলি গ্রিল”-এর সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে, যা খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের অনুভূতিতে আঘাত হানতে পারে বলে অভিযোগ উঠেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সিনিয়র অধ্যাপক অভিযোগ করেন, এই গবেষণাটি পুরোপুরি ভুয়া ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। রাজনৈতিক চাপ ও প্রভাবের ফলেই ফারজানা ইয়াসমিন নিয়োগ ও পদোন্নতির সুবিধা পাচ্ছেন।
তিনি আরও দাবি করেন, ফারজানা ইয়াসমিন চবি ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এমএ খালেদ চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ। এছাড়া, আওয়ামী লীগ নেতা আজম নাছির ও এমএ সালামের প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপে তৎকালীন উপাচার্য আনোয়ারুল আজিম আরিফ নিয়োগ দিতে বাধ্য হন, যদিও প্রার্থী নিয়োগ শর্ত পূরণ করতে পারেননি।
জানা গেছে, গত ৫ মে ফারজানা ইয়াসমিনের সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির জন্য বোর্ড বসে এবং সিন্ডিকেটে অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করা হয়। কিন্তু গবেষণার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন থাকায় সংশ্লিষ্ট মহলে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ্যতা নয়, রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় নিয়োগ ও পদোন্নতির এই ঘটনা আবারও উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থায় গত ১৬ বছরের দলীয় হস্তক্ষেপের নগ্ন চিত্র উন্মোচন করলো।
এছাড়াও তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামী পন্থী শিক্ষককের সংগঠন হলুদ দলের স্টিয়ারিং কমিটির সক্রিয় সদস্য। জুলাই আগস্টের আন্দোলনে ছাত্রলীগ কর্তৃক শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রত্যক্ষ মদদের অভিযোগ রয়েছে ফারজানার বিরুদ্ধে।
ফারজানা ইয়াছমিন ২০১৩ সালের ২ নভেম্বর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে যোগদান করেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এম এ খালেদ চৌধুরীর বান্ধবী ছিলেন ফারজানা ইয়াছমিন। যার কারণে ফারজানার নিয়োগে জোর তদবির করেন খালেদ। সে সময় ফারজানার চেয়ে যোগ্য প্রার্থী থাকার পরেও তাদের নিয়োগ দিতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তাকে নিয়োগ দিতে গিয়ে দুইবার নিয়োগ বোর্ড স্থগিত করে দেয় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। পরে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ সালামের জোর তদবিরে ফারজানা ইয়াছমিনকে নিয়োগ দিতে বাধ্য হয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। নিয়োগের পর থেকে তিনি আইন অনুষদে ছাত্রলীগ নেত্রী হিসেবে প্রসিদ্ধি লাভ করেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বয়োজ্যেষ্ঠ অধ্যাপকরা বলেন, গবেষণার মূল উদ্দেশ্য হলো নবতর জ্ঞানের সৃষ্টি ও শাখা প্রশাখা সমৃদ্ধ করা। কিন্তু আওয়ামী লীগের আমলে শেখ মুজিবুর রহমানকে অতিরিক্ত তৈলমর্দন করতে দলীয় দৃষ্টি ভঙ্গির প্রতিফল ঘটিয়েছেন বেশি। সেখানে অপতত্ত্বের বিস্তার লাভ করেছে বেশি। এসব তথ্য জনগণকে সচেতন করার চেয়ে বিভ্রান্ত করেছে বেশি।
এ বিষয়ে জানতে চাওয়ার জন্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের সহকারী অধ্যাপক ফারজানা ইয়াছমিন বলেন, আমি এসোসিয়েট প্রফেসরের জন্য দুইবার এপ্লাই করেছি। প্রথমবার আমার প্রমোশন হয়নি। পরেরবার আমি এই লিখাটি জমা দেইনি। এইটা বাদ দিয়ে আরো ৪টি লিখা জমা দিয়ে প্রমোশনের জন্য এপ্লাই করেছি। আমি আর্টিকেলটি ব্যবহার করিনি।
চলমান নিউইয়র্ক ফেসবুক পেজ লাইক দিন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন