অ আ আবীর আকাশ, লক্ষ্মীপুর: করোনার প্রাদুর্ভাবের মধ্যে লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে বেড়েছে ডায়রিয়ার প্রকোপ। গত তিন দিনে প্রায় দেড় শতাধিক মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন৷ এছাড়া চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন দুই জন। এই নিয়ে উপজেলা জুড়ে সৃষ্টি হয়েছে ভীতিকর পরিস্থিতি। পৌরসভার সাপ্লাইকৃত পানি পান করে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার থেকে এখনো পর্যন্ত প্রায় দেড় শতাধিক রোগী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। রোগীরা প্রাথমিকভাবে রায়পুর সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। তবে পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় পরে মতলব ডায়রিয়া হাসপাতালে ভর্তি হোন অনেকে। আক্রান্ত বেশিরভাগই কিশোর ও বয়স্ক।
এইদিকে শুক্রবার রাতে ঢাকায় এক ব্যবসায়ী ও শনিবার সকালে রায়পুরের একটি হাসপাতালে এক বৃদ্ধাসহ অন্তত দুজনের মৃত্যু হয়েছে। ডায়রিয়ায় মৃত ব্যাক্তিরা হলেন, পৌরসভার দেনায়েতপুর গ্রামের বাসিন্দা ইভান বেডিংয়ের মালিক ব্যবসায়ী জাফর আহাম্মদ (৬৫)। এছাড়া অপরজন পৌরসভার ধানহাটা এলাকার সোলায়মান মিয়ার স্ত্রী নুরজাহান বেগম (৬৪)। দুই পরিবারের আরো অনেকেই ডায়রিয়ায় আক্রান্ত।
মৃত জাফরের ছেলে তানভির আহাম্মদ ইভানের জানান, মঙ্গলবার সকালে তার বাবা পৌরসভার সাপ্লাইকৃত পানি পান করার পর ডায়রিয়া শুরু হয়। নিরুপায় হয়ে রায়পুর সরকারি হাসপাতাল, চাঁদপুরের মতলবের পর ঢাকা কলেরা হাসপাতালে এনে ভর্তি করাই। একপর্যায়ে কিডনিতে সমস্যা দেখা দেয়ায় তিনি মারা যান। এখন একই অবস্থায় মা ও ছোট ভাই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
শোকাহত ব্যবসায়ী সোলাইমান মিয়া বলেন, ডায়রিয়া আমার স্ত্রী মারা গেছেন। মেয়ে ও নাতিও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আরো কয়েকজন মারা গেছেন বলেন আমরা খবর পেয়েছি।
ওষুধ ও শয্যা সংকটে হাসপাতালগুলো: এইদিকে প্রতিদিন হাসপাতালে মাত্রাতিরিক্ত রোগী ভর্তি হওয়ায় ওষুধ ও শয্যা সংকটে পড়েছে হাসপাতালগুলো।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি ডায়রিয়ার রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। প্রতিদিন অসংখ্য রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। ধীরে ধীরে ডায়রিয়া পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। শুক্রবার থেকে এ পর্যন্ত রায়পুরের ৫০ শয্যা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি ও চিকিৎসা সেবা নিয়েছেন এমন রোগীর সংখ্যা প্রায় ১০০ জনেরও মতো। আক্রান্ত সকল রোগীই জরুরী বিভাগের বলে ডাক্তারা জানান।
হাসপাতালের জরুরী বিভাগের ডাক্তার শামিমা নাসরিন জানান, গর্ভবতী নারী ও শিশুর জন্য ১০ শষ্যা এবং পুরুষ ও মহিলাদের শয্যা সংখ্যা ২০টি হলেও প্রতিনিয়ত রোগী ভর্তি হচ্ছেন ৩০ থেকে ৪০ জন। বৃহস্পতিবার রাতে ২৫ ও শুক্রবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ৩২ ও শনিবার সকালে ৫ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। এখন পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি আছেন ১৫ জন। তাই বাধ্য হয়ে শয্যা সংকটের কারণে রোগীদেরকে চাঁদপুরের মতলব ডায়রিয়া হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।
এই ওয়ার্ডের সেবিকা রুমা ও বিলকিস আক্তার জানান, রোগীর চিকিৎসায় পর্যাপ্ত নার্স নিয়োজিত থাকলেও পরিস্কার করার মত বয় নাই। এতে ডায়রিয়া রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খেতে হয়।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জাকির হোসেন জানান, ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীদের দ্রুত হাসপাতাল নেওয়া ও আইভি স্যালাইন দেওয়া প্রয়োজন। সঠিক সময়ে রোগীকে হাসপাতালে এনে চিকিৎসা সেবা দিলে ডায়রিয়ার হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায়। গত তিনদিন পৌরসভার লোকজনই বেশি ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি করা এবং অন্য হাসপাতালেও পাঠানো হয়। বিশুদ্ধ পানি ও স্বাস্থ্য সচেতনতার অভাব এবং তীব্র ঠান্ডায় মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন। শুনেছি দুই/তিন জন ব্যাক্তি ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।
রায়পুর পৌরসভার মেয়র গিয়াস উদ্দিন রুবেল ভাট বলেন, পৌরসভার পানি সবসময় পরিস্কার ও পরিচ্ছন্ন থাকে। বিষাক্ত পানি থাকার বিষয়টি মিথ্যা। একটি চক্র বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন।। ডায়রিয়া রোগীদের বিষয়ে ডাক্তার (টিএইচও) সাথে কথা বলেছি। সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। ডায়রিয়ায়মারা যাওয়ার সংবাদ আমার জানা নাই।
আইআই /সিএন
চলমান নিউইয়র্ক ফেসবুক পেজ লাইক দিন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন