উত্তর আমেরিকা ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসে পাস হওয়া ‘ওয়ান বিগ বিউটিফুল বিল আইন’ অনুযায়ী আগামী ১০ বছরে মেডিকেইড খাতে প্রায় ৭৯৩ বিলিয়ন ডলার ব্যয় কমানো হতে পারে। যার একটি বড় অংশ স্টেট-ডিরেকটেড পেমেন্ট বা এসডিপি সীমিত করার মাধ্যমে বাস্তবায়ন হবে।
কাইজার ফ্যামিলি ফাউন্ডেশনের (কেএফএফ) বিশ্লেষণ অনুযায়ী, এই বিল কার্যকর হলে ২৯টি রাজ্যে হাসপাতাল ও নার্সিং হোমে অর্থপ্রদানের পরিমাণ কমে যেতে পারে। যা রোগীসেবার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
জানা গেছে, মেডিকেইডের সুবিধাভোগীদের মধ্যে প্রায় ৭৫ শতাংশ ম্যানেজড কেয়ার অর্গানাইজেশনের (এমসিও) অধীনে চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করে। সাধারণত, রাজ্যগুলো এমসিও কীভাবে সেবা প্রদানকারীদের পেমেন্ট দেবে তা নির্ধারণ করতে পারে না। তবে বিশেষ অনুমতির ভিত্তিতে এসডিপি ব্যবস্থার মাধ্যমে কিছু পেমেন্ট নির্দেশ করতে পারে। এসব এসডিপি রোগীর জন্য উন্নত সেবা ও স্বাস্থ্যসেবায় প্রবেশাধিকারের নিশ্চয়তা দেয়ার জন্য তৈরি করা হয়।
তবে নতুন রিকনসিলিয়েশন বিলে বলা হয়েছে, মেডিকেইড সম্প্রসারিত রাজ্যগুলোর জন্য এসডিপি সর্বোচ্চ ১০০ শতাংশ মেডিকেয়ার রেট এবং অ-সম্প্রসারিত রাজ্যগুলোর জন্য ১১০ শতাংশ মেডিকেয়ার রেটের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে। অথচ বর্তমানে বহু রাজ্য গড় বেসরকারি বীমা হারের ভিত্তিতে এসডিপি প্রদান করে। যা মেডিকেয়ার রেটের চেয়েও অনেক বেশি।
এর পাশাপাশি, সিনেট ফাইন্যান্স কমিটির খসড়া অনুযায়ী, বিদ্যমান এসডিপিগুলোকেও প্রতি বছর ১০ শতাংশ করে কমিয়ে আনা হবে নতুন নির্ধারিত সীমার মধ্যে। এতে করে হাসপাতাল ও নার্সিং হোমগুলোর আয় উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে এবং সেবার পরিমাণ ও মানে প্রভাব ফেলবে।
কেএফএফ’র তথ্যে বলা হয়েছে, এই পরিবর্তনের ফলে অনেক হাসপাতাল ও নার্সিং ফ্যাসিলিটি তাদের সেবার পরিসর সীমিত করতে পারে। এমনকি কিছু প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ারও ঝুঁকিতে পড়তে পারে। বিশেষ করে গ্রামীণ হাসপাতাল ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীসেবা নির্ভর প্রতিষ্ঠানগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, প্রস্তাবিত আইনটি সেবা প্রদানকারী ট্যাক্স (প্রোভাইডার ট্যাক্স) সীমিত করার কথাও বলছে। যেটা অনেক রাজ্যে এসডিপির অর্থায়নের একটি মূল উৎস। এই ট্যাক্স সীমাবদ্ধ হলে এমন রাজ্যগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হবে যেগুলোর এসডিপি বর্তমানে সীমার নিচে রয়েছে।
কেএফএফ’র বিশ্লেষণ বলছে, ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারির পর শুরু হওয়া এসডিপি অনুসন্ধানে দেখা যায়—৪২টি রাজ্যের মধ্যে ৩৬টিতে এসডিপি বিদ্যমান। ২৯টি রাজ্য প্রস্তাবিত সীমার চেয়ে বেশি হারে অর্থপ্রদান করছে। এছাড়া নর্থ ক্যারোলিনা ও উইসকনসিন পর্যবেক্ষণের আওতাভুক্ত। তবে তাদের প্রাক-অনুমোদন নথিতে পর্যাপ্ত তথ্য না থাকায় সুনির্দিষ্ট ক্ষতির মাত্রা নির্ধারণ করা যায়নি।
সার্বিকভাবে, এই বিল কার্যকর হলে তা মেডিকেইড সুবিধাভোগী দরিদ্র জনগণের সেবা গ্রহণে বাধা, হাসপাতালগুলোর আর্থিক সংকট এবং চিকিৎসা সেবার মানের অবনতি ঘটাতে পারে—এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছে স্বাস্থ্যনীতি বিশ্লেষকরা।
এদিকে বিলটি কার্যকর হলে নিউইয়র্ক রাজ্যের ক্ষতির পরিমাণ হতে পারে প্রায় ৭০ বিলিয়ন। যা রাজ্যের জন্য বড় আর্থিক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে কাইজার ফ্যামিলি ফাউন্ডেশন সতর্ক করেছে। নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাসোসিয়েশন অব কাউন্টিজ জানিয়েছে, রাজ্যের পক্ষে এই পরিমাণ অর্থ ক্ষতিপূরণ করা অসম্ভব, যদি না রাজ্য ও জেলা পর্যায়ে কর বাড়ানো হয়।
অপরদিকে, সিডিপেপের অনেক অর্থনৈতিক মধ্যস্থতাকারীর পরিবর্তে একক প্রশাসক পিপিএল নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্ক চলছে। সমালোচকরা বলছেন, এই পরিবর্তন ভোক্তা ও সহায়কদের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করছে। তবে নিউইয়র্কের স্বাস্থ্য বিভাগ দাবি করেছে, পুরনো ব্যবস্থায় বর্জ্য, প্রতারণা ও অপব্যবহার বন্ধ করে রাজ্য ঘরোয়া যত্ন সুরক্ষিত রেখেছে এবং আর্থিক সংকট থেকে বাঁচিয়েছে।
নিউইয়র্ক সিনেটের স্বাস্থ্য কমিটির চেয়ারম্যান সেনেটর গুস্তাভো রিভেরা ক্যাপিটাল টুনাইটকে এই বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলেছেন। তিনি আগামী ৯ জুলাই সিডিপিএপি নিয়ে একটি শোনানি করার পরিকল্পনা করছেন।
চলমান নিউইয়র্ক ফেসবুক পেজ লাইক দিন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন