মার্কিন ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ ৩৬ দিনের সরকারি অচলাবস্থার জেরে আকাশপথে বড় ধরনের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। এবার বিমান চলাচলে বড় ধরনের সীমাবদ্ধতা আরোপের ঘোষণা দিয়েছে দেশটির প্রশাসন।
শুক্রবার (৭ নভেম্বর) থেকেই ৪০টি প্রধান বিমানবন্দরে ফ্লাইট ১০ শতাংশ কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। কর্মী সংকটে নিরাপত্তা ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ায় এই পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছে ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বা এফএএ।
এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম দফার শাসনামলে ৩৫ দিনের জন্য সকল সরকারি কার্যক্রম বন্ধ ছিল। সেই রেকর্ড ভেঙে এই দফায় ৩৬তম দিনে গড়ালো কেন্দ্রীয় সরকারের শাটডাউন।
বেতন ছাড়াই কাজ করে যাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের ১৩ হাজার এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার এবং ৫০ হাজার নিরাপত্তা কর্মকর্তা। এতে দুর্বল হয়ে পড়েছে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বাড়ছে ফ্লাইট বিলম্ব ও বাতিলের হার।
উদ্ভুত পরিস্থিতি সামলাতে শুক্রবার থেকে ৪০টি বড় বিমানবন্দরে ফ্লাইট ১০ শতাংশ কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মার্কিন পরিবহণমন্ত্রী শন ডাফি।
বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের পরিবহণমন্ত্রী জানান, দেশের ৪০টি বড় বিমানবন্দরে ১০ শতাংশ ফ্লাইট কমানোর নির্দেশ দেওয়া হবে। তিনি বলেন, ‘বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রণব্যবস্থার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ থেকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এমন পরিস্থিতির পরিবর্তন সম্ভব, যদি ডেমোক্র্যাটরা পুনরায় সরকার চালু করতে রাজি হন।’
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকারি অচলাবস্থা টানা ৩৬ দিন পার করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এটিই সবচেয়ে দীর্ঘ। এর আগে ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে— ২০১৮ সালের শেষ দিকে শুরু হয়ে ২০১৯ সালের শুরুর দিক পর্যন্ত টানা ৩৪ দিন শাটডাউন স্থায়ী ছিল।
ডাফির ঘোষণার পরপরই এয়ারলাইনগুলো ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে ফ্লাইট সময়সূচি পরিবর্তনের কাজে নেমে পড়ে। যাত্রীরা হেল্পলাইনে ফোন করে টিকিট বাতিল বা পরিবর্তন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করতে থাকেন।
ফেডারেল অ্যাভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ) জানিয়েছে, ফ্লাইট কমানো ধাপে ধাপে শুরু হবে—প্রথমে ৪ শতাংশ, শনিবার ৫ শতাংশ, রোববার ৬ শতাংশ এবং আগামী সপ্তাহে এটি ১০ শতাংশে পৌঁছাবে। তবে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটগুলো এই কাটছাঁটের বাইরে থাকবে।
এফএএ প্রশাসক ব্রায়ান বেডফোর্ড বলেন, ‘যখন আমরা দেখি ৪০টি বড় শহরের বিমান চলাচলে চাপ তৈরি হচ্ছে, তখন সেটি উপেক্ষা করা যায় না। আমরা এখনই পদক্ষেপ নিচ্ছি, যেন পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আগেই নিয়ন্ত্রণে আনা যায়।’
তবে সরকার বিমানবন্দরগুলোর নাম প্রকাশ করেনি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটন ডিসি, শিকাগো, আটলান্টা, লস অ্যাঞ্জেলেস, ডালাসসহ দেশের বড় ও ব্যস্ত ৩০টি বিমানবন্দর এর আওতায় পড়বে। এতে প্রায় ১ হাজার ৮০০ ফ্লাইট ও ২ লাখ ৬৮ হাজার আসন কমে যাবে বলে জানিয়েছে বিমান বিশ্লেষণ সংস্থা সিরিয়াম।
যুক্তরাষ্ট্রে অচলাবস্থা শুরু হওয়ার পর থেকে আকাশপথে লক্ষাধিক ফ্লাইট বিলম্বিত হয়েছে। ইতোমধ্যে ৩২ লাখের বেশি যাত্রী বিমান নিয়ন্ত্রণ-সংকটে ভুগেছেন বলে জানিয়েছে বিমান সংস্থাগুলো।
পরিবহণমন্ত্রী শন ডাফি বলেন, ‘আমাদের প্রধান দায়িত্ব, নিরাপদ আকাশসীমা নিশ্চিত করা। কঠিন সিদ্ধান্ত হলেও তা নিতে হবে।’
এফএএ সূত্রে জানা গেছে, সংস্থাটিতে বর্তমানে ৩ হাজার ৫০০ জন এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলারের ঘাটতি রয়েছে। অনেকে বাধ্যতামূলক অতিরিক্ত সময় ও ছয় দিন কাজ করছেন। শাটডাউন শুরু হওয়ার আগে থেকে এই সংকট ছিল।
ইউনাইটেড এয়ারলাইনসের প্রধান নির্বাহী স্কট কারবি বলেন, আন্তর্জাতিক ও হাব-টু-হাব রুটের ফ্লাইট স্বাভাবিক থাকবে, তবে দেশীয় ও আঞ্চলিক রুটে কাটছাঁট করা হবে। কোনো যাত্রী এ সময় ভ্রমণ করতে না চাইলে বা ফ্লাইট বাতিল না হলে তিনি সম্পূর্ণ অর্থ ফেরত পাবেন।
আমেরিকান এয়ারলাইনস জানিয়েছে, তাদের যাত্রীদের ওপর প্রভাব খুব সীমিত থাকবে।
সাউথওয়েস্ট এয়ারলাইনস যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় দেশীয় বিমান সংস্থা। এর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা কাটছাঁটের প্রভাব বিশ্লেষণ করছে এবং দ্রুত যাত্রীদের বিষয়টি অবহিত করবে।
ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট ইউনিয়ন ‘অ্যাসোসিয়েশন অব ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্টস— সিডব্লিউএ’ এই শাটডাউনকে ‘মার্কিনিদের ওপর নিষ্ঠুর আঘাত’ বলে আখ্যা দিয়েছে। সংগঠনটির সভাপতি সারা নেলসন বলেন, ‘ফেডারেল কর্মীদের বেতন দেওয়া অথবা স্বাস্থ্যসেবা রক্ষা— এই দুটির মধ্যে কোনো একটি বেছে নেওয়ার প্রশ্নই আসে না। এই দুই সংকট যারা তৈরি করেছেন, তারাই এটা সমাধান করতে পারেন।
শাটডাউনের প্রভাবে যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি কর্মকাণ্ড কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে। কারণ, রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটরা কংগ্রেসে ফেডারেল সরকারের ব্যয় বরাদ্দ নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছে। ডেমোক্র্যাটরা বলছেন, স্বাস্থ্যবিমা ভর্তুকি না বাড়ানো পর্যন্ত তারা কোনো বিল অনুমোদন করবেন না। এদিকে রিপাবলিকানরা সেটি প্রত্যাখ্যান করেছেন।
এদিকে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রিপাবলিকানরা ডেমোক্র্যাটদের ওপর চাপ বাড়াতে এখন জনজীবনে অচলাবস্থার প্রভাব আরও দৃশ্যমান করার চেষ্টা করছেন।



চলমান নিউইয়র্ক ফেসবুক পেজ লাইক দিন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন