শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

শান্তির খোঁজে লোকালয় ছেড়ে গহিন বনে- মা, খালা ও কিশোরের করুণ পরিণতি

বৃহস্পতিবার, জুলাই ২৭, ২০২৩

প্রিন্ট করুন

নিজস্ব প্রতিবেদক: মানব সমাজে বসবাস করে হাঁপিয়ে উঠেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো অঙ্গরাজ্যের বাসিন্দা রেবেকা ভ্যান্স। তাই, গেল বছরের জুলাইয়ে কিশোর বয়সী ছেলে ও বোনকে নিয়ে চলে গিয়েছিলেন কলোরাডোর দুর্গম রকি মাউন্টেন অঞ্চলে। ভেবেছিলেন, মানুষের সমাজ থেকে একেবারে বিচ্ছিন্ন হয়ে প্রকৃতির মাঝে পুরো জীবন কাটিয়ে দেবেন তারা।

গেল বছরের গ্রীষ্মে চিন্তাটি মাথায় আসা মাত্রই নিজের পরিকল্পনার কথা পরিবারকে জানিয়েছিলেন রেবেকা। সৎ বোন ট্রাভেলা জারাকে তিনি বলেছিলেন, ‘দূরের কোন নীরব এলাকায় আমি নিজেই নিজের খাবার উৎপাদন ও সংগ্রহ করব।’

আধুনিক যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি, খবরা-খবর, হানাহানি আর মহামারির মত ব্যাপারগুলো থেকে দূরে থাকতে চেয়েছিলেন রেবেকা। তবে, তার পরিকল্পনার কথা শুনে ট্রাভেলা জারা তাকে মানা করেছিলেন ও বলেছিলেন, ‘তোমাকে নিয়ে আমার খুব চিন্তা হচ্ছে।’

শেষ পর্যন্ত আর কারো কথাই শুনেননি রেবেকা। সন্তান আর ছোট বোনসহ প্রয়োজনীয় সব জিনিসপত্র নিয়ে রওনা হয়ে যান রকি মাউন্টেন অঞ্চলের দিকে। তবে, রেবেকার এ সিদ্ধান্তটি শেষ পর্যন্ত এক করুণ পরিণতি বয়ে এনেছে।

বুধবার (২৬ জুলাই) নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘রকি মাউন্টেনের গোল্ড ক্রিক ক্যাম্প গ্রাউন্ড এলাকা থেকে ৪২ বছর বয়সী রেবেকা, তার ১৪ বছর বয়সী ছেলে ও ৪১ বছর বয়সী ছোট বোন ক্রিস্টিন ভ্যান্সের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধারের বেশ কিছু দিন আগেই তারা মারা গিয়েছিলেন।’

গেল মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) স্থানীয় গানিসন কাউন্টির শব পরীক্ষক মিচেল বার্নেস জানান, মারা যাওয়া তিনজনই মৃত্যুর আগে একটি তাঁবুতে বসবাস করছিলেন ও টিনজাত খাবারের ওপর নির্ভরশীল ছিলেন। তবে, বিগত শীতকালের তীব্রতা তারা সহ্য করতে পারেননি। এ ছাড়া তারা অপুষ্টিতেও ভুগছিলেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।

ট্রাভেলা জারা বলেন, ‘ভাল চিন্তা থেকেই সে রেবেকা দুর্গম এলাকায় চলে গিয়েছিল। ভেবেছিল, এভাবেই পৃথিবীর সব অবিচার-অনাচার থেকে নিজের সন্তান ও বোনকে সে রক্ষা করবে।’

জারা জানান, গেল করোনা মহামারির সময় রেবেকার চিন্তা ভাবনায় বড় পরিবর্তন আসে। তার পরিকল্পনার সাথে একাত্ম না হলেও ছোট বোন ক্রিস্টিনও যোগ দিয়েছিলেন। কারণ, তিনি ভেবেছিলেন, তিনজন একসাথে থাকলে হয়তো বিচ্ছিন্ন পরিবেশেও টিকে থাকা সহজ হবে।

রেবেকার কিশোর ছেলে সম্পর্কে জারা জানান, সে ছিল মায়ের খুব কাছের। কোন প্রতিষ্ঠানে না গিয়ে বাড়িতেই পড়াশোনা করত। রেবেকার সাথে যাওয়ার সময় স্বজনদের সাথে বিচ্ছেদের কথা ভেবে তার খুব কষ্ট হচ্ছিল। তবে, মায়ের সাথে যাত্রা নিয়ে সে খুব উৎফুল্ল ছিল।

শব পরীক্ষক মিচেল বার্নেস জানান, গেল শীতে বেঁচে থাকার জন্য তাদের লড়াইয়ের কিছু চিহ্ন পাওয়া গেছে। বরফে তাদের চারপাশ ঢেকে গিয়েছিল। একটু উষ্ণতার জন্য তারা তাঁবুর ভেতরেই আগুন জ্বালানোর চেষ্টা করেছিলেন।

গেল ৯ জুলাই এক অভিযাত্রী তার যাত্রাপথে মরদেহগুলোর সন্ধান পান। প্রাথমিকভাবে তাদের নাম পরিচয় জানা সম্ভব না হলেও কিছু দিনের মধ্যেই সেসব তথ্য উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।

সিএন/এমএ

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন