শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

শামসুল স্যার

মঙ্গলবার, ডিসেম্বর ২৮, ২০২১

প্রিন্ট করুন
Untitled design 68 1

রুমান হাফিজ

ঘরের একমাত্র সন্তান হিসেবে সর্বোচ্চ আদর জুটে হাবিবের। তবে মায়ের চাইতে দাদুর সাথেই তার বেশি সখ্যতা। খাওয়া থেকে শুরু করে ঘুমানো, ঘুরাঘুরি সব দাদুকে ঘিরেই। মজার ব্যাপার হলো রাতে মায়ের কাছে ঘুমানোর কথা শুনলেই কান্নাকাটি জুড়ে দেয়,দাদু ছাড়া আর কারো কাছে ঘুমাবেই না। স্কুলের যাওয়ার বয়স হলে দাদু তাকে স্কুলে নিয়ে গেলেন ভর্তি করাতে। শিশু শ্রেণীতে ভর্তি করতে শিক্ষকেরা যা যা জিগ্যেস করেন সাধারণত তার ব্যতিক্রম হয় নি হাবিবের ক্ষেত্রেও।

হাবিবকে স্যার যা যা জিগ্যেস করলেন সে তার ঠিক ঠিক উত্তর দিলো। সেই সাথে একটা ছড়ার পুরোটা মুখস্ত বলে গেলো একনাগাড়ে। সেদিনের মতো স্কুলে ভর্তি হয়ে বাড়িতে ফিরে হাবিব। বাজার থেকে আরও দুটো বই যোগ হলো হাবিবের পাঠ্যতালিকায়। নিয়ে আসা বই দুটো বড় দেখে হাবিব তার দাদুকে জিজ্ঞেস করে, -আচ্ছা দাদু, এই বই বড় বড় কেন?দাদু প্রশ্ন শুনে হেসে বললেন, -এখন তো তুমি বড় হয়ে গেছো,তাই তোমার বইটাও বড় হয়েছে। বুঝলে দাদুমনি! -তাহলে কি আমি আব্বুর মতো বিদেশে যেতে পারবো?এবার একটু নড়েচড়ে বসলেন দাদু। কি বলবেন ঠিক বুঝতে পারছেন না। ভেবে নিয়ে বললেন,-হ্যাঁ দাদুমনি, অবশ্যই যেতে পারবে। তার আগে বড় বড় বই পড়ে শেষ করতে হবে। দাদুর কথা শুনে খুশিতে পাতা উলটে যা পারে পড়তে লাগলো। দাদু দেখেন আর হাসেন, সেদিকে হাবিবের ভ্রুক্ষেপ নেই একদমই।

সব ঠিক ঠাক চলছিলো। কিন্তু সমস্যা হলো, স্কুলে দুষ্টু ছেলেদের কাছে নানাভাবে মার খেতো হাবিব, কেউ গায়ে এঁকে দিত কলম দিয়ে, কেউবা খাতায়। আসার পথে কখনো ধাক্কা মেরে রাস্তার পাশে ফেলে দিতেও দ্বিধা করতো না দুষ্টুদের দল। দাদুর কাছে সব খুলে বলে হাবিব। দাদু তাকে পরদিন স্কুলে নিয়ে আসেন। প্রধান শিক্ষক না থাকায় অন্য একজন শ্রেণী শিক্ষকের কাছে বিচার দিলেন। তিনি সব শুনলেন। প্রতিদিন স্কুলে আসা যাওয়া এবং ক্লাসের দেখভাল করেন সেই স্যার। স্যারের নাম শামসুল আলম। প্রথম দিনে হাবিবের ব্যতিক্রমী মেধার প্রমাণ পেয়ে আলাদা করে সহযোগিতা করতে আগ্রহী হলেন শামসুল স্যার।

তখন তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ে হাবিব। সে বছর প্রথমবারের মতো স্কুলে থেকে স্কাউট দল গঠন করার জন্য নির্দেশ দিলেন প্রধান শিক্ষক। কয়েক ক্লাস মিলে পনেরো জনের মতো প্রাথমিক দল গঠন করা হয়। সেখান থেকে ছয় জনের দল হবে। যারা যাবে উপজেলা ক্যাম্পে। শামসুল স্যারের কারণেই হাবিব স্কাউট দলে শুধু যুক্ত হতে পেরেছিলো তা নয়,হয়েছে স্কুলের স্কাউট দলের লিডার। হাবিবের নেতৃত্বে সেবছর তিন দিনব্যাপী স্কাউট ক্যাম্পে উপজেলা পর্যায়ে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করার গৌরব অর্জন করে। গোটা উপজেলা জুড়ে হাবিবদের স্কুলের সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। সেই থেকে স্কুলের সবার মধ্যমনি হাবিব।

প্রাথমিক,মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিকের গন্ডি পেরিয়ে হাবিব এখন দেশের অন্যতম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে। প্রাথমিমের পর থেকেই শহরে থেকে পড়ালেখা তার। যার জন্য গ্রামে থাকার সুযোগ খুব বেশি হয় নি। স্কুলের সেই শামসুল স্যারের সাথেও দেখা নেই প্রায় এক দশকের বেশি সময় ধরে। যদিও খুঁজ পেয়েছে স্যার বাড়ির পাশে একটা দোকানে বসেন, ছেলেরা বড় হয়েছে অনেক। তারাই পরিবার দেখভাল করে। ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে যায় হাবিব। বিকেলবেলা পরিচিত কয়েকজনের সাথে হাটতে বের হয়। গ্রাম ঘুরে ঘুরে তারা আসে স্কুলের মাঠে। আচমকা স্মৃতিতে ডুব দেয় হাবিবের মন। আগের মতো এখন সেই স্কুল ঘর নেই,আগে টিনের চাল দিয়ে বৃষ্টির পানি পড়তো,কখনো বই খাতা ভিজে যেতো। বই বাচাতে কত কসরত সবার। এখন সেটা নেই। পাশেই দ্বিতল ভবন হয়েছে। বেশ পরিপাটি। সামনে লাগানো ফুলে প্রজাপতির উড়াউড়ি। মাঠের চারপাশের গাছগাছালির উপর চড়ে বসা পাখিদের কিচিরমিচির শব্দ। সব ছাড়িয়ে হাবিবের শুধু মনে পড়ছে তার শামসুল স্যারের কথা, স্যারের সহযোগিতার কথা। স্যারেরও কি হাবিবের কথা মনে পড়ে?

আরএইচ/সিএন

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন