যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবার ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আমেরিকার শিক্ষাব্যবস্থার কথিত পরিবর্তন নিয়ে। তিনি অভিযোগ করেছেন—আমেরিকার শিক্ষাব্যবস্থায়, স্কুলে সবচেয়ে ‘বিষাক্ত’ এবং আমেরিকাবিরোধী তত্ত্ব শেখানোর প্রয়াস নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া স্কুল পর্যায়ের শিক্ষা পরিকল্পনাকে নৈরাজ্যবাদীদের ভাবাদর্শ হিসেবে আখ্যা দিয়ে তা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন ট্রাম্প।
বর্ণবৈষম্য ও অন্যান্য সামাজিক বিষয়ে যুগোপযোগী শিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়নের চেষ্টা করছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। আমেরিকাজুড়ে একটি নতুন শিক্ষা কারিকুলাম স্কুল পর্যায়ে চালু করার প্রয়াস নেওয়া হয়েছে। নতুন এ কারিকুলামে ‘ক্রিটিক্যাল রেইস থিওরি’ নামের বিষয় সংযুক্ত করা হচ্ছে।
এ প্রয়াসকে বাধাগ্রস্ত করতে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য নিজের সমর্থকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গতকাল শুক্রবার ‘রিয়েল ক্লিয়ার পলিটিকস’ নামের সংবাদমাধ্যমে এ নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি মন্তব্য প্রতিবেদন লিখেছেন। প্রতিবেদনে ট্রাম্প বলেছেন, আমেরিকাজুড়ে স্কুল পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের ‘মগজ ধোলাইয়ের’ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
ট্রাম্প অভিযোগ করেছেন, বাম নৈরাজ্যবাদীদের প্রভাবে ‘ক্রিটিক্যাল রেইস থিওরি’ নামের এ বিষয়ে নতুন সব কথা বলা হচ্ছে। আমেরিকার কোনো গাত্রবর্ণের লোকজনই তাদের সন্তানদের এ শিক্ষা দিতে ইচ্ছুক হতে পারে না বলে তিনি মনে করেন।
সত্তর দশক থেকে আমেরিকায় ‘ক্রিটিক্যাল রেইস থিওরি’ (সিআরটি) নামের বুদ্ধিবৃত্তিক আন্দোলন চলে আসছে। মার্কিন রাজনীতি, শিক্ষা, সমাজ সংস্কৃতিতে ধারাবাহিক বর্ণবৈষম্যের কারণ ব্যাখ্যা করে এর প্রতিকার চাওয়া হচ্ছে এ আন্দোলনের মাধ্যমে।
মার্কিন উদারনৈতিক লোকজন সমালোচনামূলক বর্ণবৈষম্য মতবাদ আন্দোলনের সমর্থক হলেও শ্বেতাঙ্গ রক্ষণশীলরা এর সমালোচনা করে আসছে। যুবক ও তরুণদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা এ মার্কিন সামাজিক ও শিক্ষা আন্দোলন সাম্প্রতিক নাগরিক আন্দোলনের ভাবাদর্শ হিসেবে কাজ করছে আমেরিকায়।
সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, আমেরিকার স্কুল শিক্ষার্থীদের শেখানো উচিত এ দেশটি সব সময় সবচেয়ে উদার ও মহৎ হয়ে অগ্রযাত্রা করেছে। সবচেয়ে সহিষ্ণু আর মানবিক দেশ হিসেবে আমেরিকার উত্থানের কথা না শিখিয়ে শিক্ষার্থীদের এখন উল্টো কথা শেখানো হচ্ছে। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের শেখানো হচ্ছে আমেরিকা সব সময় পদ্ধতিগতভাবে অশুভ কাজ করে এসেছে। আমেরিকার লোকজনের হৃদয় ঘৃণা ও বিদ্বেষে পরিপূর্ণ বলে নতুন প্রজন্মকে শিক্ষা দেওয়ার প্রয়াস নেওয়া হয়েছে।
নিউইয়র্ক টাইমস ‘১৬১৯ প্রজেক্ট’ নামের একটি ধারণা সমর্থন করে আমেরিকার শিক্ষাবিদ ও পণ্ডিতদের লেখা প্রকাশ করে থাকে। সেখানে বলা হয়, যে দিনটিতে আমেরিকায় দাসদের আগমন ঘটেছে, সেদিন থেকেই গণতন্ত্রের সংগ্রাম শুরু হয়েছে। বাইডেন প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ ভাবাদর্শের শিক্ষা কারিকুলাম চালু করার বিস্তারিত ফেডারেল রেজিস্টারে প্রকাশ করা হয়েছে।
ট্রাম্প বলেন, একজন শিক্ষার্থীকেও এমন ‘বিভেদ আর ভুলে ভরা’ শিক্ষা দেওয়া মানে মানসিক পীড়ন করা। একটি প্রজন্মকে এমন ভাবাদর্শের শিক্ষায় গড়ে তোলা একটি অস্বাভাবিক প্রয়াস এবং তা আমেরিকার জন্য আত্মহত্যার শামিল।
ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, আমেরিকাজুড়ে এ নিয়ে প্রতিবাদ শুরু হয়েছে। বাইডেন প্রশাসনের এমন প্রয়াস বন্ধের জন্য তিনি তাঁর সাত দফা পরিকল্পনার কথা বলেছেন। তাঁর ঘোষিত পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে, ক্রিটিক্যাল রেইস থিওরি পাঠ করা হয় এমন স্কুলে জনগণের করের অর্থ বরাদ্দ বন্ধ করার জন্য রাজ্যের আইনপ্রণেতাদের আইন প্রণয়ন করতে হবে। তিনি বলেন, প্রতি রাজ্যে একটি কমিশন গঠন করে পরীক্ষা করতে হবে স্কুলগুলোতে দেশপ্রেমের ভাবাদর্শের শিক্ষা প্রদান করা হচ্ছে কি না। স্কুলে যা শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে, তা অভিভাবকদের জন্য সহজে পরীক্ষা করার সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।
সাবেক এই প্রেসিডেন্ট বলেন, বাম নৈরাজ্যবাদীরা চায় আমেরিকার লোকজন স্মৃতিভ্রষ্ট হয়ে পড়ুক। আমেরিকার মহান, উদার ও সহিষ্ণুতার চেতনা বিনষ্ট করতে পারলেই বাম নৈরাজ্যবাদীরা এ দেশের পুরো নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করতে পারবে।
ট্রাম্প বলেন, ‘দেরি হওয়ার আগেই আমাদের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এখনই বাম নৈরাজ্যবাদীদের এমন অশুভ প্রয়াস বন্ধ করার পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।’
চলমান নিউইয়র্ক ফেসবুক পেজ লাইক দিন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন