ডাক্তার মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ: মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ব শিশু ক্যান্সার দিবস ২০২২। শিশু ক্যান্সার সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ২০০২ সালে পৃথিবীর ৯০টি দেশের ১৭৮টি জাতীয় সংগঠনের সম্মিলিত চাইল্ড ক্যান্সার ইন্টারন্যাশনাল (সিসিআই) কর্তৃক এ দিবসটি পালন শুরু হয়। সচেতনতা সৃষ্টি ছাড়াও এ দিবসটির অন্যতম লক্ষ্য হল মৃত্যুহার হ্রাস করা এবং ক্যান্সার সম্পর্কিত ব্যথা ও এই রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করা শিশুদের দুর্দশা হ্রাস করা।
মূলত জেনেটিক কারণেই শিশুরা ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। আর সারা বিশ্বের মত আমাদের দেশেও শিশুদের ক্যানসার রোগের প্রকোপ বাড়ছে দিনে দিনে। শিশুদেরও ক্যানসার হতে পারে, এ ধারণাটাই অনেক অভিভাবকের জন্য নির্মম সত্য হিসেবে প্রকাশ পায়। মায়ের পেটে ভ্রুণ অবস্থায় শিশুরা ক্যান্সার হবে এ ধরণের জিন নিয়ে তৈরি হয়। পরবর্তী সেটা প্রকট আকার ধারণ করে। তবে আশার কথা হচ্ছে, শিশুদের বেশিরভাগ ক্যান্সারই নিরাময় হয়, যদি সময়মত, সঠিক উপায় অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক দ্বারা চিকিৎসা গ্রহণ করা হয়, তাহলে তারা সুস্থ হয়ে ওঠে।’আর প্রতি বছর ক্যান্সার আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বাড়ছে। শিশুদের সাধারণত ব্লাড ক্যান্সার বেশি হচ্ছে। তবে নসিকাগ্রন্থি, কিডনি ও চোখের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়া শিশুর সংখ্যাও কম নয়।
বিশেষজ্ঞদের দাবি, বেশির ভাগ শিশুর ক্যান্সার নিরাময়যোগ্য। শনাক্ত করা গেলে ও উন্নত চিকিৎসা পেলে ৭০ শতাংশ রোগী সেরে ওঠেন। কিন্তু মাত্র ২০ শতাংশ রোগী উন্নত চিকিৎসার সুযোগ পান।
ওয়ার্ল্ড চাইল্ড ক্যান্সারের হিসাব অনুযায়ী, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) যেমন বলছে, বিশ্বজুড়ে প্রতিবছর অন্তত তিন লাখ শিশু ক্যানসারে আক্রান্ত হয়। নিম্ন আয়ের দেশগুলোয় আক্রান্ত শিশুদের ৯০ শতাংশই চিকিৎসার অভাবে মারা যায়।
হুর তথ্য মতে, বর্তমানে ক্যান্সার আক্রান্ত শিশুদের মৃত্যুর হার আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। বাংলাদেশে প্রায় ১৩-১৫ লাখ ক্যান্সার আক্রান্ত শিশু রয়েছে। ২০০৫ সালেই ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে শিশু মৃত্যুর হার ছিল ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। আর সচেতন না হলে ২০৩০ সালে এ হার দাঁড়াবে ১৩ শতাংশে।
‘প্রতি বছরই ক্যান্সারে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বাড়ছে। তাই শিশুদের সঠিক চিকিৎসার পাশাপাশি পুষ্টিকর খাবার যেমন পালং শাক, ব্রুকলি, ডিমের কুসুম, মটরশুটি, কলিজা, মুরগীর মাংস, কচুশাক, কলা, মিষ্টিআলু, কমলা, শালগম, দুধ, বাঁধাকপি, বরবটি, কাঠবাদাম মত ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম ও আয়রনসমৃদ্ধ খাবার খাওয়াতে হবে।’ আর সুনির্দিষ্ট কোন কারণ না থাকলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে জেনিটিক্যাল কারণ, ভাইরাস, খাবারে টক্সিনের উপস্থিতি, ক্যামিকেলস, পরিবেশগত সমস্যায় শিশুদের ক্যান্সার হয়। তবে আশার কথা হচ্ছে প্রাথমিকভাবে এ রোগ শনাক্ত করা গেলে বেশিরভাগ শিশুরই হোমিওপ্যাথিতে ভাল হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। শিশুদের ক্যান্সার মোকাবিলায় সবার আগে সচেতনতা বাড়াতে হবে।
চিকিৎসা বিজ্ঞানে নসিকাগ্রন্থি নামের যে ক্যান্সার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ হিসেবে অভিহিত করা হচ্ছে, সেটিও ভাল হয়। তারপরই রয়েছে চোখের ক্যান্সার। যদি প্রাথমিক অবস্থায় এটা ধরা পরে ও চিকিৎসা করানো যায়, তাহলে চোখ ফেলে দিতে হলেও তিনি সুস্থ হয়ে যান। কেবলমাত্র যদি হাড়ের ক্যান্সারে কোন শিশু আক্রান্ত হয়, সে ক্ষেত্রে তার সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা একটু কম থাকে। কারণ হাড়ের ক্যান্সার ছড়িয়ে যায় খুব দ্রুত। বড়দের যে সব ক্যান্সার হয়, সে সব ক্যান্সার শিশুদের হয় না। বাংলাদেশে এখন ক্যান্সারের চিকিৎসা পর্যাপ্ত রয়েছে। তাই শিশুদের ক্যান্সার হলে পরিবারকে ভেঙ্গে না পরে দ্রুত তার চিকিৎসা করাতে হবে সঠিক উপায়ে, তাহলেই তাকে সারিয়ে তোলা সম্ভব।
শিশুর ক্যানসারের লক্ষণ: নাক থেকে রক্ত পড়া: শিশুর নাকের সম্মুখভাগে সূক্ষ্ম রক্তনালি থেকে রক্তপাত হতে পারে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এটি কমে যায়। কিন্তু যদি না কমে, বরং ঘন ঘন রক্তপাত হতে থাকে, তাহলে সচেতন হতে হবে।
ক্ষত শুকাতে দেরি হওয়া: শিশুর শরীরের কোথাও কেটে গেলে খেয়াল রাখুন, ক্ষত সারতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সময় লাগছে কিনা। সময় বেশি লাগলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
অস্বাভাবিকভাবে ওজন কমে যাওয়া: ব্যায়াম বা ওজন হ্রাসের কোন যৌক্তিক কারণ ছাড়া যদি শিশুর ওজন কমে যেতে থাকে, তাহলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি।
চোখের মণি সাদা হয়ে যাওয়া: চোখের মণি সাদা হয়ে যাওয়া। এটি চোখের ক্যানসারের প্রাথমিক লক্ষণ।
শ্বাসকষ্ট: শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া কিংবা ছোট ছোট শ্বাস নেয়া শিশুর ক্যান্সারের ঝুঁকির অন্যতম উপসর্গ।
ঘন ঘন জ্বর: অকারণ ঘন ঘন জ্বর শিশুর লিউকেমিয়ার লক্ষণ হতে পারে।
চাকা বা মাংসপিণ্ড: পেটের যে কোন পাশে চাকা বা টিউমার অনুভূত হলে কিডনির ক্যান্সারের ঝুঁকি থাকে।
মাথাব্যথা: শিশুর অস্বাভাবিক মাথাব্যথা মস্তিষ্কের ক্যান্সারের লক্ষণ।
অচেতন হওয়া: তীব্র জ্বর বা যথাযথ কারণ ছাড়া শিশু যদি হুটহাট অচেতন হতে থাকে, তাহলে তা ব্রেন টিউমারের উপসর্গ হতে পারে।
হাড়ে ব্যথা: কোন আঘাত ছাড়াই হাড়ে তীব্র ব্যথা, খুঁড়িয়ে হাঁটা প্রভৃতি লক্ষণগুলো হাড়ের ক্যান্সারের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
দুর্বলতা: অতিরিক্ত শারীরিক দুর্বলতা শিশুদের লিম্ফোমা নামক ক্যান্সারের সাধারণ লক্ষণ।
শিশুর ক্যানসারের কারণ: শিশুর ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ক্ষেত্রে বংশগত কারণকেই প্রধান মনে করা হয়। এ ছাড়া অন্য কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে- বিরূপ প্রাকৃতিক পরিবেশ; অভিভাবকের ধূমপানের অভ্যাস; গর্ভকালে মায়ের ভুল খাদ্যাভ্যাস; শিশুর অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস; হেপাটাইটিস বি, হিউম্যান হার্পিস এবং এইচআইভি ভাইরাসও শিশুদের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়।
শিশুরা সাধারণত যে ধরনের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে থাকে, সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল-জন্ম থেকে প্রথম পাঁচ বছর- নিউরোব্লাস্টোমা, উইল্মস টিউমার, রেটিনেব্লাস্টোমা, লিউকে।
সিএন/এমএ
চলমান নিউইয়র্ক ফেসবুক পেজ লাইক দিন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন