শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ভিন্ন এক বাংলাদেশের গল্প

শনিবার, মে ১, ২০২১

প্রিন্ট করুন
motamoty 20210427125835 1

ফারাজী আজমল হোসেন

বিশ্ব জুড়ে চলছে করোনা মহামারি। গত বছরের জানুয়ারি থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত বিশ্ব অর্থনীতিতে তার ক্ষত বেশ স্পষ্ট। বিশ্ব অর্থনীতি যখন ধুঁকছে করোনার কারণে তখনো বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৫.২ শতাংশ। এমনকি চলতি অর্থ বছরেও প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশের বেশি হতে পারে বলে ধারণা প্রকাশ করেছে আইএমএফ। বর্তমান বিশ্বে প্রবৃদ্ধি অর্জন ও অর্থনৈতিক চাকা সচল রাখার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের নীতি নির্ধারণ ও কার্যাবলী নিয়ে রীতিমত গবেষণা হচ্ছে। যেখানে উন্নত বিশ্বের অনেক দেশ গত বছর ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে, সেখানে বাংলাদেশ কিভাবে তার উন্নয়নের চাকা সচল রাখতে সক্ষম হয়েছে, সেটেই ছিলো বিস্ময়ের মূল কারণ। যেখানে করোনার প্রাক্কালে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ১ ভাগের কিছু বেশি হবে বলে ধারণা করা হয়েছিলো সেখানে আইএমএফ নিজেই বলছে তা চলতি বছর ৫ ভাগের বেশি হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় নেতৃত্বে বাংলাদেশে মহামারি মোকাবেলায় সরকারের জীবন ও জীবিকার এমন সুষম নীতির কারণেই বিষয়টি সম্ভব হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

 বিশ্বের বুকে সর্ব ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আজ বিস্ময়। আর বিস্ময়ের সূচনা জাতির পিতার হাত ধরে এগিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনার মাধ্যমে। বঙ্গবন্ধুর ‘সোনার বাংলা’ নির্মাণে বাংলাদেশকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দেশের সব অঞ্চলে সমানভাবে উন্নয়ন না হলে সামগ্রিকভাবে দেশের উন্নয়ন সম্ভব না।’ 

বাংলাদেশকে বর্তমানে বিশ্বে উদীয়মান অর্থনীতির দেশ হিসেবে চিহ্নিত করছে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম (ডব্লিউইএফ)। বাংলাদেশের সামনে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ থাকলে যেই গতিতে দেশের অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে, রাজনৈতিক স্থিতি থাকলে তা অনায়াসে পার হয়ে যাওয়া সম্ভব বলে মনে করছে প্রতিষ্ঠানটি। দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হওয়া বাংলাদেশ আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের সকল ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে। অর্থনীতি, মানবসম্পদ, অবকাঠামো, নিরাপত্তা, রাষ্ট্র ব্যবস্থাপনা থেকে শুরু করে এমন কোন ক্ষেত্র নেই যেখানে উন্নতির ছোঁয়া লাগেনি।

২০১০ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের শপথ নিয়ে সরকার গঠন করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। সেই সময় বিষয়টি নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করা হলেও বর্তমানে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবতা দেখছে বিশ্ব। ডিজিটাল বাংলাদেশের কল্যাণে তথ্য-প্রযুক্তিখাত থেকে বর্তমানে বাংলাদেশ অর্জন করছে বৈদেশিক মুদ্রা। ধারণা করা হচ্ছে দেশের মোট আয়ে অচিরেই ১০ ভাগ দখল করে নেবে এই তথ্য-প্রযুক্তি খাত। করোনা মহামারি মোকাবেলায় বাংলাদেশ ডিজিটাল যেই প্লাটফর্মগুলো ব্যবহার করতে সক্ষম হয়েছে তা ছিলো ডিজিটাল বাংলাদেশের কল্যাণে। বর্তমানে দেশের সকল জেলা শহর ছাড়িয়ে উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত বিস্তৃত হচ্ছে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সার্ভিস। সেই সঙ্গে আইসিটি বিষয়ক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ পৌঁছে দেয়া হচ্ছে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে। সে কারণেই বর্তমানে বরিশালের প্রান্তিক কোন অঞ্চল থেকেও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন রোবট তৈরির স্বপ্ন দেখে বাংলাদেশের তরুণ সমাজ।

পাকিস্তানের শোষণ নির্যাতন ও লুটপাটের কারণে ১৯৭০ সালে পর ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের জিডিপি ছিলো ঋণাত্মক ১৩.৯৭ শতাংশ। কিন্তু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসাধারণ নেতৃত্বে মাত্র ১ বছরের মধ্যে ১৭.৩ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয় বাংলাদেশের। বোঝাই যায় জাতির পিতা বেঁচে থাকলে এভাবেই এগিয়ে যেতো বাংলাদেশ। কিন্তু ১৯৭৫ সালে তাকে হত্যার পর বাংলাদেশের উন্নয়ন যেন থমকে যায়। এ সময় জিডিপি’তে যা যুক্ত হতো তার বড় অংশ ছিলো বৈদেশিক ঋণ। মানুষের মাথাপিছু আয় ও ঋণ এক সময় ছিলো বেশ কাছাকাছি। ১৯৯৬ সালে ৫ বছরের জন্য আওয়ামী লীগ বাংলাদেশকে এই ঋণের কলঙ্ক থেকে মুক্ত করার চেষ্টা করলেও শেষ পর্যন্ত তা আর হয়ে ওঠেনি। কিন্তু ২০১০ সালে বঙ্গবন্ধুর ‘সোনার বাংলা’ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে শেখ হাসিনা যখন সরকার গঠন করে, এ দেশের মানুষ অন্য এক বাংলাদেশের গল্প শুনতে পায়। এক সময় যেই বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি বলে সমালোচনা করা হয়েছিলো, সেই দেশই আজ বিশ্ব বাজারে বিনিয়োগের কেন্দ্রে পরিণত হচ্ছে। রাশিয়া, চীন, জাপান, কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র থেকে শুরু করে প্রতিবেশী ভারতও বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। শুধু তাই নয়, নিম্ন আয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশ হতে যাওয়া বাংলাদেশ আগামী দশকে মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরের মত অর্থনৈতিক শক্তি অর্জন করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বিশ্বব্যাংকের হিসাবে, ২০১০ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ৮০০ ডলার ছিল। চলতি বছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০৬৪ ডলার। অর্থাৎ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গত ১ দশকে প্রায় ২৫৮ শতাংশ বেড়েছে মাথাপিছু আয়! শুধু অর্থনৈতিক সূচক নয়, মানবসম্পদ উন্নয়ন সূচকে এগিয়েছে বাংলাদেশ। ২০১৩ সালে মাঝারি মানের মানবসম্পদ উন্নয়নের দেশের তালিকায় সবার নিচে ছিলো বাংলাদেশের নাম। অবস্থান ছিলো ১৪৩তম। সেখান থেকে বর্তমানে ১০ ধাপ এগিয়ে ১৩৩তম অবস্থানে বাংলাদেশ। জাতিসংঘ উন্নয়ন সংস্থার মতে মাঝারি মানের মানবসম্পদ উন্নয়নের দেশের তালিকায় সবার উপরের দিকে ছিলো এ বছর বাংলাদেশ। প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৯০ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশিত গড় আয়ু বেড়েছে ১৪.৪ বছর, গড় শিক্ষাজীবন বেড়েছে ৩.৪ বছর এবং প্রত্যাশিত শিক্ষাকাল বেড়েছে ৬ বছর।

শুধু মানবসম্পদ নয় লিঙ্গ বৈষম্য নিরসনেও শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) বৈশ্বিক লিঙ্গ বৈষম্য প্রতিবেদনে ২০২০ ও ২০০৬ বিশ্লেষণ অনুসারে ২০০৬ সালে বাংলাদেশর অবস্থান ছিলো ৯১তম। সেখান থেকে বর্তমানে ৫০তম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। সবচাইতে এগিয়ে রয়েছে রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণে। উন্নত অনেক দেশকে ছাড়িয়ে নারীর রাজনীতিতে অংশগ্রহণে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম।

শেখ হাসিনার দৃঢ় নেতৃত্বে বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণে কথা অস্বীকার করতে পারবে না কেউ। যুক্তরাষ্ট্র ও বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাংলাদেশ পদ্মাসেতুর মত মেগা প্রজেক্ট নির্মাণের কাজ হাতে নেয় যার ৮০ ভাগেরও বেশি কাজ সম্পন্ন হয়েছে। স্বপ্নের পদ্মাসেতুর মাধ্যমে দেশের দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চলের সঙ্গে সারা দেশের যোগাযোগ হবে আরো সহজ এবং গতিশীল। সেই সঙ্গে ফেরি এবং নদী তীরে ঘটা অন্যান্য দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাবে সাধারণ মানুষ।

ঢাকা শহরের ট্রাফিক জ্যাম ও লোকাল বাসের ঝামেলা থেকে নগরবাসীকে মুক্ত করতে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার, কুড়িল ফ্লাইওভার, বনানী ফ্লাইওভারসহ হাতিরঝিল এবং মেট্রোরেলের মত মেগা প্রজেক্ট হাতে নিয়েছে শেখ হাসিনা সরকার। যার মধ্যে মেট্রোরেলের প্রথম ধাপের কাজ প্রায় শেষ। ২০২৪ সালের মধ্যে মেট্রোরেল ও পদ্মাসেতু সম্পূর্ণ চালুর বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো। এ ছাড়াও ঢাকার সঙ্গে টাঙ্গাইল ও গাজীপুরের যোগাযোগ আরো সহজ করার জন্য কানেক্টিং ফ্লাইওভার এবং চট্টগ্রামের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করতে নতুন ব্রিজ নির্মাণসহ চার লেনের রাস্তা সরকারের সড়ক বিভাগের উল্লেখযোগ্য উন্নয়নমূলক কাজ।

বর্তমান সরকারের শাসন আমলেই প্রতিবেশী ভারত ও মিয়ানমারের বিপক্ষে সমুদ্র বিজয় নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ। বঙ্গোপসাগরে এক লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটারের বেশি টেরিটরিয়াল সমুদ্র, ২০০ নটিক্যাল মাইল এলাকায় একচ্ছত্র অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং চট্টগ্রাম উপকূল থেকে ৩৫৪ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত মহীসোপান এলাকার প্রাণীজ ও অপ্রাণিজ সম্পদের ওপর সার্বভৌম অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ ছাড়া স্বাধীনতার পরপর ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে যে স্থল সীমান্ত চুক্তি হয়েছিল তা বাস্তবায়নের মাধ্যমে ছিটমহল সমস্যার সমাধান করা বাংলাদেশের বড় অর্জন। রোহিঙ্গা ইস্যুতেও আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসা পেয়েছে বাংলাদেশ। জাতিসংঘসহ বিশ্বের প্রায় সকল দেশ ও সংস্থা এই ইস্যুতে বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করে পাশে রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পেয়েছেন ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ উপাধি। তলাহীন ঝুড়ির বাংলাদেশ আজ ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়ার পাশাপাশি খাদ্য, বস্ত্র-চিকিৎসার দায়িত্বও পালন করছে।

মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িতদের বিচার কাজে সফলতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ। টানা দুই মেয়াদের ক্ষমতায় বিভিন্ন প্রভাবশালী দেশ ও গোষ্ঠীর চাপ সত্ত্বেও শীর্ষস্থানীয় অপরাধীদের বিচার শেষে রায় কার্যকর করা হয়েছে। এই বিচার করতে পারা স্বাধীন বাংলাদেশকে কলঙ্কমুক্ত করার ক্ষেত্রে বড় সাফল্য। সেই সঙ্গে দেশে ধর্মীও উগ্রবাদী, সন্ত্রাস ও জঙ্গিদের মোকাবেলায় কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ। হাসিনা সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পূর্বে সারা দেশে সিরিজ বোমা হামলা, বাংলা ভাই, জেএমবি’র মত দলগুলো বাংলাদেশকে পাকিস্তানের মত মৌলবাদী রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের বুকে পরিচিত করছিলো। কিন্তু শেখ হাসিনার দৃঢ় নেতৃত্বে বাংলাদেশ সফলভাবে এই সকল জঙ্গি গোষ্ঠী ও মৌলবাদীদের দমন করে। বর্তমানে সন্ত্রাস প্রতিরোধে বিশ্বের বুকে নিদর্শন হয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিবেদনে সন্ত্রাস দমনে বাংলাদেশের ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করা হয়।

বিশ্বের বুকে সর্ব ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আজ বিস্ময়। আর বিস্ময়ের সূচনা জাতির পিতার হাত ধরে এগিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনার মাধ্যমে। বঙ্গবন্ধুর ‘সোনার বাংলা’ নির্মাণে বাংলাদেশকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দেশের সব অঞ্চলে সমানভাবে উন্নয়ন না হলে সামগ্রিকভাবে দেশের উন্নয়ন সম্ভব না।’

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন