শুক্রবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

সমাজে আলেমরা হলেন সবচেয়ে অবহেলিত, নিগৃহীত ও নিপীড়িত

বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ৭, ২০২৪

প্রিন্ট করুন

আব্দুল হান্নান চৌধুরী: বিশাল একটা সমাবেশ করতে পারলেই আলেমরা বড় একটা তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলেন। বড় বড় ইসলামী সমাবেশ আয়োজনের মধ্যে আমি কোন অর্জন দেখি না; যদি সেখানে জাতির জন্য সুনির্দিষ্ট কোন কর্মসূচি না থাকে। একটি মহা সমাবেশ মানেই সেখানে জাতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি উঠে আসবে; জাতি ভবিষ্যতের জন্য একটি দিক নির্দেশনা পাবে। কিন্তু, এসব বড় সম্মলেন থেকে তেমন কোন নির্দেশনা আসে না। তুরাগ নদীর পাড়ে প্রতি বছর তাবলীগ জামায়াতের লক্ষ লক্ষ লোকের সমাবেশ হয়। কিন্তু, সেখান থেকে গোটা জাতি কি দীক্ষা অর্জন করে, আমি সেরা বুঝতে পারি না। ২০১৩ সালের ৫ শাপলা চত্বরে হেফাজত যে সমাবেশ করেছিল, তা কি জন্য কোন টার্গেট নিয়ে করেছিল তা আমার আজও অজানা রয়ে গেল। অথচ সেদিন আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের হামলায় অসংখ্য ছাত্র ও আলেম নিহত হয়েছিল। যারা নিহত হয়েছিল তার হিসাবও এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।

আজকের সমাজে আলেমরা হলেন সবচেয়ে অবহেলিত, নিগৃহীত ও নিপীড়িত। এর একমাত্র কারণ হল, তারা সামাজিক ক্ষেত্রে নিজস্ব বলয় ও প্রভাব-প্রতিপত্তি সৃষ্টি করতে পারেনি। আপনি দেখুন, একজন আলেম মসজিদে স্বল্প বেতনে চাকুরী করেন। তিনি কমিটির সভাপতির কথা ছাড়া কোন কাজ করতে পারেন না। মসজিদ কমিটির উপর তিনি কোন প্রভাব খাটাতে পারেন না। একজন ইমাম শুধু মসজিদের ইমাম নয়, তিনি হলেন সমাজেরও ইমাম। সমাজের বিভিন্ন বিষয়ে তিনিই সিদ্ধান্ত দিবেন। কিন্তু, আমাদের সমাজে তার উল্টোটাই আমরা দেখি। আলেমদের জীবন মান উন্নয়নে রাষ্ট্রেরও তেমন কোন ভূমিকা দেখা যায় না। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় আলেমরাই এ দেশের সংখ্যালঘু।

বেশির ভাগ আলেম ওয়াজ নসিহত নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। ওয়াজে তারা দ্বীন কায়েমের জন্য জোরালো বক্তব্য রাখেন ও ইসলাম বিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে হুংকার তোলেন। কিন্তু, ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য যে কিছু কর্মসূচি ও পরিকল্পনা দরকার, রাষ্ট্রের বিভিন্ন সেক্টরে তাদের উপস্থিতি দরকার বিষয়টি নিয়ে আলেমদের একটা বৃহৎ অংশ চিন্তা করেন বলে মনে হয় না।

রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরে নাস্তিক ও ইসলাম বিরোধীরা দখল করে বসে আছে। এসব সেক্টরে হাতে গোনা কয়েকজন আলেম ছাড়া আর কাউকে দেখা যায় না। আলেমদের সমাজে অবহেলিত অবস্থা থেকে নিজেরাই নিজেদেরকে মুক্ত করতে হবে। ধর্ম চর্চার পাশাপাশি তাদেরকে আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান নিয়েও গবেষণা করতে হবে এবং রাষ্ট্রের বিভিন্ন সেক্টরে নিজেদের অবস্থান গড়ে তোলার জন্য যথেষ্ট যোগ্যতা অর্জন করার চেষ্টা করতে হবে।

আজ গোটা রাষ্ট্র ব্যবস্থায় দুর্নীতির সয়লাব। এখান থেকে জাতিকে মুক্ত করতে হলে আলেম সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। রাষ্ট্রের বিভিন্ন সেক্টরে নিজেদের অবস্থানকে সুদৃঢ় করতে হবে। তাই, ওয়াজ নসিহত ও ধর্ম চর্চার পাশাপাশি দূর্নীতিমুক্ত সমাজ এবং রাষ্ট্র গঠনের জন্য পরিকল্পিত কর্মসূচি নিয়ে আলেমদেরকে এগিয়ে আসতে হবে।

লেখক: গবেষক, চট্টগ্রাম।

সিএন/আলী

Views: 1

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন