শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪

শিরোনাম

সমৃদ্ধির ৪৩ বছরে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

সোমবার, নভেম্বর ২২, ২০২১

প্রিন্ট করুন
SAVE 20211122 174613 1
SAVE 20211122 174613 1

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদকঃ

শিক্ষা, গবেষণা, সাফল্যে ও সমৃদ্ধির ৪২ বছর পেরিয়ে ৪৩তম বর্ষে পদার্পণ করলো স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশের প্রথম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি)।

দীর্ঘ ৪২ বছরের পথ পরিক্রমায় নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে আজ সোমবার (২২ নভেম্বর) ৪৩তম বর্ষে পদার্পণ করেছে ১৭৫ একেরর সবুজ শ্যামল স্বপ্নের কারিগর ইবি। ১৯৭৯ সালের এই দিনে খুলনা বিভাগের কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ জেলার শান্তিডাঙ্গা-দুলালপুরে যাত্রা শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়টি।

১৯৮৩ সালের ১৮ জুলাইয়ের এক আদেশে বিশ্ববিদ্যালয়টিকে গাজীপুর বোর্ড বাজারে এবং ১৯৯০ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি অপর এক আদেশে কুষ্টিয়ায় স্থানান্তর করা হয়। তবে মূল ক্যাম্পাসে শিক্ষা ও প্রশাসনিক কাজ শুরু হয় ১৯৯২ সালের ১লা নভেম্বর।
দুটি অনুষদের চারটি বিভাগে ৩০০ শিক্ষার্থী নিয়ে ১৯৮৫-৮৬ শিক্ষাবর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়টি তাঁর একাডেমিক যাত্রা শুরু করে এবং প্রথম ক্লাস অনুষ্ঠিত হয় ১৯৮৬ সালের ২৮ জুন।

বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টির ৮টি অনুষদের ৩৪টি বিভাগে ১৫ হাজার ৩৮৪ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত আছে। যাদের মধ্যে ১০ হাজার ২৯১ জন ছাত্র এবং ৫ হাজার ৯৩ জন ছাত্রী। শিক্ষাদানে নিয়োজিত রয়েছেন ৩৯০ জন শিক্ষক।

বিশ্ববিদ্যালয়টি এ পর্যন্ত ৫১৪ জনকে পিএইচডি এবং ৬৯৬ জনকে এমফিল ডিগ্রি প্রদান করেছে। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৯০ জন পিএইচ.ডি এবং ২১৯ জন এমফিল গবেষণায় নিয়োজিত রয়েছেন।

বিশ্ব শিক্ষা ও গবেষণাতেও প্রাপ্তির কমতি নেই ইবির। সম্প্রতি অ্যালপার ডগার সায়েন্টিফিক ইনডেক্সের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বিশ্বসেরা গবেষকের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন ইবির ১৭ শিক্ষক।

এ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪টি সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রথম সমাবর্তন ২৭ এপ্রিল ১৯৯৩ সালে, দ্বিতীয় সমাবর্তন ৫ ডিসেম্বর ১৯৯৯ সালে, তৃতীয় সমাবর্তন ২৮ মার্চ ২০০২ সালে এবং সর্বশেষ ৪র্থ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয় ৭ জানুয়ারি ২০১৮ সালে।
বর্তমানে আবাসন, শ্রেণিকক্ষ সঙ্কটের মতো সীমাবদ্ধতা কাটাতে চলমান রয়েছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়কে ঢেলে সাজানোর ৫ শত ৩৭ কোটি ৭ লক্ষ টাকার মেগা প্রকল্পের উন্নয়ন কাজ। 

মেগা প্রকল্পের অধীনে ক্যাম্পাসে ৯টি ১০তলা ভবন নির্মাণের কার্যাদেশ দেয়া ও চুক্তিপত্র সম্পন্ন হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় গত ১৩ অক্টোবর শিক্ষার্থীদের জন্য ১০০০ সিটবিশিষ্ট ১০ তলা দুটি আবাসিক হলের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করা হয়েছে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টির ৮টি আবাসিক হল থাকলেও আবাসন সুবিধা পায় মাত্র ২৩ শতাংশ শিক্ষার্থী। যার মধ্যে ৫টি ছাত্র হল এবং ৩টি ছাত্রী হল। এছাড়াও পাঠদান কার্যক্রমের জন্য রয়েছে ৬টি একাডেমিক ভবন। শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের যাতায়াতের জন্য বর্তমানে পরিবহন পুলে রয়েছে ৪৩টি গাড়ি।

এছাড়াও ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ, শিক্ষক-ছাত্র সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, মীর মশাররফ হোসেন একাডেমিক ভবন, প্রভোস্ট কোয়ার্টার, শিক্ষক-কর্মকর্তাদের জন্য ১০তলা আবাসিক ভবনসহ বিভিন্ন ভবনের উধ্বমুখী সম্প্রসারণ কাজ চলমান রয়েছে। পরমাণুবিজ্ঞানী ড. এম. এ. ওয়াজেদ মিয়া বিজ্ঞান ভবন, চিকিৎসা কেন্দ্র, ২য় ডরমেটরি ভবনের উর্দ্ধমুখী সম্প্রসারণকাজ প্রায় শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে।

আজ সোমবার ৪৩তম ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে সকাল থেকেই ক্যাম্পাস ছিলো উৎসব মুখর। প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে বর্ণাঢ্য আয়োজন করা হয়। 

সকালে প্রশাসন ভবন চত্বরে জাতীয় পতাকা ও বিশ্ববিদ্যালয় পতাকা উত্তোলন করার হয়। একই সময়ে স্ব-স্ব হলে প্রভোস্টগণ জাতীয় পতাকা ও হল পতাকা উত্তোলন করেন। পতাকা উত্তোলন শেষে শান্তির প্রতীক পায়রা ও আনন্দের প্রতীক বেলুন উড়িয়ে দিবসের কর্মসূচি উদ্বোধন করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম। এসময় উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ মাহবুবুর রহমান, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোঃ আলমগীর হোসেন ভূঁইয়াসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা এবং কর্মচারী।

এরপর সকলের অংশগ্রহণে প্রশাসন ভবন চত্বর থেকে একটি বর্ণাঢ্য র‌্যালি শুরু হয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে বাংলা মঞ্চে এসে শেষ হয়। র‌্যালি শেষে বাংলা মঞ্চে আলোচনাসভা, কেক কাটা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দিনটিকে আরও বেশি প্রাণবন্ত করে তোলা হয়। এরপর বাদ যোহর কেন্দ্রীয় মসজিদ ও হল মসজিদসমূহে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়।

আলোচনা সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর হোসেনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. বাকী বিল্লাহ বিকুল।

এসময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আব্দুস সালাম বলেন, ‘দেশের শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়ের কাতারে আমরা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়কে দেখতে চাই।  এদিন যেমন আনন্দের, তেমনি দায়িত্ব নেয়ার। মাতৃসম প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর করার অঙ্গীকার গ্রহণের দিন আজ। এজন্য নিজকে নিজেই সংশোধন করে আমরা যার-যার দায়িত্ব পালন করে যাবো। তিনি বলেন, করোনাকালেও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থমকে যায়নি। ভার্চুয়াল ক্লাসের পাশাপাশি সশরীরে পরীক্ষাসমূহও অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই দেড় বছরে ১২টি মাস্টার্স এবং ১৩টি অনার্স ব্যাচের চূড়ান্ত পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপিত ভাস্কর্যসমূহ নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের ইতিহাস ও চেতনার সাথে পরিচয় করিয়ে দেবার জন্য অপরিহার্য। এখানে ব্যাপক অবকাঠামোগত নির্মাণ ও সম্প্রসারণ কাজ এগিয়ে চলেছে। আমরা শুধু পঠন-পাঠনে সীমাবদ্ধ নই। দেশের শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়ের কাতারে আমরা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়েরকে দেখতে চাই। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, তোমরা আমারেকে ছাড়িয়ে যাও। অভিভাবক হিসেবে সেটাই হবে আমাদের জন্য গর্বের।

আরএইচ/

Views: 0

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন