মুহাম্মদ মাছুমুর রশিদ কাদেরী: যৌতুক কেবল একটি সামাজিক ব্যাধি নয়, যৌতুক দেয়া-নেয়া দুইটাই সমান অপরাধ। যৌতুক প্রথা ইসলামের দৃষ্টিতেও সম্পূর্ণ হারাম। অন্য দিকে, মাদক ও ভয়ংকর দুষ্ট ক্ষত। যা একজন তরুণ-যুবককে ভেতর থেকেই পঙ্গু ও নিঃশেষ করে দেয়। সামাজিক এ দুষ্ট ক্ষত নির্মূলে তথা মাদক, নারী নিপীড়ন ও যৌতুক প্রথা থামাতে বড় দায়িত্ব ও জিম্মাদারি কাঁধে নিয়ে আজ হতে ১২ বছর আগে ২০১০ সালে চট্টগ্রাম লালদীঘি ময়দান থেকে যৌতুক ও মাদক বিরোধী আন্দোলনের সূচনা করেন আলেমে দ্বীন, আন্তর্জাতিক বক্তা ও মুফাস্সিরে কুরআন পীরে তরিকত আল্লামা মুহাম্মদ আবুল কাশেম নূরী (মজিআ)। যৌতুক দিতে না পেরে সারা দেশে প্রতিদিন শত শত পরিবারে ভাঙন ধরছে। অসংখ্য সংসার তছনছ হয়ে যাচ্ছে যৌতুকের কারণে। শতাব্দির পর শতাব্দি ধরে দেশে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান সব সম্প্রদায়ে যৌতুক দেয়া-নেয়া চলছে। তবে যৌতুকের সুদূরপ্রসারী কুফল ও যৌতুক-নেয়া দেয়া যে সামাজিক অনাচার ও জুলুম, দেশবাসীকে পুরোপুরিভাবে আমরা জানাতে ব্যর্থ হয়েছি বলে এখনো যৌতুকমুক্ত দেশ গড়ে উঠেনি। টাকার জোরে ধনীরা পাত্র পক্ষকে দুই হাতে যৌতুক দিচ্ছেন, গাড়ি-ফ্রিজ-এসিসহ ৩/৪/৫ হাজার বরযাত্রী খাওয়াচ্ছেন। এমনকি লাখ কোটি টাকা বিয়ের খরচের জন্য মাঠে কোমর বেঁধে নামেন ধনীরা। আর এর কুফল ভোগ করেন গরিবরা। এতে চারপাশের গরীব দুস্থ অসহায় কন্যাদায়গ্রস্ত পরিবারের দুর্ভোগের শেষ থাকে না। ধনীদের দেখানো জুলুমতান্ত্রিক যৌতুকের আগ্রাসী জৌলুস থেকে গরিব পরিবারগুলোকে বাঁচাতে রাষ্ট্রকেই আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। এটাই আমাদের দাবি ও প্রত্যাশা সরকারের কাছে।
স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে উত্তরণে অতি সম্প্রতি জাতিসংঘ বিশেষ স্বীকৃতি দিয়েছে বাংলাদেশকে। ৫১ বছরে অনেক দূর এগিয়ে গেছে দেশ। কিন্তু কিছু মানুষের লোভী মানসিকতা ও নিষ্ঠুরতার কারণে যৌতুকের অভিশাপ থেকে নিষ্কৃতি মিলছে না। দেশ আরো বেশি এগিয়ে যেত, যদি গরিবদের ওপর নির্মমতা ও নিষ্ঠুরতা বন্ধ হত, যৌতুকের ব্যাধি থেকে দেশকে ও গরিব মানুষগুলোকে পরিত্রাণ দেয়া সম্ভব হত। তাই গরিবদের প্রতি সবাইকে সহমর্মী ও দরদী হয়ে যৌতুক প্রথা নির্মূলে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি। দেশে যৌতুক বিরোধী আইন আছে। কিন্তু বিদ্যমান আইনের কঠোর প্রয়োগ নেই। বাল্য বিয়ের বিরুদ্ধে যে আইন আছে, সারা দেশে তা মোটামুটি কার্যকর বলে বাল্য বিয়ে কিছুটা হলেও হ্রাস পেয়েছে। উপজেলা ইউএনও বা থানা প্রশাসন বিয়ের আসরে গিয়ে বাল্য বিয়ে বন্ধ করে দিচ্ছে, পাত্র ও কন্যা পক্ষকে জরিমানা করছে-ফলে বাল্য বিয়ের লাগাম টেনে ধরা সম্ভব হচ্ছে। অনুরূপভাবে যৌতুক দেয়া-নেয়া ঠেকাতে প্রশাসনের নজরদারি ও কঠোর পদক্ষেপ নেয়া আজ অনিবার্য জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। যৌতুক নিরোধে প্রশাসনিক ভূমিকা দৃশ্যমান নয় বলেই যৌতুক দেয়া-নেয়ার প্রবণতা থামানো যাচ্ছে না-এটাই এখন দেশের বাস্তবতা। যৌতুক বিরোধী আইনকে পাত্র ও কন্যা পক্ষ উভয়ের ক্ষেত্রে বলবৎ করতে হবে। যৌতুক দাতা ও যৌতুক গ্রহীতা উভয়কেই আইনের চোখে সমান অপরাধী হিসেবে গণ্য করতে হবে। যৌতুক প্রথা থামাতে গণ মাধ্যম ও মসজিদের ইমাম-খতিবরাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। সরকারও পারে যৌতুকবিরোধী গণ সচেতনতা গড়ে তুলতে। যৌতুকের বিরুদ্ধে সামাজিক সচেতনতা বাড়াতে সরকার, সামাজিক সংস্থা, ওয়ায়েজ বা বক্তা, মসজিদের ইমাম-খতিবসহ সব মানুষকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে কার্যকর উদ্যোগে নিতে গণ মাধ্যমের মাধ্যমে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
অন্য দিকে, মাদকে দেশ সয়লাব হয়ে যাওয়ায় ইয়াবাসহ যাবতীয় মাদকপণ্য পাচারকারীদের বিরুদ্ধে সরকারকে যেভাবে কঠোর ও অনমনীয় দেখা গেছে, কিন্তু ততটা সরকার সক্রিয় নয় যৌতুক প্রথা নির্মূলে। মাদক ও যৌতুক নির্মূলে গণ মাধ্যমের ভূমিকাও এ ক্ষেত্রে বড় জরুরি। অন্য দিকে, সরকারও পারে নানাভাবে যৌতুক ও মাদক বিরোধী গণ সচেতনতা গড়ে তুলতে। সামাজিক এ দুষ্ট ক্ষতগুলো নির্মূলে দেশের আলেম উলামা ও পীর মাশায়েখসহ সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সক্রিয় ভূমিকা রাখারও বিকল্প নেই। এ তাগিদে ও দায়িত্ববোধ থেকে যৌতুক ও মাদক বিরোধী আন্দোলনকে আজ তীব্রতর করে তুলেছেন ও সারা দেশে তা প্রসারিত করেছেন আল্লামা মুহাম্মদ আবুল কাশেম নূরী (মজিআ)।
লেখক: সদস্য সচিব, যৌতুক ও মাদক বিরোধী মহাসমাবেশ প্রস্তুতি কমিটি’২২।
সিএন/এমএ
চলমান নিউইয়র্ক ফেসবুক পেজ লাইক দিন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন