যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক নগরীতে লেখক , সাংবাদিক এবং প্রবাসী জনসমাজের প্রতিবাদ সভায় এসব কথা বলা হয়েছে। ১৮ মে মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রে এশীয় অভিবাসীদের টাইম স্কোয়ার নামে পরিচিত জ্যাকসন হাইটসের ডাইভারসিটি প্লাজায় এ প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্টিত হয়। সমাবেশে নিউইয়র্ক সহ আশেপাশের রাজ্য থেকে লেখক সাংবাদিক এবং জনসমাজের প্রতিনিধিরা যোগ দেন।
ডাইভারসিটি প্লাজার সমাবেশে হাতে লেখা পোস্টার হাতে লোকজন সমবেত হয়ে সমাবেশ শুরু করলে বিদেশী লোকজনকেও সংহতি জানাতে দেখা যায়। সাংস্কৃতিক সংগঠক তোফাজ্জল লিটনের সঞ্চালনায় প্রতিবাদ সমাবেশের শুরুতেই বক্তব্য রাখেন লেখক সাংবাদিক ইব্রাহীম চৌধুরী। দেশের একজন সাংবাদিকের উপর নিপীড়নের প্রতিবাদে প্রবাসী জনসমাজের প্রতিক্রিয়া এবং প্রতিবাদে নেমে আসার জন্য তিনি সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
প্রতিবাদ সমাবেশে সংহতি জানিয়ে উপস্থিত ছিলেন এবং বক্তৃতা প্রদান করেন প্রবীণ আইনজীবী শেখ আখতারুজ্জামান , বীর মুক্তিযোদ্ধা সুব্রত চৌধুরী, আমেরিকা বাংলাদেশ প্রেসক্লাব সভাপতি মোহাম্মদ সাঈদ, সাধারণ সম্পাদক মনজুরুল হক, যুক্তরাষ্ট্র মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার আব্দুল মুকিত চৌধুরী, লেখক সাংবাদিক এফ এফ এম মিসবাউজ্জামান, নিহার সিদ্দিকী, নাজমুল আহসান , আবু তাহের, শহীদুল ইসলাম ,শামিম আল আমীন , এ বি এম সালাহ উদ্দিন, শাখাওয়াত হোসেন সেলিম, এম বি তুষার , এইচ বি রিতা , রওশন হক, গোপাল সৈন্যাল, মাহফুজুর রহমান, বিশ্বজিত সাহা , রোকেয়া দীপা , রওশন আরা নীপা , শিরিল হাসান, জাঁকির হোসেন বাচ্চু, শামীম আহমেদ, মাহ্মুদুল চৌধুরী , আব্দুশ শহীদ , মনিজা রহমান, মাহবুবুর রহমান, ফকু চৌধুরী, ইমামা কাজই কাইয়্যুম প্রমুখ।
বাংলদেশ সুপ্রিম কোর্টের প্রবীণ আইনজীবী শেখ আখতারুজ্জামান তাঁর বক্তৃতায় বলেন , রোজিনা ইসলামের নামে যে মামলা দায়ের করা হয়েছে তার সারমর্ম দেখলেই ধারনা পাওয়া যায় এ মামলা বিদ্বেষপ্রসূত। এ মামলার কোন ভিত্তি নেই বলে তিনি উল্লেখ করেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা সুব্রত বিশ্বাস বলেন , স্বাধীন বাংলাদেশে একের এক এমন ঘটনার মধ্য দিয়ে দেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশে আজ সত্যয় জানার এবং জানানোর সব পথ বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। এর ভয়াবহ পরিণামের কথা তিনি স্মরণ করিয়ে দেন। যুক্তরাষ্ট্র মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার আব্দুল মুকিত চৌধুরী বলেছেন , আমরা যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি লুটেরাদের লুটপাটের জন্য নয়। যারা লুটপাট করছে , তাদের পরিচয় প্রকাশ করতে গিয়ে যখন সাংবাদিকতা বিপন্ন হয়ে উঠে তখন একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বসে থাকার সুযোগ নেই বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি রোজিনা ইসলামকে অবিলম্বে মুক্তি দেয়ার দাবী জানান।
প্রবীণ সাংবাদিক , সাপ্তাহিক পরিচয় পত্রিকার সম্পাদক নাজমুল আহসান বলেছেন , ওয়াশিংটন পোস্ট সহ আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে রোজিনা ইসলামকে গ্রেফতার ও হেনস্তা করা নিয়ে যেসব সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে , তা দেশের ভাবমূর্তিকে বিনষ্ট করেছে। এ নিয়ে সরকারকে ভাবতে হবে এবং রোজিনা ইসলামকে হেনস্তা ও হয়রানি করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য তিনি বাংলাদেশ সরকারের কাছে দাবী জানান।আমেরিকা বাংলাদেশ প্রেসক্লাব সভাপতি রোজিনার বিরুদ্ধে মামলার তীব্র নিন্দা জানান এবং সব সাংবাদিককে অন্যায়ের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান।
বর্ণমালা পত্রিকার সম্পাদক মাহফুজুর রহমান বলেন, রোজিনা ইসলামের উপর হামলা বাংলাদেশে সাহসী সাংবাদিকতার উপর হামলার নামান্তর। তিনি অবিলম্বে তাঁর মুক্তি দাবী করেন এবং এ ঘটনার জন্য দায়ীদেরও বিচারের মুখোমুখি করার দাবী জানান তিনি।
সাংবাদিক রওশন হক বলেন , আমরা সাংবাদিক নিপীড়নের তীব্র নিন্দা জানাই । সাংবাদিকতা করতে গিয়ে একজন নারী হেনস্তার শিকার হবে , এ কথা আমেরিকায় বসে ভাবতেও পারা যায় না উল্লেখ করে তিনি রোজিনার বিরূদ্ধে সাজানো মামালা প্রত্যাহারের দাবী জানান।
সাংবাদিক মনিজা রহমান রহমান বলেন , রোজিনা আমাদের সহকর্মিই শুধু নয়, আজ সারা বাংলাদেশের সব সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম হয়ে উঠেছে। তাঁর উপর হামলা মানে বাংলাদেশের সাংবাদিকতার উপর হামলা এসেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
টাইম টেলিভিশনের সিইও এবং বাংলা পত্রিকার সম্পাদক আবু তাহের বলেছেন,রোজিনা ইসলামকে অবিলম্বে মুক্তি দিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের চিহ্নিত লুটেরাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।
লেখক সাংবাদিক এইচবিরিতা বলেন , দেশের বাইরে থাকলেও আমরা রোজিনার ঘটনা নিয়ে নীরব থাকতে পারি না । সারা বিশ্বে নিপীড়িত সাংবাদিকদের প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠেছে রোজিনা ইসলামের ঘঠনা। সিনেমা পরিচালক রওশন আরা নীপা বলেন , মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশে , বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশের এমন ঘটনা ঘটবে তা চিন্তাই করা যায় না। তিনি অবিলম্বে রোজিনা ইসলামের মুক্তি দাবী করেছেন।
ডাইভার্সিটি প্লাজার সমাবেশে কিছুক্ষণ পরপর রোজিনা ইসলামে মুক্তির দাবীতে স্লোগান দেয়া হয়। অবিলম্বে মুক্তি দেয়া না হলে আন্দোলন অব্যাহত থাকবে বলে লেখক সাংবাদিক ও জনসমাজের প্রতিনিধিরা তাদের বক্তৃতায় উল্লেখ করেন।
উল্লেখ্য, পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য সোমবার দুপুরে বাসা থেকে বের হন প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলাম। এরপর স্বাভাবিক নিয়মে তিনি আর বাসায় ফিরতে পারেননি। ২৩ ঘণ্টার অবর্ণনীয় ঝড় সইতে হয়েছে সাম্প্রতিক বাংলাদেশের সাংবাদিকতায় পরিচিত মুখ এই নারী সাংবাদিককে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়ের করা মামলায় গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে কারাগারে পাঠানো হয়েছে তাঁকে।
সোমবার বেলা তিনটা থেকে সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে প্রায় ছয় ঘণ্টা আটকে রেখে নানাভাবে হেনস্তা করা হয় সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে। এ সময় তাঁর ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চলে। একপর্যায়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। লুটিয়ে পড়েন মেঝেতে। কিন্তু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে তাঁর তাৎক্ষণিক চিকিৎসার ব্যবস্থা হয়নি। রাত সাড়ে আটটার পর তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় শাহবাগ থানায়। সেখানে প্রায় ১১ ঘণ্টা পুলিশি হেফাজতে ছিলেন রোজিনা ইসলাম। এর মধ্যেই থানায় তাঁর বিরুদ্ধে অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে মামলা দেওয়া হয়।
আদালত কক্ষ থেকে হাজতখানায় নেওয়ার পথে সাংবাদিকদের রোজিনা ইসলাম বলেন, ‘আমার সঙ্গে অন্যায় আচরণ হচ্ছে
মঙ্গলবার সকাল পৌনে আটটায় থানা থেকে বের করে প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামকে নিয়ে যাওয়া হয় আদালতের হাজতখানায়। সেখানে প্রায় তিন ঘণ্টা ছিলেন তিনি। পরে এজলাসে নেওয়া হয়। শুনানি চলে প্রায় ৪০ মিনিট। শুনানি শেষে আবার হাজতখানায় নেওয়া হয় তাঁকে। এর আধা ঘণ্টা পর প্রিজন ভ্যানে করে তাঁকে আদালত থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে গাজীপুরের কাশিমপুরের মহিলা কারাগারে নেওয়া হয়। প্রিজন ভ্যান যখন কারাগারের ফটকে পৌঁছায়, তখন সময় বেলা ২টা ৪০ মিনিট। সোমবার থেকে শুরু হওয়া হেনস্তা, হয়রানি আর নির্যাতনের পর আইনি প্রক্রিয়া শেষে তাঁকে কারাগারে নিতে পেরিয়ে যায় প্রায় ২৩ ঘণ্টা।
এজলাস কক্ষে দুই পক্ষের আইনজীবীরা থাকলেও বেশির ভাগ গণমাধ্যমের কর্মীকে ঢুকতে দেয়নি পুলিশ। শুনানি শেষে আদালত কক্ষ থেকে হাজতখানায় নেওয়ার পথে সাংবাদিকদের দেখে রোজিনা ইসলাম বলেন, ‘আমার সঙ্গে অন্যায় আচরণ হচ্ছে।’
রোজিনা ইসলামকে গতকাল সকালে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে হাজির করে পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করে শাহবাগ থানা-পুলিশ। এর বিরোধিতা করেন তাঁর আইনজীবীরা। শুনানি নিয়ে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জসিম রিমান্ড আবেদন নামঞ্জুর করে রোজিনাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। একই সঙ্গে আগামীকাল বৃহস্পতিবার তাঁর জামিন আবেদনের ওপর অধিকতর শুনানির দিন ধার্য করেন। এ ছাড়া তাঁকে কারাবিধি অনুযায়ী চিকিৎসা দেওয়ারও আদেশ দিয়েছেন আদালত। মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ১৫ জুলাই দিন ঠিক করেছেন আদালত।
চলমান নিউইয়র্ক ফেসবুক পেজ লাইক দিন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন