শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

সার্বজনীন পেনশন স্কীম প্রবর্তন ও মানবতার জয়রথের সারথী শেখ হাসিনা

মঙ্গলবার, মার্চ ১, ২০২২

প্রিন্ট করুন

আবদুচ ছালাম: বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোই ছিল বঙ্গন্ধুর রাজনৈতিক লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। বাংলার গণ মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও বৈষম্যহীন সমাজ ব্যবস্থা প্রবর্তন করতে চেয়েছিলেন তিনি। পাকিস্তানের শোষন-নিপীড়ন ও বঞ্চনা থেকে বাঙালি জাতিকে মুক্তি দিতে তিনি ১৯৬৬ সালে ৬ দফা দিয়ে কঠোর আন্দোলনের দিকে জাতিকে ধাবিত করেছিলেন ও স্বাধীনতার বীজমন্ত্র বপন করেছিলেন। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ উত্তাল জন সমুদ্রের সামনে দাঁড়িয়ে ঐতিহাসিক যে ভাষণ রেখেছিলেন, সেখানে তিনি ভৌগলিক স্বাধীনতার পাশাপাশি অর্থনৈতিক মুক্তির কথাও বলেছিলেন। সমগ্র জাতিকে মুক্তির মোহনায় টেনে এনে তিনি কেবল একটি দেশই প্রতিষ্ঠা করেননি, একই সঙ্গে তার বিভিন্ন ভাষণে বাংলাদেশে অর্থনৈতিক ও সামাজিক সমতা বাস্তবায়নের দিকনির্দেশনা ও কর্মসূচি সুস্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করেছেন।

স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর প্রধান লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায় বাঙালির অর্থনৈতিক মুক্তি। বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো। তিনি জানতেন, বৈষম্যের অবসান ঘটাতে না পারলে অর্থনৈতিক মুক্তি তথা সোনার বাংলা গড়া যাবে না। তাই তিনি ১৯৭২ সালে দেশ গঠনে যে চার স্তম্ভ স্থির করেছিলেন, তাতে অর্থনৈতিক সমাজতন্ত্র সন্নিবেশিত। কিন্তু আমরা দুর্ভাগা জাতি, খুবই স্বল্প সময়ের মধ্যে দেশি বিদেশী চক্রান্তের কুফল হিসেবে বঙ্গবন্ধুকে হারিয়েছি ও জাতি হিসেবে আমাদের অগ্রগতিতো হয়নি বরং পিছিয়ে পড়ি। দীর্ঘ ২১ বছরের অন্ধকারের বুক চিড়ে ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠনের মধ্য দিয়ে আলোর পথে ফিরতে শুরু করে বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথেই রাষ্ট্র পরিচালনায় নেতৃত্ব দেন তারই কন্যা শেখ হাসিনা।

১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে বঙ্গবন্ধুর কন্যা দুস্থ মহিলা ও বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, বয়স্কদের জন্য শান্তি নিবাস, আশ্রয়হীনদের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্প ও একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পসহ বিভিন্ন কল্যাণমূলক কর্মসূচি ও ভূমিহীন, দুস্থ মানুষের জন্য সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচি চালু করেন। ২০০৯ সালে পুনরায় সরকার গঠনের পর শেখ হাসিনা পর্যায়ক্রমে তার গৃহিত সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচীর আওতা বাড়িয়ে দারিদ্র হ্রাসকরণে বিশ্বের কাছে অভাবনীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছেন। তিনি সবার জন্য শিক্ষার সুযোগ অবারিত করতে উপবৃত্তি চালু করেছেন, মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীর মধ্যে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ, মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রদান, কৃষকদের জন্য কৃষিকার্ড ও দশ টাকায় ব্যাংক হিসাব খোলা, বিনা জামানতে বর্গাচাষীদের ঋণ প্রদান, চিকিৎসা সেবার জন্য সারা দেশে প্রায় সাড়ে ১৬ হাজার কম্যুনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র স্থাপন করেছেন।

এবার তিনি জরুরী ভিত্তিতে দেশের সরকারী বেসরকারকারী সব খাতের ষাটোর্ধ প্রবীন ব্যক্তিদের জন্য একটি সার্বজনীন পেনশন আইন তৈরীর নির্দেশ দিয়েছেন। অর্থ মন্ত্রনালয় ইতিমধ্যেই প্রবীনদের জন্য সার্বজনীন পেনশন স্কীম চালুকরণের কৌশলপত্র শেখ হাসিনার নিকট পেশ করেছেন ও তিনি এর উপর বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। এতে বঙ্গবন্ধুন কন্যা এক দিকে যেমন মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির বহি:প্রকাশ ঘটিয়েছেন, তেমনি সার্বজনীনভাবে সামাজিক সুরক্ষা বলয় তৈরি করতে তার সরকারের শুভ অঙ্গীকারকে আবারো সমুন্নত করে তুলে ধরেছেন।

বাঙালির সুদীর্ঘ সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় ঐতিহ্যে পরিবার ও সমাজে তাদের প্রবীণ সদস্যদের যত্ন নেয়ার রীতি বা শুভ প্রয়াস সব সময় ছিল। কিন্তু ক্ষয়িষ্ণু সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধ, পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রভাব ও অন্যান্য কারণে ঐতিহ্যবাহী যৌথ পারিবারিক ও সামাজিক দেখাশোনার পদ্ধতি অনেকটাই ভেঙ্গে পড়েছে এখন। বাংলাদেশের অধিকাংশ প্রবীণ মানুষই এখন অপর্যাপ্ত আর্থিক সংস্থান, বার্ধক্যজনিত রোগ ও যথোপযুক্ত সেবা ও চিকিৎসা সুবিধার অভাব, একাকিত্ব ও অবহেলা, বঞ্চনা ও আর্থ-সামাজিক নিরাপত্তাহীনতার মত অনেকগুলো মৌলিক মানবিক সমস্যার শিকার হচ্ছেন। এখন প্রায়শই দেখা যায় যে, বয়স্ক লোকদের বোঝা হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে।

মানুষের গড় আয়ু বাড়ার কারণে প্রবীণদের সংখ্যা যেমন বাড়ছে, বিপরীতে নগরায়নের ফলে প্রবীণদের আর্থিক ও সামাজিকভাবে নিরাপত্তাহীন হওয়ার ঝুঁকিও দিনে দিনে বেড়েই চলেছে। দেশে এখন ষাটোর্ধ ব্যাক্তির সংখ্যা প্রায় এক কোটি। তার মধ্যে অধিকাংশই এ ধরনের মানবিক সমস্যায় জর্জড়িত। পেটের দায়ে অনেক বৃদ্ধকেই ভিক্ষা করতে কিংবা অন্যের দয়া প্রার্থনা করতে দেখা যায়। শারীরিক সক্ষমতা না থাকা সত্ত্বেও প্রবীণদের অনেককেই ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত হতেও দেখা যায়। হতাশার মধ্যে ও রোগ-শোকে ভুগে কোন সেবা ও সাহচার্য ছাড়াই দিন কাটায় দেশের প্রবীনদের বিরাট একটি অংশ। তাই প্রবীণদের শেষ জীবনে আর্থিক সুরক্ষায় সার্বজনীন পেনশন পদ্ধতি প্রবর্তন শেখ হাসিনার একটি মানবিক ও যথোপযুক্ত পদক্ষেপ।

বয়সকালে সবাই যেন আর্থিক ও সামাজিক সুরক্ষা পান, সে জন্য সার্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করার মহতী উদ্যোগ শেখ হাসিনার মহানুভবতার অনন্য এক উজ্জল দৃষ্টান্ত। এখানে বলা বাহুল্য, দেশে শুধু সরকারি কর্মচারীরা পেনশন পেলেও বেসরকারি চাকরিজীবীসহ সবাইকে পেনশনের আওতায় আনার চিন্তা একমাত্র শেখ হাসিনাই করতে পেরেছেন। তাই তিনি নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি তথা ইশতেহারে সুষ্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছিলেন। আর তিনি প্রতিনিয়ত প্রমাণ করেই চলেছেন, শেখ হাসিনা যে প্রতিশ্রুতি জনগণের কাছে রাখেন, তিনি তা পূরণ করেই ছাড়েন।

লেখক: রাজনীতিবিদ ও উন্নয়ন সংগঠক, কোষাধ্যক্ষ, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ, সাবেক চেয়ারম্যান, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ, প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, মাবিয়া-রশিদিয়া ফাউন্ডেশন।

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন