শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫

শিরোনাম

সাহাবিদের পরিচয় ও মর্যাদা

মঙ্গলবার, জুলাই ৮, ২০২৫

প্রিন্ট করুন

মুসলিম সমাজে বহুল পরিচিত একটি শব্দ ‘সাহাবি’। আরবি ভাষার এ শব্দটির অর্থ সঙ্গী-সাথি। পরিভাষায় যারা ঈমান অবস্থায় নবীজি (সা.)-এর সাক্ষাৎ লাভ করেছেন এবং ঈমান নিয়ে ইন্তেকাল করেছেন তাদের সাহাবি বলা হয়। সাহাবির সংখ্যা ১ লাখ ১৪ হাজারের মতো। এ সংখ্যা নিয়ে মতপার্থক্য থাকলেও লক্ষাধিক হওয়ার ক্ষেত্রে সবাই একমত। নবী-রাসুলগণের পরই সাহাবায়ে কেরামদের মর্যাদা। নবী করিম (সা.)-এর সংস্পর্শ ও সাহচর্যের কারণে তারা খাঁটি ও পূর্ণাঙ্গ মুমিনের মর্যাদা লাভ করেছেন। সাহাবায়ে কেরামগণ হলেন সত্যের মাপকাঠি। তাদের মাধ্যমেই রক্ষিত হয়েছে পবিত্র কুরআন ও হাদিস। তাদের অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছেন আল্লাহর রাসুল (সা.)।

আল্লাহর সন্তুষ্টির ঘোষণা

পৃথিবীতে থাকা অবস্থায়ই আল্লাহ তায়ালা সাহাবিদের প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। পবিত্র কুরআনে নির্দ্বিধায় ঘোষণা করেছেন, ‘আল্লাহ মুমিনদের (সাহাবিদের) প্রতি সন্তুষ্ট হলেন, যখন তারা বৃক্ষের নিচে আপনার কাছে শপথ করল। আল্লাহ অবগত ছিলেন, যা তাঁদের অন্তরে ছিল, অতঃপর তিনি তাঁদের ওপর প্রশান্তি নাজিল করলেন এবং তাঁদের আসন্ন বিজয় পুরস্কার দিলেন’ (সুরা ফাতহ : ১৮)। আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন, ‘যারা সর্বপ্রথম হিজরতকারী ও আনসারদের মধ্যে পুরোনো এবং যাঁরা তাদের অনুসরণ করেছে, আল্লাহ তাঁদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তাঁরাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে। আর আল্লাহ তাঁদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন এমন জান্নাত যার তলদেশ দিয়ে প্রবাহিত আছে প্রস্রবণগুলো। সেখানে তাঁরা থাকবে চিরকাল। এটাই হলো বড় সফলতা। এখানে সাহাবায়ে কেরামদের মর্যাদার কথা বোঝানো হয়েছে।’ (সুরা তওবা : ১০০)

শ্রেষ্ঠত্বের ঘোষণা

সাহাবায়ে কেরাম উম্মতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ মানুষ। আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর সংস্পর্শে যারা এসেছেন, তারা খাঁটি মানুষে পরিণত হয়েছেন। রাসুল (সা.) তাদের প্রতি খুশি হয়ে স্বীকৃতিস্বরূপ মর্যাদা ঘোষণা করেছেন। আবদুল্লাহ (রা.) সূত্রে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন, ‘সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ হলো আমার যুগের মানুষ (সাহাবিগণ), এরপর তৎসংলগ্ন যুগ (তাবেয়িগণ), তারপর তৎসংলগ্ন যুগ (তাবে তাবেয়িগণ)।’ (বুখারি : ৩৩৮৯)

উম্মতের কল্যাণবাহী দল

আবু মুশা আশআরি (রা.) বলেন, একদিন রাসুল (সা.) আসমানের দিকে মাথা তুলে তাকালেন। আসলে তিনি প্রায়ই ওহির অপেক্ষায় আসমানের দিকে মাথা তুলে দেখতেন। তারপর বললেন, তারকারাজি আসমানের জন্য নিরাপত্তাস্বরূপ। যেদিন ওই গ্রহগুলো চলে যাবে, সেদিন আসমানে তাই ঘটবে, যার প্রতিশ্রুতি আগেই দেওয়া হয়েছে, (অর্থাৎ ধ্বংস হয়ে যাবে) আর আমি হলাম আমার সাহাবিদের জন্য নিরাপত্তাস্বরূপ। আমি যখন চলে যাব, তখন আমার সাহাবিদের মধ্যেও তা সংঘটিত হবে, যার প্রতিশ্রুতি আগেই দেওয়া হয়েছে। (অর্থাৎ যুদ্ধবিগ্রহ) আর আমার সাহাবিরা হলেন আমার উম্মতের জন্য নিরাপত্তাস্বরূপ। যখন আমার সাহাবিরা চলে যাবে, তখন আমার উম্মতের ওপর তাই নেমে আসবে, পূর্বেই যার প্রতিশ্রুত দেওয়া হয়েছে (অর্থাৎ বেদাত, অনৈসলামিক কার্যকলাপ বৃদ্ধি পাবে এবং কল্যাণ চলে যাবে আর অকল্যাণের আগমন ঘটবে)। (মিশকাত : ৫৬৩২)

আকাশের নক্ষত্রের মতো তারা

সাহাবিরা মুসলমানদের চলার পথের আলো ও আদর্শ। সমুদ্রে বা মরুভ‚মিতে রাতের সফরে যেমন নক্ষত্রের হিসাব করে মুসাফিররা পথ চলত, তেমনি মুসলমানরা যদি সাহাবিদের জীবনী অনুসরণ করে পার্থিব জীবন কাটায় তা হলে সঠিক পথে থাকবে। হজরত ওমর ইবনে খাত্তাব (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি-আমি আমার প্রভুকে আমার ওফাতের পর আমার সাহাবিদের মধ্যে মতবিরোধ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি ওহির মাধ্যমে আমাকে জানালেন যে, হে মুহাম্মদ! আমার কাছে আপনার সাহাবিদের মর্যাদা হলো আসমানের তারকারাজির মতো। এর একটি অপরটি থেকে উজ্জ্বল। অথচ প্রত্যেকটির মধ্যে আলো রয়েছে। তাদের মতামত থেকে যে কেউ একটি অভিমত গ্রহণ করবে, সে আমার কাছে হেদায়তের ওপর প্রতিষ্ঠিত। হজরত ওমর (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) আরও ইরশাদ করেন, আমার সাহাবিরা হলেন তারকারাজির ন্যায়। অতএব তোমরা এদের যে কাউকেই অনুকরণ করবে হেদায়েত পাবে। (মিশকাত : ৫৬৪০)

সাহাবিদের মন্দ বলা নিষেধ

মুসলমানও কখনো গালমন্দ করবে না। সাহাবিদের এ ক্ষেত্রে আরও বেশি সতর্ক থাকতে হবে। ইসলামের ভিত্তি, কুরআন-হাদিস ইত্যাদির প্রধান বাহক সাহাবায়ে কেরাম। তাদের আঘাত করলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ইসলাম। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, আল্লাহ তায়ালা রিসালাতের জন্য আমাকে নির্বাচিত করেছেন। আর আমার সাহচর্যের জন্য আমার সাহাবিদের নির্বাচন করেছেন। তাঁদের মধ্যে কতিপয়কে আমার উজির, কাউকে আমার জামাতা ও শ্বশুর নির্বাচন করেছেন।

যারা তাঁদের মন্দ বলবে, তাদের ওপর আল্লাহর, ফেরেশতার ও সব মানুষের লানত নেমে আসবে‌। তাদের ফরজ ও নফল কোনো ইবাদতই কেয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা কবুল করবেন না (ইমাম করতুবি (রহ.), আহকামুল কুরআন : ৮/১৯৬)। হজরত আবু সাঈদ খুদুরি (রা.) সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন, তোমরা আমার সাহাবিদের গালমন্দ করো না। কেননা আল্লাহর পথে তোমাদের কারও উহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণ দান করেও সাহাবির এক মুদ (প্রায় এক সের) বা এর অর্ধেকের সমতুল্য হবে না। (মিশকাত : ৫৬৩১)

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন