শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

সুস্থ থাকতে পুষ্টিবিজ্ঞানসম্মত সুষম খাবারের বিকল্প নেই

রবিবার, আগস্ট ৬, ২০২৩

প্রিন্ট করুন

মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। তার রয়েছে স্বাধীনতা। কোনো কোনো ক্ষেত্রে অবাধ স্বাধীনতা। চিন্তার স্বাধীনতা, কর্মের স্বাধীনতাসহ পছন্দমতো খাদ্য গ্রহণেরও স্বাধীনতা।

মানুষ ছাড়া প্রতিটি স্থলচর, জলচর, উভচর ও বায়ুচর প্রাণীর জন্যে রয়েছে নির্দিষ্ট খাদ্যসম্ভার। তারা সেই সীমারেখা কখনোই লঙ্ঘন করে না। বলা যায়, প্রতিটি প্রাণীই তার জন্যে নির্ধারিত খাবারেই সন্তুষ্ট এবং তা থেকেই সে লাভ করে প্রয়োজনীয় পুষ্টি এবং শক্তি। বছরের ৩৬৫ দিনই চতুষ্পদ প্রাণীর মাংস খেয়েও বাঘ বা সিংহের কোনো ক্ষতি হচ্ছে না। আবার প্রতিদিন সামান্য ঘাস, খড় বা ভুসি থেকেই প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাচ্ছে বিশালকায় গরু।

এখন প্রশ্ন হলো, মানুষের খাবারের সীমারেখা কী? যেহেতু স্রষ্টা মানুষকে সহজাত বুদ্ধি-বিবেক দিয়েছেন, দিয়েছেন হারাম-হালালের জ্ঞান, দিয়েছেন কল্যাণ-অকল্যাণের জ্ঞান; সেজন্যেই মানুষকে জানতে হবে—কোন খাবার তার জন্যে উপকারী, কোনটি ক্ষতিকর, কোনটি পুষ্টিকর আর কোন খাবার দেহকে রোগগ্রস্ত করে তুলবে?

আরো জানতে হবে—সে কী খাবে, কী খাবে না; কতটুকু খাবে, কখন খাবে এবং কেন খাবে। খাবার স্রষ্টার দেয়া অমূল্য সম্পদ। কিন্তু এই সম্পদের যথাযথ ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই খাদ্য সম্পর্কে আমাদের প্রত্যেকেরই প্রাথমিক জ্ঞানটুকু থাকতে হবে।

খাদ্যের উপাদানসমূহ সব ধরনের খাবারকে বিশ্লেষণ করলে ৮টি উপাদান পাওয়া যায়।

১. শর্করা (কার্বোহাইড্রেট)

২. আমিষ (প্রোটিন)

৩. চর্বি (ফ্যাট)

৪. ভিটামিন

৫. মিনারেল

৬. ফাইটোকেমিক্যাল

৭. আঁশ (ফাইবার)

৮. পানি

সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্যে একজন মানুষের দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় এই ৮টি উপাদান থাকা অত্যাবশ্যক। আর এজন্যে প্রয়োজন সুষম খাবার এবং তা হতে হবে সঠিক পরিমাণে। অধিকাংশ মানুষ পারিবারিক খাদ্যাভ্যাসে অভ্যন্ত হয়ে সেটাই শ্রেষ্ঠ খাবার মনে করে খেতে থাকে। কিন্তু পুষ্টিবিজ্ঞানসম্মত সুষম খাবারই হচ্ছে শ্রেষ্ঠ খাবার।

উপরোক্ত ৮টি উপাদান যথাযথভাবে পেতে হলে আমাদের সর্বপ্রথম জানতে হবে রান্নার সঠিক পদ্ধতি সম্পর্কে। প্রতিটি প্রাণী তার খাবার গ্রহণ করে থাকে প্রাকৃতিক অবস্থায়। অর্থাৎ যে খাবার প্রকৃতিতে যে রূপে উৎপাদিত হয় বা পাওয়া যায়, সেভাবেই। মানুষ এ-ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম।

মানুষই একমাত্র সৃষ্টি, যে তার খাবার গ্রহণের পূর্বে কোনো কোনো খাবারের প্রাকৃতিক অবস্থা বদলে ফেলে। এই বদল কখনো আংশিক, কখনো পুরোপুরি। ফলে সেই খাবারের সবগুলো উপাদান থেকে আমরা আংশিক বা কখনো কখনো সম্পূর্ণরূপে বঞ্চিত হই। ফলশ্রুতিতে আমাদের মধ্যে সে-সব উপাদানের স্বল্পতা বা অভাব দেখা দেয়। দিনের পর দিন এটা ঘটতে থাকলে অনিবার্যভাবেই শরীরে সৃষ্টি হয় নানা জটিলতা ও রোগব্যাধি।

খাবারের প্রাকৃতিক অবস্থা বদলের ঘটনাটি ঘটে মূলত খাবার রান্না করার সময়। তাই রান্নার পদ্ধতিসমূহ জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

রান্নার পদ্ধতিসমূহ

সেদ্ধ

সাধারণত ভাত মাছ মাংস ডিম ডাল সবজি ইত্যাদি সেদ্ধ করে রান্না করা হয়। এ-ক্ষেত্রে পানির তাপমাত্রা থাকে ১০০° সেন্টিগ্রেড। সেদ্ধ করার ফলে এসব খাবার সহজে খাওয়া যায় এবং সহজে হজমও হয়। তবে সবজি রান্নার ক্ষেত্রে অধিক সময় সেদ্ধ করলে অনেক ভিটামিন, মিনারেল, এনজাইম, ফাইটোকেমিক্যাল ও আঁশ তাদের গুণাগুণ ও কার্যকারিতা হারায়। তাই সবজি অর্ধসেদ্ধ করে খাওয়া সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর।

ভাপে সেদ্ধ

এ-ক্ষেত্রে ফুটন্ত পানির বাষ্প দিয়ে বা ভাপে রান্না করা হয়। কোনো কোনো সবজি এ পদ্ধতিতে রান্না করা যায়। যেমন: ব্রকোলি। এই পদ্ধতিতে রান্না করলে খাবারের ভিটামিন মিনারেল ফাইটোকেমিক্যাল ও আঁশ নষ্ট হয় না। এ ছাড়া খাবারের স্বাদ, রং ও গন্ধ অক্ষুণ্ণ থাকে।

প্রেসার কুকারে রান্না

সাধারণত ভাত ডাল আলু মাংস এই পদ্ধতিতে রান্না হয়ে থাকে। এ-ক্ষেত্রে তাপমাত্রা থাকে ১০০- ১২১° সেন্টিগ্রেড। এতে অল্প সময়ে রান্না করা সম্ভব হয়। কোনো জীবাণু থাকলে তা ধ্বংস হয়ে যায়। তবে এই পদ্ধতিতে রান্নার ফলে কিছু ভিটামিন, মিনারেল, ফাইটোকেমিক্যাল ও আঁশ নষ্ট হয়ে যায়।

গ্রিল করে রান্না

এই পদ্ধতিতে সাধারণত মুরগি, ভুট্টা, মাছ ইত্যাদি রান্না করা যায়। এ ছাড়া এভাবে বেগুন ও টমেটো পুড়িয়ে ভর্তা করে খাওয়া যায়। এ-ক্ষেত্রে সরাসরি আগুনে ধরে রান্না করা হয়। এতে খাবারের স্বাদ বাড়ে, দারুণ গন্ধ ছড়ায়। এই পদ্ধতিতে তেল ছাড়াও রান্না করা সম্ভব।

তেলে ভাজা

এটি সাধারণত দুধরনের।

হালকা তেলে ভাজা পরোটা অমলেট কাটলেট পপকর্ন ইত্যাদি । ডুবো তেলে ভাজা সিঙ্গাড়া সমুচা লুচি পুরি চিপস পাকোড়া

চিকেন ফ্রাই ইত্যাদি ।

এই পদ্ধতিতে রান্না অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন ও সুস্বাদু হয়। কিন্তু ভোজ্যতেল পুড়ে তৈরি হয় ট্রান্স ফ্যাট যা হৃদরোগ, হার্ট অ্যাটাক, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। শরীরে চর্বি জমে। ওজন বাড়ে। এ ছাড়া এতে খাবারের পুষ্টিগুণও চলে যায়।

টোস্টিং

সাধারণত এই পদ্ধতিতে স্যান্ডউইচ ও পাউরুটির টোস্ট তৈরি করা হয়।

বেকিং

এই পদ্ধতিতে ওভেন বা এই জাতীয় সামগ্রী ব্যবহার করে রান্না করা হয়। এ-ক্ষেত্রে তাপমাত্রা থাকে ১২০°-১৩০° সেন্টিগ্রেড। এই পদ্ধতিতে পিজা পাউরুটি বিস্কুট কেক ইত্যাদি তৈরি করা হয়। এতে ভিটামিন, মিনারেল, ফাইটোকেমিক্যাল, আঁশ নষ্ট হয়ে যায়।

মাইক্রোওয়েভে রান্না

এটি রান্নার সম্পূর্ণ নতুন এক পদ্ধতি। এ-ক্ষেত্রে ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ওয়েভ তৈরি হয়, যার ওয়েভলেংথ ২৫০ × ১০৬ × ১০৯ অ্যাঙ্গস্ট্রম। এই পদ্ধতিতে রান্না সম্পন্ন হয় মাইক্রোওয়েভ রেডিয়েশনে। তবে এই পদ্ধতিতে রান্নার ব্যাপারে বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন—এতে ক্যান্সারের ঝুঁকি তৈরি হয়।

অতএব রান্নার সকল পদ্ধতি বিবেচনায় এনে আমাদের এমনভাবে খাবার তৈরি করতে হবে যেন রান্নার পরেও খাবারের পুষ্টিমান অক্ষুণ্ণ থাকে। আমাদের লক্ষ্য থাকবে যে-সব খাবার কাঁচা খাওয়া যায়, সেগুলো কাঁচা খাওয়া। আর যেগুলো রান্না ছাড়া খাওয়া সম্ভব নয় সেগুলো পরিপূর্ণ সেদ্ধ করা। তবে শাকসবজি অর্ধসেদ্ধ এবং অল্প আঁচে রান্না করে খাওয়া উচিত।

কাঁচা খাওয়া সম্ভব এমন খাবারগুলো হলো : ফল, সালাদ, সবুজ পাতা (ধনে লেটুস পুদিনা), মটরশুঁটি, ছোলা, বিভিন্ন প্রকার বীজ (সূর্যমুখী তিল তিসি চিয়া তরমুজ মিষ্টিকুমড়া), বাদাম ।

→ পরিপূর্ণ সেদ্ধ করে খেতে হবে : ভাত, আলু, মাছ, মাংস, ডাল।

→ অর্ধসেদ্ধ করে খাওয়া উচিত : সব ধরনের শাকসবজি ইত্যাদি।

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন