বুধবার, ০৮ জানুয়ারী ২০২৫

শিরোনাম

সুস্থ হয়ে দেশে ফেরার জন্য দেশবাসীর দোয়া চাই

সোমবার, জানুয়ারী ৬, ২০২৫

প্রিন্ট করুন

ঢাকা: লন্ডন ক্লিনিকে ডা. প্যাট্রিক কেনেডির তত্ত্বাবধানে উন্নত চিকিৎসা নেবেন বিএনপি চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। লন্ডনে যাওয়ার প্রাক্কালে আমার দেশ-এর সঙ্গে এক সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎকারে খালেদা জিয়া দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘ইনশাআল্লাহ সুস্থ হয়ে আমি আমার দেশ ও জনগণের মাঝে ফিরে আসব। আমার জন্য আপনারা সবাই দোয়া করুন।’ ফ্যাসিস্টদের পতনের পর দেশের মানুষ মুক্ত পরিবেশে আছে এবং সহসাই বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক রীতি চালু হবে এই আশা প্রকাশ করেন তিনি।

শনিবার রাত ১২টায় এই প্রতিবেদক খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তার বাসভবন ফিরোজায়। তিনি আমার দেশ পুনঃপ্রকাশ ও সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে জেনে খুশি হন। ২২ ডিসেম্বর প্রকাশিত আমার দেশ-এর উদ্বোধনী সংখ্যা প্রথম প্রেস থেকে নিয়ে খালেদা জিয়াকে পাঠান সম্পাদক মাহমুদুর রহমান।

পতিত শেখ হাসিনা সরকারের রোষানলের শিকার হয়ে প্রায় ১২ বছর আমার দেশ বন্ধ ছিল। খালেদা জিয়া বলেন, সম্পাদক মাহমুদুর রহমানসহ পত্রিকার সাংবাদিকরা কষ্ট ভোগ করেছেন। সবার প্রতি দোয়া ও শুভ কামনা জানাই।

খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতের সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ও তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, আরাফাত রহমান কোকোর (মরহুম) স্ত্রী সৈয়দা শর্মিলা রহমান, খালেদা জিয়ার বড় বোন ও মেজ বোনের ছেলে সাইফুল ইসলাম ডিউক ও ডন।

এর আগে মেডিকেল বোর্ডের প্রধান অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদার ও সদস্য অধ্যাপক এফএম সিদ্দিকী খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন। ওয়েটিং রুমে আলাপকালে সৈয়দা শর্মিলা রহমান (আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী) জানান, লন্ডনে বড় ছেলে তারেক রহমান, পুত্রবধূ ডা. জোবায়দা রহমান ও জায়মাসহ নাতি-নাতনীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ হবে এ নিয়ে আম্মু (খালেদা জিয়া) উদ্বেলিত। দীর্ঘ ৭ বছর পর তাদের সঙ্গে দেখা হচ্ছে খালেদা জিয়ার।

খালেদা জিয়ার চিকিৎসা হবে লন্ডন ক্লিনিকে। এটি অত্যাধুনিক চিকিৎসার একটি অ্যাডভান্স সেন্টার। ডা. প্যাট্রিক কেনেডির তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা চলবে। চিকিৎসার সামগ্রিক সমন্বয় করবেন তার পুত্রবধূ হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. জোবায়দা রহমান এবং অধ্যাপক ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে ৬ সদস্যের মেডিকেল টিম। যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ কয়েকজন চিকিৎসকও লন্ডনে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।

খালেদা জিয়া ৭ জানুয়ারি মঙ্গলবার রাতে লন্ডনে যাবেন কাতারের আমীরের পাঠানো সর্বাধুনিক চিকিৎসা সুবিধা সংবলিত এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে। এটি একটি এয়ারবাস (এ-৩১৯)। সোমবার সকালে এয়ার বাসটি ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবে।

বিমানটি এলে মেডিকেল টিমের সদস্যরা পরিদর্শনে যাবেন। বিমানটি দোহায় যাত্রাবিরতি করবে রিফুয়েলিংয়ের জন্য। বুধবার সকালে হিথ্রো বিমানবন্দরে পৌঁছলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান পরিবারের সদস্যবৃন্দ ও যুক্তরাজ্যের নেতৃবৃন্দকে নিয়ে খালেদা জিয়াকে অভ্যর্থনা জানাবেন। এরপর তিনি গাড়ি চালিয়ে মাকে নিয়ে সরাসরি চলে যাবেন লন্ডন ক্লিনিকে। ক্লিনিকের প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুটে তিনি থাকবেন।

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া হৃদরোগ, লিভার সিরোসিস ছাড়াও দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, চোখের সমস্যাসহ নানা অসুস্থতায় ভুগছেন। তার হার্টে রিং পরানো ও পেসমেকার লাগানো আছে। হাঁটুতেও দুবার অস্ত্রোপচার হয়েছে।

ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন চিকিৎসাকালে সার্বক্ষণিক তার সঙ্গে থাকবেন। তিনি জানান, ম্যাডাম জিয়ার মাল্টিপল কোমর্বিডিটিজ আছে। সব জিনিস বিবেচনায় নিয়েই আমরা তার সফর পরিকল্পনা করেছি। বিমান টেকঅফ ও ল্যান্ডিংয়ে একটা নেগেটিভ প্রেশার মেইনটেইন করে সেটা সাসটেইন করার বিষয় চিকিৎসকরা বিবেচনায় নিয়ে প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন।

উল্লেখ্য, জুলাই-আগস্টের ছাত্র গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতন ও দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর কারাগার থেকে ৭ আগস্ট মুক্ত হন খালেদা জিয়া। গণতন্ত্রের সংগ্রামে খালেদা জিয়ার ত্যাগ অপরিসীম। নব্বইয়ে এরশাদের ৯ বছরের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে তিনি গণতন্ত্র মুক্তির বীরত্বপূর্ণ সংগ্রামে নেতৃত্ব দেন। জনগণ তাকে ‘দেশনেত্রী’ ও ‘আপসহীন নেত্রী’ উপাধিতে ভূষিত করে। ১/১১’র মঈন-মাসুদ চক্রের সেনাসমর্থিত সরকারের বিরাজনীতিকরণ চক্রান্তের বিরুদ্ধেও হিমালয়সম দৃঢ়তা নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন অসামান্য নারী খালেদা জিয়া।

তার সেই দৃঢ়তাই সেদিন অবরুদ্ধ গণতন্ত্রকে মুক্ত হতে সাহস ও শক্তি জুগিয়েছিল। গত ১৫ বছরের শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে তিনি লড়াই করেছেন। তার ভূমিকাকে স্তব্ধ করে দিতে হাসিনার সরকার খালেদা জিয়ার উপর নির্যাতনের স্টিমরোলার চালিয়েছিলেন।

খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ৩৭টি মিথ্যা ও উদ্দেশ্যমূলক মামলা দেওয়া হয়েছিল। জিয়া অরফানেজ ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় ফরমায়েশী রায়ে অন্যায় শাস্তির ব্যবস্থা করার মাধ্যমে ২০১৮ সালের ‘নিশিরাতের ভোট’ ও ২০২৪ সালের ‘ডামি নির্বাচন’ করেছিল পতিত শেখ হাসিনার সরকার। জেলে খালেদা জিয়াকে নির্মম নির্যাতন ভোগ করতে হয়েছে।

খালেদা জিয়ার মিথ্যা মামলাগুলো আদালতে খারিজ হয়েছে। মুক্ত খালেদা জিয়া প্রায় একযুগ পর গত ২১ নভেম্বর ২০২৪ সশস্ত্র বাহিনী দিবসে তাদের আমন্ত্রণে সেনাকুঞ্জে যান। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং অনুষ্ঠানে বক্তৃতায় বলেন, ‘একযুগ ধরে তিনি এই মহাসম্মেলনে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পাননি। আমরা সবাই আনন্দিত ও গর্বিত যে, খালেদা জিয়াকে সেই সুযোগ দিতে পেরেছি।’ চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের ছাত্র নেতারাও তার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন এবং গণতন্ত্রের সংগ্রামে তার ভূমিকার উল্লেখ করে তারা বলেন, ‘আপনার আপসহীন মনোভাব আমাদের অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।’

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন