নিউজ ডেস্ক: বিয়ে একটি মধুর সম্পর্ক গড়ার অন্যতম উপায়। এটি মানসিকতার প্রশান্তি দেয়। এই বিবাহের জন্য প্রতীক্ষায় থাকে প্রতিটি যুবক-যুবতীর জীবন। অপেক্ষার প্রহর গুনতে-গুনতে এক সময় ধরা দেয় কাঙ্ক্ষিত এই বিবাহ। যদিও গুটি কয়েকজনের ক্ষেত্রে থেকে যায় অধরা। বিবাহের পর অনেকের জীবনেই অর্জিত হয় অনাবিল সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি। নিয়ে আসে একটি কোমল-স্বচ্ছ জীবন। কিন্তু, কখনও কারও জীবনে নিয়ে আসে হতাশা ও অস্থিরতা। স্বামী স্ত্রীর যে মধুর সম্পর্ক হওয়ার কথা ছিল, সেটি আর বহাল থাকে না। কখনও তাসের ঘরের মতো ভেঙ্গে যায় তার সোনালি দিনের সম্পর্ক। তার জীবনের সেই সোনাঝরা দিন স্মৃতি হয়ে যায়।
ইসলামি ধর্মে তালাকের মাধ্যমে ইতি ঘটে স্বামী-স্ত্রীর সেতুবন্ধন। কিন্তু ইসলামি শরিয়ত নির্দেশ দেয়,প্রাথমিকভাবে তালাক না দিতে, ধৈর্যের শিক্ষা গ্রহণ করতে। এ জন্য ঘোষণা করেছে, أبغض المباحات الطلاق অর্থাৎ বৈধ বিষয়গুলোর মধ্যে সবচেয়ে মন্দ বিষয় হল- তালাক দেয়া।
ইসলাম ধর্ম প্রাথমিকভাবে তালাক না দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। ধৈর্যধারণের শিক্ষা দিয়েছে। ধৈর্যধারণ করার পরও যদি স্ত্রী অবাধ্য থেকে যায়,তখন স্ত্রীকে তালাক প্রদানের অনুমতি দিয়েছে। তবে, তালাক প্রদানের ক্ষেত্রে ইসলাম একটি সুন্দর পরামর্শ দিয়েছে- যা সর্বজনীন হিসেবে বিবেচিত। এ জন্য ইসলাম তিনটি পদ্ধতি নির্বাচন করেছে। প্রতিটির আলাদা আলাদা বিধানও নির্ধারণ করেছে। তালাক প্রদানের তিনটি পদ্ধতি হলো- তালাকে আহসান, তালাকে হাসান, তালাকে বিদায়ী। প্রথম দুটিকে আবার ‘তালাকে সুন্নি’ও বলা হয়ে থাকে।
‘তালাকে আহসান’ হল- মহিলাদের ঋতুস্রাবের পরবর্তী তুহর তথা পবিত্রতার সময় কেবল এক তালাক দেয়া। তবে, পবিত্রতার সময় সহবাসকৃতা না হতে হবে এবং তিনটি ঋতুস্রাব পর্যন্ত এভাবেই রেখে দেওয়া। এটি তিন প্রকারের মধ্যে সর্বোত্তম পদ্ধতি। রসুলের (সা.) সাহাবিরা এটাকে পছন্দ করতেন।
এটাকে উত্তম বলার কিছু কারণও পাওয়া যায়, তন্মধ্যে একটি হল- কখনও স্বামী-স্ত্রীর দীর্ঘ দিনের সম্পর্কে ভাঁটা পড়ে স্রেফ তুচ্ছ বিষয় নিয়ে। একপর্যায়ে রাগের বশবর্তী হয়ে তালাক দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় স্বামী এবং তাড়াহুড়ো করে স্ত্রীকে তালাক দিয়ে দেয়। কিন্তু পরবর্তী আক্ষেপের কোনো সীমা থাকে না। এ জন্য ইসলামের বিধান বলছে- এক তালাক দিতে, যাতে কখনও ফিরিয়ে আনার ইচ্ছে থাকলে আবার আনা সম্ভব হয়।
তালাকে হাসান হলো- পূর্ব সহবাসকৃতা স্ত্রীকে ঋতুস্রাব পরবর্তী তিনটি তুহুর বা পবিত্রতায় একটি করে তিনটা তালাক দেয়া। বৃদ্ধা বা বয়সের স্বল্পতার দরুন ঋতুস্রাব না হলে প্রতি একমাস পরে একটি করে মোট তিনটা তালাক দেওয়া; তবে এ ক্ষেত্রেও তিনটি তুহুরে-ই তথা পবিত্রতায় সহবাস না পাওয়া যেতে হবে। এ প্রকারের হুকুম হল- এটা জায়েয তথা বৈধ।
তালাকে বিদায়ী হল- স্ত্রীকে একসাথে তিন তালাক দেওয়া। যেমন বলা, ‘যা তোরে তিন তালাক দিয়ে দিলাম।’এভাবেও হতে পারে, পূর্ব সহবাসকৃতা স্ত্রীকে একই তুহুরে দুই বা তিন তালাক দেয়া অথবা স্ত্রীর ঋতুস্রাবের সময় এক তালাক দেয়া।
এভাবে তালাক দেয়া শরিয়তে বৈধ নয়। কিন্তু অবৈধ হলেও তালাক পতিত হয়ে যাবে। তবে ঋতুস্রাব অবস্থায় এক তালাক দিলে ফিরিয়ে আনা উত্তম। হাদিসে এসেছে, ইবনে ওমর রা. তার স্ত্রীকে ঋতুস্রাব অবস্থায় তালাক দেন। তখন নবীজি (সা.) তাকে ফিরিয়ে আনতে নির্দেশ দেন। (বাদায়েউস-সানায়ে: ৩/১৪০,১৪১,১৪৯; হিদায়া: ২/ ২৫৪,২৫৬,২৫৭)
সিএন/আলী
চলমান নিউইয়র্ক ফেসবুক পেজ লাইক দিন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন