শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

স্বাধীনতার মাহেন্দ্রক্ষণে বাংলাদেশ তোমায় অভিবাদন

শনিবার, মার্চ ২৬, ২০২২

প্রিন্ট করুন

আবদুচ ছালাম: পরাধীনতার শেকল ভেঙ্গে নিজেদের মুক্ত স্বাধীন জাতি হিসেব আত্মপরিচয় খুঁজে পাওয়ার দিন ২৬মার্চ। যিনি আমাদের আত্ম মর্যাদা নিয়ে স্বাধীনতার পথে চলতে শিখিয়েছেন তিনি শেখ মুজিবর রহমান। যুগে যুগে স্বাধীনচেতা বিপ্লবী অনেক মহাপুরুষই বাংলার বুকে জন্ম নিয়েছিল, যারা দুঃশাসন ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে দ্রোহের আগুনে ঝলসে ওঠেছিল। বাংলাকে ভালবেসে, বাংলার মানুষকে ভালবেসে আত্মবলিদানের গৌরবময় ইতিহাস সৃষ্টি করেছিলেন। বাংলা মায়ের অনেক বীর সন্তানেরা। অনেক কবি, সাহিত্যিক ও লেখক তাদের লেখনীতে বাংলার প্রতি নিবিড় ভালবাসা ও মমত্ববোধের বহি:প্রকাশ ঘটিয়েছেন। একটি জাতিসত্বার জাগরণে এ বীরত্ব ও মমত্ববোধ প্রেরণা হয়েই রয়েছে। কিন্তু, বাঙালির জন্য একটি স্বাধীন সার্বভৌম পৃথক রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্ন নিয়ে সমগ্র জাতিকে জাগিয়ে তোলার কাজটিই করেছিলেন শেখ মুজিবর রহমান। তিনিই ধারাবাহিক আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে জাতি হিসেবে বাঙালিকে ঐক্যবদ্ধ করে মুক্তির পথে টেনে আনতে সক্ষম হয়েছিলেন, বাংলার সাড়ে সাত কোটি মানুষকে জয় বাংলা শ্লোগানে লাল সবুজের পতাকাতলে বাঙালি জাতীয়তাবাদে উদ্বুদ্ধ করে মুক্তিপাগল জাতিতে পরিণত করেছিলেন। স্বাধীনতার পথে চলতে গিয়ে, মুক্ত স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের দিকে বাঙালি জাতিকে টেনে আনতে গিয়ে ইংরেজ ও পাকিস্তানী শোষকগোষ্ঠীর রোষানলে পড়ে তিনি তার জীবন ও যৌবনের প্রায় ১৩ বছর কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে কাটিয়েছেন। কিন্তু, কোন শক্তিই তাকে স্বাধীনতার পথ থেকে সরাতে পারেনি। শুধু তিনি নিজে নন, বাংলার সর্বস্তরের মানুষকে তিনি স্বাধীনতার মন্ত্রে এমনভাবে দীক্ষিত করেছিলেন, যাতে বাঙালি স্বাধীনতার জন্য তাদের সর্বোচ্চ ত্যাগ করতে এতটুকুও দ্বিধাবোধ না করে। তাই, ১৯৭১ এর ৭ মার্চ রমনার রেসকোর্স ময়দানে লাখ জনতার সামনে বুক চেতিয়ে তর্জনী উঁচিয়ে দম্ভোক্তি করতে পেরেছিলেন; আমরা যখন মরতে শিখেছি, কেউ আমাদের দমিয়ে রাখতে পারবে না।

৭ মার্চের ভাষণে সরাসরি স্বাধীনতার ঘোষনা না দিলেও তিনি বলেছিলেন, আর যদি একটা গুলি চলে, যদি আমার লোকদের উপর হত্যা করা হয়, তোমাদের কাছে আমার অনুরোধ রইল, প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল। তোমাদের যা কিছু আছে, তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে এবং জীবনের তরে রাস্তাঘাট যা যা আছে, সব কিছু, আমি যদি হুকুম দিবার নাও পারি, তোমরা বন্ধ করে দেবে।

২৫ মার্চ কাল রাত্রিতে পাকিস্তানী সামরিক জান্তা ঘুমন্ত নিরস্ত্র বাঙালির উপর নির্বিচারে গুলি চালিয়ে গণহত্যা, লুন্ঠন ও অগ্নিসংযোগ করলে ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরেই বঙ্গবন্ধু ইপিআর বার্তায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং যতক্ষণ পর্যন্ত একজন বাঙালিও বেঁচে থাকবনে ও একটি পাক হানাদারও বাংলার মাটিতে থাকবে, বাংলার মাটি থেকে পাকিস্তানী সেনাদের চিরতরে উৎখাত করা না হবে ততক্ষণ লড়াই চালিয়ে যাওয়ার জন্য নির্দেশ দেন। স্বাধীনতা ঘোষণার পরপরই বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানের কারাগারে নিয়ে যাওয়া হলেও, ততক্ষণে সারা দেশে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যুদ্ধ স্বাধীনতার যুদ্ধে পরিণত হয়। বাংলার মুক্তিপাগল কৃষক, শ্রমিক, কুলি, মজুর, তাঁতী, ছাত্র, যুব জনতা মরণ পণ করে দলে দলে যুদ্ধে যোগ দেয়; গঠিত হয় মুক্তিবাহিনী। জয়ের নেশায় হাঁসিমুখে মৃত্যুকে পায়ে দলে বীর মুক্তিসেনা এগিয়ে চলে সমূখের স্বাধীনতার সূর্য পানে।

দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদ ও দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানীদের আত্মসমর্পণে বাধ্য করে গৌরবময় বিজয় অর্জনের মাধ্যমে স্বাধীনতার সূর্যকে ছিনিয়ে আনে বীর বাঙালি। আজ স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে জাতির শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা আমাদের স্বাধীনতাকে অর্থবহ করে তুলতে পেরেছি। উন্নয়ন আর অগ্রগতিতে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বিষ্ময়। অর্থনৈতিক, সামাজিক ও মানবিক যে কোন সূচকে আমরা পাকিস্তাানকে অনেক পিছনে ফেলে উন্নত বিশ্বের অন্যতম দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভের দিকে এগিয়ে চলছি অদম্য গতিতে। স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের মাহেন্দ্রক্ষণে, বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করি, শেখ মুজিবর রহমানকে, গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করি ৭৫ এর ১৫ আগষ্ট কালো রাত্রিতে ঘাতকের হামলায় নিহত বঙ্গবন্ধুর পরিবার ও স্বজনদের, স্মরণ করি, কারাভ্যন্তরে ঘাতকের ব্রাশ ফায়ারে নিহত জাতীয় চার নেতাসহ ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের। কৃতজ্ঞতা জানাই, সব বীর মুক্তি সেনা ও দেশের প্রয়োজনে সম্ভ্রম হারা সব মা বোনেদের প্রতি। আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি-দেশমাতার প্রতি স্বাধীনতার অভিবাদন জানাই।
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, জয়তু শেখ হাসিনা, বাংলাদেশ চিরজীবি হোক।

লেখক: রাজনীতিবিদ ও উন্নয়ন সংগঠক, কোষাধ্যক্ষ, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ,
সাবেক চেয়ারম্যান, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ, প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, মাবিয়া-রশিদিয়া ফাউন্ডেশন।

সিএন/এমএ

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন