শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

স্বাধীনতা ও বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীতে শেখ হাসিনার প্রতি সৃষ্টিকর্তার উপহার

বুধবার, ডিসেম্বর ২৯, ২০২১

প্রিন্ট করুন
30d1122041239ea82d5878513a18c9cbd63d89476869c867 1

রূপক কান্তি ধর, চট্টগ্রাম: চলতি ২০২১ খ্রিস্টাব্দ ও শ্রাবণ মাসের (১৪২৮ বঙ্গাব্দ) সংক্রান্তি দিন ছিল সোমবার। কিন্তু তিথিগত কারণে শ্রীশ্রী মনসা দেবীর পূজা ও বলিদান অনুষ্ঠিত হতে পারছে না। তাই এর আগের দিন রোববার (১৫ আগস্ট) আমাদের বাড়িতে পূজা ও বলিদানের তারিখ সাব্যস্থ হয়েছে। কিন্তু ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস ও জাতির পিতার শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে আমি ও আমার সেজ দাদা চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক চন্দন ধর  মনসা পূজায় অংশ নিতে পারছি না।

এ পরিস্থিতির জন্য স্মৃতি বিচরণ করতে গিয়ে ১৯৭১ সালের বিশেষ বিশেষ কিছু দিন ও বার যে রকম ছিল, ঠিক চলতি ২০২১ সালে ৫০ বছর পুর্তিতে হুবহু মিলে গেছে। এটা মহান সৃষ্টিকর্তার উপহার। ১৯৭১ সালের উল্লেখযোগ্য বিশেষ দিন ও বারগুলো এগুলো হচ্ছে ১ জানুয়ারী শুক্রবার, ১৩ জানুয়ারী পৌষ সংক্রান্তি শুক্লাম্বর দিঘীর মেলা, ২১ ফেব্রুয়ারি রোববার, ৭ মার্চ রোববার, ২৫ মার্চ বৃহস্পতিবার, ২৬ মার্চ শুক্রবার, ১ মে শনিবার, ২২ জুলাই বৃহস্পতিবার, ১৪ আগস্ট শনিবার, ১৫ আগস্ট রোববার, ৩ ডিসেম্বর শুক্রবার, ১১ ডিসেম্বর শনিবার, ১৬ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার, ১৭ ডিসেম্বর শুক্রবার ও ৩০ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার।

১৯৭১ সালের ১৫ আগস্ট, মনসা পূজা ও বলিদানসহ কিছু কিছু ঘটনার কথা চোখে ভেসে উঠল। ১৯৭১ সালের ১৫ আগস্ট রোববার বিকালে অনেক দূর থেকে এক দল রাজাকার আমাদের চন্দনাইশ উপজেলার বরমাস্থ বাড়িতে আসতে দেখে দৌঁড়ে গিয়ে প্রথমে মা (পাখী বালা ধর) ও পরে অন্যদেরকে জানাই। ওরা সোজা আমাদের বাড়িতে ঢুকে বেশ কিছুক্ষণ তান্ডব চালিয়ে মালামাল তছনছ করে টাকা-পয়সা ও স্বর্ণালংকার নিয়ে যায়। এ সময় রাজাকারদের ভয়ে বাড়ির সবাই পালিয়ে ছিল। আমার বাবা ননী গোপাল ধর বলেছিল ওরা তদন্তে আসছিল। কারণ ২২ জুলাই রোববার চন্দনাইশের প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মখলছ্ মিয়া তার সহযোগী আরো ৬৩ জন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে গভীর রাতে মুষলধারার কাকভেজা বৃষ্টিতে আমাদের বাড়িতে এসে মাকে কাকীমা সম্বোধন করে দুই হাত পেতে নিরাপদ আশ্রয় প্রার্থনা করে। তখন মা বলেছিল, আমরা তো নিরাপদহীন হয়ে যাচ্ছি। তারপরও বাড়িতে আশ্রয় দিয়ে উনাদের জন্য চা তৈরি করতে গেলেন মা। আমি মায়ের পাশে আঁচল ধরে দাঁড়িয়ে ছিলাম ও মুক্তিযোদ্ধা শুনে আন্দোলিত হয়ে উঠেছিলাম। সে দিন বাড়ির অন্যরা ডাকাত ভেবে পালিয়ে গিয়েছিল। সবাইকে আবার খুঁজে আনলাম। উনারা ৯ আগস্ট সোমবার মধ্যরাতে চলে গিয়েছিল, এ জন্যই তদন্তে আসছে।

১৪ আগস্ট শনিবার ছিল পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবস ও ১৫ আগস্ট রোববার ছিল ভারতের স্বাধীনতা দিবস। স্পষ্ট মনে পড়ে ১৬ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার রাতে একটু শীত অনুভূত হচ্ছে, তাই ভাত না খেয়ে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ছিলাম। এ সময় বাবা বিবিসির খবর শুনে এসে আমাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলল ও বলল, সবাইকে ডেকে নিয়ে আস, আমরা স্বাধীন হয়ে গেছি, পাকিন্তানীরা অস্ত্র সমর্পণের মাধ্যমে আত্মসমর্পণ করেছে। সবাই এক সাথে ভাত খেতে বসলাম। ১ জানুয়ারী ছিল শুক্রবার। ৪ জানুয়ারি সোমবার স্কুলে বার্ষিক পরীক্ষার রেজাল্ট দিয়েছিল, পঞ্চম শ্রেণির পরীক্ষায় আমি চতুর্থ হই ও ১৯৭৮ সালে আমি এসসএসসি পাশ করি। পিতা-মাতার সংসারে আমরা ছয় ভাই ও দুই বোনের মধ্যে আমি পঞ্চম। ২১ ফেব্রুয়ারি রোববার সাপ্তাহিক ছুটির দিন হলে ভাষা দিবস উপলক্ষে স্কুলে গিয়ছিলাম। ঐতিহাসিক ৭ মার্চ রোববার স্কুল বন্ধ বন্ধ। ওই দিন বিকালে বল খেলা বন্ধ রেখে বাবার পাশে বসে ছিলাম। বাবা তখন তিন ব্যান্ডের রেডিওটা শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ শুনছেন। আমি কিছুই বুঝছি না। তবে ’এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ কথাটা মনে পড়ছে। ২৬ মার্চ শুক্রবার বাবা সারাদিন রেডিও নিয়ে বসে আছে। বড়দের মনে একটা উৎকণ্ঠা ভাব। কারণ মেজ দাদা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এমএসসি পড়ছে, হলে থাকে, ওখানে না কি বেশী গন্ডগোল হচ্ছে। চট্টগ্রাম কেন্দ্র বন্ধ-চালু এ অবস্থায় চলতেছে। হঠাৎ বাবা বললেন, স্বাধীনতার ঘোষণা হয়ে গেছে। যুদ্ধ অনিবার্য, কয়েক দিন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে একটি স্টেশন ধরতেছে। রেডিওতে মাঝেমধ্যে বিরক্তিকর শব্দ। বাবা বলে, এরিয়ালটা ধরে থাক, চীনারা ডিস্টার্ব করতেছে। ৩ ডিসেম্বর শুক্রবার সিকিম না কি জয় বাংলাকে স্বীকৃতি দিয়েছে। ৬ ডিসেম্বর সোমবার ভারত স্বীকৃতি দিয়ে সৈন্য পাঠাচ্ছে। বাবা বললেন, পাকিস্তানী ল্যান্ড ফোর্স পৃথিবী বিখ্যাত, তবে রাশিয়া যদি সহযোগিতা না করে। ভয়েস অব আমেরিকা, বিবিসি, আকাশবাণী, মার্কটালী নামগুলো তখনকার জানা।

বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চট্টগ্রাম মহানগর ইউনিটের সহকারী কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা সাধন চন্দ্র বিশ্বাস দাদাকে এক দিন এ মিলগুলোর কথা জানালাম। উনি বললেন, এগুলো লিখে আনলে মিলিয়ে দেখতে পারতাম, আমি লিখে দেখালাম পরবর্তী উনি সর্ব্বোত সহযোগিতা করেন। কর্মময় জীবনে আমি একজন গেজেটেড ইলেকট্রিশিয়ান। আরেকটি বিষয়, আমি চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের অধীন প্রয়াত সিটি মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বে ২০০৩ সালে গঠিত ৩৩ নম্বর ফিরিঙ্গিবাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের একজন সক্রিয় সদস্য।

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন