শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

হাই ব্লাড প্রেশার হলে যা এড়িয়ে চলা উচিত: ক্ষতিকর খাবার, পানীয়, অভ্যাস

বৃহস্পতিবার, জুন ১৬, ২০২২

প্রিন্ট করুন

লাইফস্টাইল প্রতিবেদক: পৃরো পৃথিবীতে প্রায় ৫৭ মিলিয়ন মানুষ উচ্চ রক্ত চাপে আক্রান্ত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) মতে, উচ্চ রক্ত চাপ হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, রেটিনার ক্ষতি ও মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলে। বর্তমানে যে কোন বয়সের মানুষই উচ্চ রক্ত চাপের সমস্যায় ভুগতে পারেন। উচ্চ রক্ত চাপের মূল কারণ হল- অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, গতিহীন জীবনধারা, পেশাগত ও ব্যক্তিগত চাপ। তবে যথাযথভাবে খাদ্য গ্রহণ ও জীবনধারা যথাযথভাবে পালন করলে উচ্চ রক্ত চাপের সমস্যা অনেকটা কমতে পারে।

মূলত উচ্চ রক্ত চাপের কারণে হাইপারটেনশনের সমস্যা দেখা দেয়। উচ্চ রক্ত চাপ দেখা দিলে শরীরের ভিতরে ধমনীর মধ্যে রক্তের চাপ অনুভূত হয়। উচ্চ রক্ত চাপ রক্তনালীগুলোর ক্ষতি করতে পারে, যার ফলে হৃদরোগ, স্ট্রোক ও কিডনির রোগ হয়। যেহেতু হাইপারটেনশন বছরের পর বছর লক্ষ্য করা যায় না, তাই এটি নীরবে শরীরের ভেতরে আঘাত করে চলে। রক্ত চাপ মূলত সিস্টোলিক রক্তচাপ ও ডায়াস্টোলিক রক্ত চাপ হিসেবে পরিমাপ করা হয়। প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য সাধারণত রক্ত চাপ হলো ১২০/৮০। তবে ১৩০/৮৫ এটিকে রক্ত চাপ পরিমাপের ক্ষেত্রে হাইপারটেনসিভ হিসেবেই বিবেচনা করা হয়। তাই রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে খাদ্য তালিকায় যেসব খাবারগুলো রাখতে হবে, তা জানা জরুরী।

উচ্চ রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য খাদ্য:
সবুজ শাকসবজি- আমাদের মধ্যে সবারই টেনসন স্ট্রেসের জীবনে এগুলোকে কাটিয়ে তোলার জন্য দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় সবুজ শাকসবজি রাখা অত্যন্ত প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে যারা উচ্চ রক্ত চাপ বা হাইপারটেনশনের সমস্যায় ভুগছেন, তারা যদি সবুজ শাকসবজি গ্রহণ করেন, তবে তাদের শরীরে সবুজ শাক সবজির পটাশিয়াম শরীর থেকে অতিরিক্ত সোডিয়াম দূর করতে সহায়তা করে। যার ফলে উচ্চ রক্ত চাপ হ্রাস পায়। মূলত উচ্চ রক্ত চাপের কারণে শরীরে সোডিয়াম বৃদ্ধি পায়। তাই মাথায় রাখতে হবে, দৈনিক যে সব শাক সবজি খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে, সেগুলো হল- পালং, লেটুস শাক, বিট শাক, শালগম,
রঙিন শাকসবজি ইত্যাদি।

ওটমিল- ওটস হল ডায়েটারি ফাইবার, স্বাস্থ্যকর চর্বি, ভিটামিন ও অন্যান্য খনিজ খাদ্য উপাদানগুলোর একটি উৎকৃষ্ট উৎস। ওজন হ্রাস করার জন্য এটিকে একটি দুর্দান্ত খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করা হয়ে থাকে। তা ছাড়া ওটমিল রক্তে লিপিডের মাত্রা কম করতে সহায়তা করে, যা উচ্চ রক্ত চাপের সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে তোলে। এ ছাড়াও বিজ্ঞানীরা দেখতে পেয়েছেন যে, যারা প্রতিদিন প্রায় পাঁচ গ্রাম ওটস গ্রহণ করে, তারা সিস্টোলিক রক্ত চাপের প্রায় ৭ দশমিক ৭ মিমি এইচজি কম ও ডায়াস্টোলিক রক্ত চাপের ৫ দশমিক ৫ মিমি এইচজি কম করেছেন। তাই প্রতিদিন প্রাতঃরাশ বা মধ্যাহ্নভোজনে ওটস সেবন করুন। এটি উচ্চ রক্ত চাপকে কম রাখতে সহায়তা করবে।

বিটরুট- বিটরুট হল নাইট্রিক অক্সাইড সমৃদ্ধ একটি খাদ্য উপাদান। এটি রক্তনালীগুলোকে বিভক্ত করতে সহায়তা করে। যার ফলে উচ্চ রক্ত চাপ কমিয়ে আনা সম্ভব হয়। অস্ট্রেলিয়ার বিজ্ঞানীরা ১৫ জন পুরুষ ও ১৫ জন মহিলার ওপর করা একটি পরীক্ষায় দেখেছেন যে, দৈনিক যদি ৫০০ গ্রাম বিটের রস খাওয়া যায়, সেটি শরীরের রক্ত চাপকে নিয়ন্ত্রণ করে। এ ক্ষেত্রে একটি দলকে বিটের রস ও অন্য দলকে আপেলের রস গ্রহণ করিয়ে দুই সপ্তাহ পরে দেখা গেছে যে, যারা বিটের রস গ্রহণ করেছে, দুই সপ্তাহ পর তাদের সিস্টোলিক রক্ত চাপের পরিমাণ ৪ থেকে ৫ মিমি এইচজি কম হয়ে গিয়েছে।

ডার্ক চকোলেট- নামটি শুনলেই আমাদের সকলের মধ্যে একটা আনন্দ জেগে ওঠে, সে ছোট কি বড়। সবাই প্রায় ডার্ক চকলেট খেতে ভালবাসে। তবে রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রেও ডার্ক চকোলেটের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। ডার্ক চকোলেট ৭০-৮০ শতাংশ রক্ত চাপ কমানোর ক্ষেত্রে কাজ করে থাকে। এর মধ্যে থাকা উপাদানগুলো হাইপার টেনশন কম করতে ও রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে। অ্যাডিলেড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা সমীক্ষায় দেখতে পেয়েছেন যে, দৈনিক ৩০ থেকে এক হাজার মিলিগ্রাম ডার্ক চকোলেট গ্রহণ করার ফলে সিস্টোলিক ও ডায়াস্টোলিক রক্ত চাপ হ্রাস পায়। এ ক্ষেত্রে তাই এক দিন অন্তর অন্তর মধ্যাহ্নভোজ বা রাতের খাবারের পরে এক টুকরো ডার্ক চকোলেট গ্রহণ করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন তারা। এমনকি, যারা হাইপারটেনশনের সমস্যায় ভুগছেন, যখন পরিস্থিতি মাত্রা ছাড়িয়ে যায়, তখন যদি মুখে এক টুকরো ডার্ক চকোলেট রেখে দেন, এটি পরে আস্তে আস্তে কিছুটা আরাম দিতে সহায়তা করে।

রসুন- রসুন হল সালফার সমৃদ্ধ একটি যৌগ, যা অ্যালিসিন হিসেবে পরিচিত। এটি হাইড্রোজেন সালফেটের  উৎপাদনকে উদ্দীপিত করে ও নাইট্রিক অক্সাইডকে নিয়ন্ত্রণ করে। এ দুইটি রক্তনালীকে শিথিল করতে ও বিচ্ছিন্ন করতে সহায়তা করে। তুলসী, রোজমেরি ও থাইমের মত ভেষজগুলোতেও একই রকম প্রভাব রয়েছে। দৈনিক কাঁচা রসুনের ১-২ টুকরো গ্রহণ করুন ও নিয়মিত রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার পাশাপাশি টেনশনকেও দূরে রাখুন।

বেদানা বা ডালিম- আমাদের পরিচিত বিভিন্ন ফলগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি রঙিন ফল হল ডালিম। এটি হল অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন খনিজ ও ডায়েটারি ফাইবার যুক্ত এক ধরনের ফল। যা ওজন হ্রাস করতে ও ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে সহায়তা করে। তবে গবেষণায় দেখা গেছে যে, ডালিমের রস খাওয়ার ফলে হাইপারটেনশনের ফলে সৃষ্ট রক্ত চাপের মাত্রা কম করতে সহায়তা করে। তাই চিকিৎসকেরা প্রতি বিকল্প দিনে এক থেকে দুই গ্লাস ডালিমের রস খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

পেস্তা বাদাম- পেস্তা হল এক ধরনের সবুজ রঙের বাদাম, যার অনেকগুলো স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। এটি দৈনিক সীমিত পরিমাণে সেবন করলে ওজন হ্রাস হয়। এর পাশাপাশি রক্তে লিপিডের মাত্রা কম করে। আমেরিকার গবেষকরা দেখেছেন যে, ডিসল্লিপিডেমিয়া আক্রান্ত ব্যক্তিরা যখন কম চর্বিযুক্ত ডায়েটের পাশাপাশি পেস্তা বাদাম গ্রহণ করে, তখন তাদের সিস্টোলিক রক্ত চাপ প্রায় দুই থেকে চার মিমি এইচজি কম থাকে। তাই আপনার রক্তচাপ কমাতে প্রতিদিন প্রায় ২৫টি আনসল্টেড পেস্তা বাদাম গ্রহণ করুন।

ফ্যাট জাতীয় মাছ- সালমন, মাকেরেল, ইলিশ ও টুনার মত ফ্যাট যুক্ত মাছগুলোতে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে, যা দেহের অভ্যন্তরে প্রদাহ কমাতে সহায়তা করে। এর পাশাপাশি এগুলো ভিটামিন ডি এর উৎকৃষ্ট উৎস। বিজ্ঞানীরা মনে করেন যে, ওমেগা-থ্রি এ থাকা ডিএইচএ কোর্সগুলোতে ভোল্টেজ গেটের চ্যানেলগুলো সক্রিয় করে, যার ফলে সোডিয়াম বের হয়। একটি পরীক্ষায় দেখা গেছে যে, যারা ফ্যাট যুক্ত মাছ খান, তাদের ওজন হ্রাস পায় ও সিস্টোলিক ও ডায়াস্টোলিক রক্ত চাপ কম থাকে। তাই প্রতি সপ্তাহে চর্বিযুক্ত মাছের তিন চার টুকরো খাদ্য তালিকায় গ্রহণ করুন। তবে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে আপনি ফিশ অয়েল সাপ্লিমেন্টও পরিমিত পরিমাণে গ্রহণ করতে পারেন।

দই- দই হল ক্যালসিয়াম ও পটাশিয়ামের উৎকৃষ্ট উৎস। এ ছাড়াও এতে কম ফ্যাটযুক্ত উপাদান থাকে। ক্যালশিয়াম ও পটাশিয়াম উভয়েই শরীর থেকে সোডিয়াম বের করে দিতে সহায়তা করে। এ ছাড়াও নিউট্রিয়েন্টস জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা ঘেছে যে, দই খাওয়ার ফলে উচ্চ রক্ত চাপ কম হয়েছে। তাই উচ্চ রক্ত চাপ কম করার জন্য প্রতিদিন প্রায় দুই গ্লাস কম চর্বিযুক্ত দুধ বা এক থেকে দুই বাটি কম চর্বিযুক্ত দই খাওয়া উচিত।

অলিভ অয়েল- অলিভ অয়েলের পলিফেনোলিক উচ্চ রক্ত চাপ কমাতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে যে, অলিভ অয়েল ব্যবহারের ফলে বৃদ্ধ বয়সের পাশাপাশি অল্প বয়সী মহিলাদের ক্ষেত্রে শরীরে খারাপ কোলেস্টেরল ও সিস্টোলিক রক্ত চাপের পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে।

বীজ- যে কোনো ধরনের বীজ, যেমন কুমড়োর বীজ, সূর্যমূখীর বীজ, চিয়া বীজ ও তরমুজের বীজ হল ডায়েটারি ফাইবার, স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, ভিটামিন ও খনিজের উৎকৃষ্ট উৎস। এগুলি শুধু ওজন কমাতেই সহায়তা করে না, তার পাশাপাশি উচ্চ রক্ত চাপ কমাতেও সহায়তা করে। এ বীজগুলোকে মিক্সারে ভেঙে নিয়ে প্রতিদিন এক থেকে দুই চা-চামচ গ্রহণ করুন বা প্রাতরাশ এ স্মুদি বা সালাদে যোগ করে খাদ্য তালিকায় গ্রহণ করুন।

ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল- খাদ্য তালিকায় যে কোন ধরনের ভিটামিন সি যুক্ত ফল রাখলে সেগুলি রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে সহায়তা করে। ভিটামিন সি এর উৎকৃষ্ট উৎস হল- আঙ্গুর, কমলা লেবু, কিউই, সরবতি লেবু ইত্যাদি। এগুলো রক্তচাপ কম করতে সহায়তা করে। বিজ্ঞানীরা গবেষণায় দেখেছেন যে, প্রতিদিন যদি ৫০০ মিলিগ্রাম ভিটামিন-সি গ্রহণ করা যায়, এটি সিস্টোলিক ও ডায়াস্টোলিক রক্ত চাপকে যথাক্রমে ৩ দশমিক ৮৪ মিমি এইচজি ও এক দশমিক ৪৮ মিমি এইচজি করতে সহায়তা করে। এর প্রচুর স্বাস্থ্য উপকারিতা পাওয়ার জন্য দৈনিক কমপক্ষে দুই ধরনের ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল গ্রহণ করুন।

উচ্চ রক্ত চাপে যে খাদ্যগুলো পরিত্যাগ করা উচিত: আপনার শরীরের রক্ত চাপের পরিমাণ অনেকাংশেই নির্ভর করে আপনার খাদ্য তালিকার ওপর। বলা যায়, শরীরের রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণ করতে খাদ্য তালিকার প্রভাবটাই বহুগুণ। যার ফলে বেশ কিছু খাবার আছে, যেগুলো শরীরে রক্ত চাপকে বাড়িয়ে তুলতে পারে। তাই এগুলোকে এড়িয়ে স্বাস্থ্যকর রক্ত চাপ পেতে বেশ কিছু খাবার খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে। যদি আপনার উচ্চ রক্ত চাপের সমস্যা থাকে, তাহলে যে খাদ্যগুলো খাদ্য তালিকায় একেবারেই এড়িয়ে চলবেন সেগুলো হল- লাল মাংস, লবণ, অতিরিক্ত শর্করাযুক্ত খাবার, মিষ্টি যুক্ত পানীয়, নোনতা ও মিষ্টি যুক্ত খাবার, স্যাচুরেটেড ফ্যাট জাতীয় খাবার, প্রক্রিয়াজাত মাংস, যে কোন টিনজাত পানীয়, টিনজাত সস, চিনি, ট্রান্স ফ্যাট যুক্ত খাদ্য, অ্যালকোহল।

উচ্চ রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে কিছু ব্যায়াম ও যোগাসন: এমন কিছু যোগাসন ও ব্যায়াম রয়েছে, যেগুলো প্রাকৃতিক উপায়ে উচ্চ রক্ত চাপকে কম করতে সহায়তা করে। উচ্চ রক্ত চাপের ফলে একটি ব্যক্তি স্ট্রোক, এমনকি মৃত্যুর মুখে পর্যন্ত চলে যেতে পারে। তাই নিজেকে পরীক্ষা করে উচ্চ রক্ত চাপ যদি প্রমাণিত হয়, সে ক্ষেত্রে খাদ্য তালিকা নিয়ন্ত্রণ করার পাশাপাশি বেশ কিছু যোগাসন রয়েছে, যেগুলো করলে পরে শরীর সুস্থ থাকে ও হাইপার টেনশন কম থাকে। মনে করা হয়, বিভিন্ন যোগ আসনগুলোতে দেহের গতিবিধি সমন্বয় করার ফলে গভীরভাবে শ্বাস নিতে হয়; এগুলো রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণে প্রাকৃতিকভাবে সহায়তা করে। যোগাসন করার ফলে স্নায়ুগুলি প্রশান্ত করতে পারে, যা হার্টের অস্বাভাবিক হার কমিয়ে আনতে পারে। যোগব্যায়াম প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ও হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের মত হৃদরোগের সম্ভাবনা কম করতে সহায়তা করে। এর পাশাপাশি পর্যাপ্ত বিশ্রাম হল উচ্চ রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণের অন্যতম একটি উপায়। উচ্চ রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে যে যে আসন অভ্যাস করবেন সেগুলো হল- শিশুসান, বজ্রাসন, শবাসন, সুখাসন, অর্ধ মৎস্যাসন, বিরাসন, সেতুবন্ধনাসন।

শিশুসান- এ ক্ষেত্রে শিশুর মত হাটু মুড়িয়ে মাথা মাটিতে ঠেকিয়ে হাত দুইটা মাথার ওপরে টানটান করে রেখে বসতে হবে।

বজ্রাসন- এ ক্ষেত্রে হাঁটু মুড়ে পায়ের পাতার ওপরে শরীরের ভর দিয়ে শিরদাঁড়া সোজা করে বসে নিঃশ্বাস প্রশ্বাস নিতে হবে।

শবাসন- শবাসনের ক্ষেত্রে টানটান হয়ে মাটিতে শুইয়ে হাত দুইটা শরীরের দুই পাশে রেখে আস্তে আস্তে নিঃশ্বাস গ্রহণ ও ছাড়তে হবে।

সুখাসন- এ আসন উচ্চ রক্ত চাপ হ্রাস করতে এবং দেহ ও মনকে শান্ত রাখতে সহায়তা করে। এ ছাড়াও মনকে আনন্দময় করে তুলতে সহায়তা করে থাকে।

অর্ধ মৎস্যাসন- উচ্চ রক্ত চাপকে স্বাভাবিক করতে এটি হৃদপিণ্ড ও স্নায়ুতন্ত্রকে উদ্দীপিত করতে সহায়তা করে। এ ক্ষেত্রে সোজা হয়ে বসে একটি পায়ের ওপর ওপর পাটি আড়াআড়িভাবে রেখে শরীরটাকে পিছন দিকে ঘুরিয়ে দিতে হবে।

উচ্চ রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে এ আসনগুলো অত্যন্ত কার্যকরী  এর পাশাপাশি যাদের প্রাণায়ামের অভ্যাস আছে, তারা কপালভাতি,  ভস্ত্রিকা, নারী শোধন প্রাণায়াম করতে পারেন।

উচ্চ রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য অন্যান্য টিপস:
কি কি করবেন না- অতিরিক্ত তেল, মশলা জাতীয় খাদ্য বর্জন করুন। খাদ্য তালিকায় সুষম খাদ্য গ্রহণ করুন; যে কোন ধরনের প্রক্রিয়াজাত খাবার, সসেজ, ফাস্ট ফুড এড়িয়ে চলুন; অতিরিক্ত লবণের পরিমাণ কমিয়ে দিন। খাবারে অতিরিক্ত লবণ যুক্ত করবেন না। এছাড়া ও এমন পানিও পান করুন, যাতে উচ্চ মাত্রায় সোডিয়াম থাকে; প্যাকেট জাতীয় খাদ্য গ্রহণ থেকে বিরত থাকুন ও স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করুন। যা আপনার দেহের সামগ্রিক ওজন হ্রাস করার পাশাপাশি রক্তের লিপিড প্রোফাইল উন্নত করতে ও উচ্চ রক্ত চাপকে কম করতে সহায়তা করবে; নেতিবাচক চিন্তা বন্ধ করুন। যেগুলো আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক। ইতিবাচক চিন্তা ভাবনা করুন; অ্যালকোহল গ্রহণ করা বন্ধ করুন। যদি আপনার অ্যালকোহল গ্রহণ করার অভ্যাস থাকে, তাহলে সেটিকে সীমিত করুন বা প্রয়োজনে বন্ধ করুন। এটি যেমন আপনার ওজন বাড়িয়ে তুলবে, তেমনি রক্তনালীগুলোকে দুর্বল করে তুলবে। যার ফলে সমস্যার সমাধান কখনোই হবে না ও উচ্চ রক্ত চাপের পরিমাণ বাড়তে থাকবে। লাল মাংস খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।

কি কি করবেন- যথাযথ পরিমাণে পানি পান করুন। দৈনিক সাত থেকে আট গ্লাস পানি পান করার অভ্যাস করুন। এটি শরীরকে সুস্থ রাখতে ও রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করবে; মেডিটেশন শুরু করুন। নিজেকে এমন কিছু ক্রিয়া-কলাপের মধ্যে জড়িয়ে রাখুন, যেগুলো আপনাকে আনন্দ দেয়, যেমন- বই পড়া, ছবি আঁকা, ফটো তোলা, রান্না করা, আলমারি গোছানো ইত্যাদি;  নিয়মিত ব্যায়াম করুন। নিয়মিত সঠিক শরীরচর্চা শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ভাল রাখতে সহায়তা করে; ওজন যদি বেশি থাকে, তাহলে তা কমানোর চেষ্টা করুন। মূলত যাদের ওজন অতিরিক্ত থাকে, তাদের ক্ষেত্রে উচ্চ রক্ত চাপের সমস্যা দেখা যায়। তাই আপনার ওজন যদি বেশি থাকে ওয়ার্কআউট করুন ও ডায়েট মেনে চলুন। ওজন কম করার চেষ্টা করুন; নিয়মিত রক্ত চাপ পর্যবেক্ষণ করুন। যদি আপনার পরিবারে উচ্চ রক্ত চাপের সমস্যা থেকে থাকে, তাহলে নিয়মিত কয়েক দিন অন্তর রক্ত চাপ পরীক্ষা করুন ও নিজের খাদ্য তালিকা ও জীবন ধারা সুস্থভাবে করার চেষ্টা করুন।

সিএন/এমএ

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন