রবিবার, ১০ আগষ্ট ২০২৫

শিরোনাম

হার্ট অ্যাটাক এড়াতে নিয়মিত মেনে চলুন এই অভ্যাস

শনিবার, আগস্ট ৯, ২০২৫

প্রিন্ট করুন
হার্ট অ্যাটাক

হার্ট অ্যাটাক এড়াতে নিয়মিত কিছু অভ্যাস মেনে চলা উচিৎ। হৃদযন্ত্র মানবদেহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর একটি। এটি প্রতিদিন নিরলসভাবে শরীরে রক্ত সঞ্চালন করে জীবনধারা সচল রাখে। কিন্তু অনিয়মিত জীবনযাপন, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, মানসিক চাপ এবং অবহেলার কারণে হৃদরোগ—বিশেষ করে হার্ট অ্যাটাক—এখন এক ভয়ংকর স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পরিণত হয়েছে। আগে মনে করা হতো হার্ট অ্যাটাক মূলত বয়স্কদের রোগ, কিন্তু চিকিৎসকদের মতে বর্তমানে কম বয়সীদের মধ্যেও এর ঝুঁকি দ্রুত বাড়ছে। সঠিক অভ্যাস গড়ে তুললে এই ঝুঁকি অনেকটাই কমানো সম্ভব।

হার্ট অ্যাটাক এড়াতে নিয়মিত মেনে চলুন এই অভ্যাস

হার্ট অ্যাটাক এড়াতে অন্তত ৩০ মিনিট শারীরিক কার্যকলাপ

হার্টের সুস্থতার জন্য দেহকে সক্রিয় রাখা অপরিহার্য। প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট দ্রুত হাঁটাহাঁটি, সাইক্লিং, সাঁতার, যোগব্যায়াম বা হালকা জগিং করুন। এ ধরনের শারীরিক কার্যকলাপ রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং হৃদযন্ত্রকে শক্তিশালী করে। অনেকেই অফিস বা বাসায় ব্যস্ততার কারণে ব্যায়াম করতে পারেন না, কিন্তু প্রতিদিন সিঁড়ি ব্যবহার, গাড়ির বদলে অল্প দূরত্বে হাঁটা—এগুলোও হার্টকে সক্রিয় রাখতে সহায়ক।

স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা

আপনি যা খান, তা সরাসরি আপনার হার্টের স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলে। শাকসবজি, ফলমূল, বাদাম, ওটস, তিল, তিসির বীজ, শিমজাতীয় খাবার এবং মাছের মতো ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ খাবার হৃদযন্ত্রের জন্য উপকারী। এগুলো রক্তে ভালো কোলেস্টেরল (HDL) বাড়ায় এবং খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) কমায়।
অন্যদিকে ভাজাপোড়া, অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত ও প্রক্রিয়াজাত খাবার, উচ্চমাত্রার লবণ ও চিনি সমৃদ্ধ খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন। এসব খাবার রক্তনালিতে চর্বি জমিয়ে ব্লকেজ তৈরি করে, যা হার্ট অ্যাটাকের মূল কারণগুলোর একটি।

মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ

অতিরিক্ত মানসিক চাপ বা স্ট্রেস হৃদযন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর। স্ট্রেস হরমোন কর্টিসল ও অ্যাড্রেনালিনের মাত্রা বেড়ে রক্তচাপ বাড়ায় এবং হার্টে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে। প্রতিদিন কিছু সময় ধ্যান, প্রার্থনা, গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের অনুশীলন বা প্রিয় কোনো শখের কাজে ব্যয় করুন। সামাজিক যোগাযোগ ও পরিবার-বন্ধুর সঙ্গে সময় কাটানোও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।

হার্ট অ্যাটাক এড়াতে নিয়মিত মেনে চলুন এই অভ্যাস

পর্যাপ্ত ঘুম

ঘুমের ঘাটতি শরীরে প্রদাহ বাড়ায়, রক্তচাপ অস্থিতিশীল করে এবং হৃৎপিণ্ডের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়। প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য প্রতিদিন ৭–৮ ঘণ্টা ঘুম হার্টের সুস্থতার জন্য জরুরি। ঘুমানোর আগে মোবাইল, ল্যাপটপ বা টিভি স্ক্রিনের ব্যবহার কমিয়ে আনুন এবং নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমানোর অভ্যাস গড়ে তুলুন।

ধূমপান ও অ্যালকোহল পরিহার

ধূমপান রক্তনালিকে সংকুচিত করে, অক্সিজেন পরিবহণে বাধা দেয় এবং হৃদযন্ত্রে রক্ত সরবরাহ কমায়। অতিরিক্ত অ্যালকোহলও রক্তচাপ বাড়ায় ও অনিয়মিত হার্টবিটের ঝুঁকি সৃষ্টি করে। চিকিৎসকরা বলেন, ধূমপান ছেড়ে দিলে কয়েক মাসের মধ্যেই হৃদরোগের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়।

নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা

হার্টের সমস্যা অনেক সময় প্রাথমিক পর্যায়ে কোনো উপসর্গ ছাড়াই দেখা দেয়। বছরে অন্তত একবার রক্তচাপ, কোলেস্টেরল, ব্লাড সুগার ও ইসিজি পরীক্ষা করানো উচিত। যাদের পরিবারে হৃদরোগের ইতিহাস আছে, তাদের জন্য এই পরীক্ষাগুলো আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। প্রয়োজনে ডাক্তার বিশেষ কিছু পরীক্ষা যেমন ইকোকার্ডিওগ্রাম বা স্ট্রেস টেস্টও পরামর্শ দিতে পারেন।

পর্যাপ্ত পানি পান

শরীর হাইড্রেটেড থাকলে রক্তপ্রবাহ ভালো হয় এবং হার্টের ওপর চাপ কমে। দিনে অন্তত ৮ গ্লাস পানি পান করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। চা-কফি বা চিনি মেশানো পানীয় পান কমিয়ে দিন, কারণ এগুলো ডিহাইড্রেশন বাড়াতে পারে।

ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা

অতিরিক্ত ওজন হৃদযন্ত্রের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে। স্থূলতা রক্তে চর্বি জমার ঝুঁকি বাড়ায় এবং ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের মতো হার্ট অ্যাটাকের সহায়ক রোগগুলোর সম্ভাবনা বৃদ্ধি করে। সুষম খাদ্য ও নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে ওজন আদর্শ সীমায় রাখুন।

চিকিৎসকের পরামর্শ:

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হার্ট অ্যাটাক এড়াতে নিয়মিত জীবনযাপন এবং খাদ্য নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট অপরিহার্য। যাদের ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ বা কোলেস্টেরল সমস্যা আছে, তারা অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শমতো ওষুধ এবং নিয়ম মানবেন। হার্টের কোনো অস্বাভাবিক লক্ষণ—যেমন বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, অতিরিক্ত ক্লান্তি বা মাথা ঘোরা—দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসা নিন। আজ থেকেই ছোট ছোট পরিবর্তন আনা শুরু করুন—কারণ সুস্থ হৃদয় মানেই সুস্থ জীবন।

হার্ট অ্যাটাক এড়াতে নিয়মিত মেনে চলুন এই অভ্যাস

হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধে বাড়তি কিছু অভ্যাস

লবণ কমিয়ে দিন
অতিরিক্ত লবণ রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়, যা হৃদরোগের বড় কারণ। প্রতিদিন ৫ গ্রাম (প্রায় ১ চা-চামচ) এর বেশি লবণ খাবেন না। প্রক্রিয়াজাত খাবার (চিপস, সস, ইনস্ট্যান্ট নুডলস) থেকে দূরে থাকুন, কারণ এগুলোতে লবণ লুকানো থাকে।

নিয়মিত মেডিটেশন বা যোগব্যায়াম
মেডিটেশন শুধু মানসিক চাপ কমায় না, বরং রক্তচাপও নিয়ন্ত্রণে রাখে। প্রতিদিন সকালে ১০–১৫ মিনিট গভীর শ্বাস নেওয়া ও ছাড়ার অনুশীলন করুন।

চিনি ও সফট ড্রিঙ্ক বাদ দিন
চিনি রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়িয়ে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি তৈরি করে, যা হার্ট অ্যাটাকের অন্যতম সহায়ক কারণ। সফট ড্রিঙ্ক ও মিষ্টি জাতীয় খাবার যতটা সম্ভব কমান।

ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খান
ফাইবার রক্তের কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। ব্রাউন রাইস, ওটস, গোটা গমের রুটি, শাকসবজি ও ডাল বেশি খান।

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন