বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ ২০২৫

শিরোনাম

হার দিয়ে টি-২০ বিশ্বকাপ শেষ করল বাংলাদেশ

বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ৪, ২০২১

প্রিন্ট করুন
image 180314 1636028931bdjournal 1

চলমান ডেস্ক: হার দিয়ে টি-২০ বিশ্বকাপের সপ্তম আসর শেষ করল বাংলাদেশ। সুপার টুয়েলভে গ্রুপ-১এ নিজেদের পঞ্চম ও শেষ ম্যাচে বৃহস্পতিবার (৪ নভেম্বর) অস্ট্রেলিয়ার কাছে আট উইকেটে হেরেছে বাংলাদেশ।

সুপার টুয়েলভে পাঁচ ম্যাচের সবকটিতেই হারল বাংলাদেশ। বাছাই পর্বে তিন ম্যাচের দুইটিতে জিতেছিল বাংলাদেশ।

অস্ট্রেলিয়ার লেগ স্পিনার এডাম জাম্পার স্পিন বিষে কুপোকাত হয়ে ১৫ ওভার ব্যাট করে মাত্র ৭৩ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। টানা দুই ম্যাচ একশোর কম রানে অলআউট হল টাইগাররা। আগের ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৮৬ রানে অলআউট হয়েছিল মাহমুদুল্লাহর দল।

চার ওভার বল করে ১৯ রানে পাঁচ উইকেট নেন জাম্পা। জবাবে ছয় দশমিক দুই ওভার ব্যাট করে ম্যাচ জিতে নেয় অস্ট্রেলিয়া। এ জয়ে চার খেলায় তিন জয়ে ছয় পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে উঠলো অস্ট্রেলিয়া।  

প্রথম চার ম্যাচ হেরে সেমিফাইনালে খেলার আশা ভঙ্গ হবার পর বিশ্বকাপের শেষটা ভাল করার আশায় দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অস্ট্রেলিয়ার একাদশে একটি পরিবর্তন নিয়ে খেলতে নামে বাংলাদেশ। আগের ম্যাচে খেলা স্পিনার নাসুম আহমেদের পরিবর্তে একাদশে ফিরেন কাটার মাস্টার মুস্তাফিজুর রহমান।

টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ। স্ট্রাইকে থাকা ওপেনার মোহাম্মদ নাইম প্রথম ওভারের দ্বিতীয় বলে এক রান নিয়ে আরেক ওপেনার লিটন দাসকে স্ট্রাইক দেন। নিজের মুখোমুখি হওয়া প্রথম বলেই অস্ট্রেলিয়ান পেসার মিচেল স্টার্কের বলে বোল্ড হন লিটন। ইনসাইড এজ হয়ে বল স্টাম্প ভাঙ্গে, এক বল খেলে খালি হাতে ফিরেন লিটন।

লিটনের বিদায়ে উইকেটে আসেন সৌম্য সরকার। দ্বিতীয় ওভারের তৃতীয় বলে জশ হ্যাজেলউডকে শর্ট মিড উইকেট ও মিড অনের মাাঝ দিয়ে বাউন্ডারি মারেন সৌম্য। কিন্তু একই ওভারের শেষ বলে লিটনের মত দুর্ভাগ্যের শিকার হয়ে বোল্ড হন তিনি। ইনসাইড এজ হয়ে বল স্টাম্পে আঘাত হানলে আট বলে পাঁচ রান করে প্যাভিলিয়নে ফিরেন সৌম্য।

দশ বলে ছয় রানে দুই উইকেট হারিয়ে কাঁপতে শুরু করে বাংলাদেশ। সেই কাপুনি আরো বাড়ে অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিমের ব্যর্থতায়। এবার আর রিভার্স সুইপ, সুইপ বা স্কুপ শট খেলতে গিয়ে আউট হননি মুশফিক। অস্ট্রেলিয়ার স্পিনার গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের ডেলিভারি ফ্রন্টফ্রুটে খেলতে গিয়ে বলের লাইন মিস করে লেগ বিফোর হন মুশফিক। রিভিউর সুযোগ থাকলেও নেননি দুই বলে এক রান করা মুশি।

দলীয় দশ রানে মুশফিকের আউটে চাপে পড়ে বাংলাদেশ। এ চাপকে দূর করার চেষ্টা করেন নাইম ও অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ। জুটি গড়ার পথে ছিলেন তারা। চতুর্থ ওভারে অস্ট্রেলিয়ার পেসার প্যাট কামিন্সকে দুর্দান্ত শটে দুইটি চার মারেন নাইম। স্টার্কের করা পরের ওভারের শেষ দুই ডেলিভারিতে দুইটি চার আদায় করে নেন মাহমুদুল্লাহ।

বাউন্ডারি মেরে ষষ্ঠ ওভার শুরু করেছিলেন নাইম। তবে তৃতীয় বলে নাইমকে থামান জশ হ্যাজেলউড। পুল করতে গিয়ে স্কয়ার লেগে কামিন্সকে ক্যাচ দেন উইকেটে সেট ব্যাটার নাইম। ১৬ বলে তিনটি চারে ১৭ রান করেন নাইম।
আগের ম্যাচে মুখোমুখি হওয়া প্রথম বলে উইকেট ছেড়ে খেলতে গিয়ে আউট হয়েছিলেন আফিফ হোসেন। এবার রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে খেলতে গিয়ে অস্ট্রেলিয়ার স্পিনার এডাম জাম্পার বলে স্লিপে অসি অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চকে ক্যাচ দেন আফিফ। টানা দ্বিতীয় ম্যাচে খালি হাতে প্যাভিলিয়নে ফিরেন আফিফ।

৩৩ রানে পঞ্চম ব্যাটার হিসেবে আফিফের আউটের পর দ্রুত গুটিয়ে যাওয়া শংকায় পড়ে বাংলাদেশ। সেই শঙ্কা দূর করতে অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের চড়াও হন শামীম হোসেন। নবম ওভারে জাম্পাকে ডিপ স্কয়ার লেগের উপর দিয়ে দারুন শটে ছক্কা মারেন শামীম। তার আগের ওভারে স্টার্ককে চারও মেরেছিলেন তিনি। এতে বিধ্বস্ত অবস্থা থেকে ঘুড়ে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখে বাংলাদেশ। কিন্তু বাংলাদেশের ম্যাচে ফেরার পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ান জাম্পা। ১১তম ওভারের শেষ দুই বলে শামীম ও মাহেদি হাসানকে আউট করেন তিনি। কাট করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন শামিম। আর লেগ বিফোর আউট হন মাহেদি। রান করতে না পারা মাহেদি রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি। শামীম ১৮ বলে একটি করে চার ও ছক্কায় ১৯ রান করেন। ৬২ রানের সপ্তম উইকেট তুলে নিয়ে বাংলাদেশকে দ্রুত গুটিয়ে দেয়ার পথ তৈরি করে ফেলে অস্ট্রেলিয়া। সেই পথে একমাত্র বাঁধা ছিলেন মাহমুদুল্লাহ। ১৩তম ওভারে মাহমুদুল্লাহর বিদায় ঘন্টা বাজান স্টার্ক। দুইটি চারে ১৮ বলে ১৬ রান করেন মাহমুদুল্লাহ।

দলীয় ৬৫ রানে অষ্টম ব্যাটার হিসেবে মাহমুদুল্লাহ আউট হন। এরপর টাইগারদের শেষ দুই উইকেট তুলে নিয়ে ১৫ ওভারে বাংলাদেশকে ৭৩ রানে গুটিয়ে দেন জাম্পা। বিশ্বকাপের মঞ্চে এটি বাংলাদেশ দলের দ্বিতীয় সর্বনিম্ন রান। এমনকি নিজেদের টি-২০ ইতিহাসেও। একই সাথে  অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এটিই সর্বনিম্ন রান টাইগারদের। এ ইনিংস দিয়ে ৫৪ ম্যাচের ক্যারিয়ানে প্রথম বারের মত পাঁচ উইকেট নেন জাম্পা।

শেষ দুই ব্যাটার মুস্তাফিজুর চার ও শরিফুল ইসলাম শুন্য রান করে জাম্পার শিকার হন। ছয় রানে অপরাজিত থাকেন তাসকিন আহমেদ। জাম্পার পাশাপাশি বাংলাদেশের ব্যাটারদের অতি দ্রুত  সাজ ঘরে ফেরাতে অবদান রেখেছেন স্টাক-হ্যাজেলউড ও ম্যাক্সওয়েল। স্টার্ক-হ্যাজেলউড দুইটি করে ও ম্যাক্সওয়েল একটি উইকেট নেন।

জয়ের জন্য ৭৪ রানের সহজ লক্ষ্যে বাংলাদেশ বোলারদের উপর চড়াও হন অস্ট্রেলিয়ার দুই ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার ও অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ। তিন ওভারে ২৩ রান আসলেও, চতুর্থ ওভারে মুস্তাফিজুর রহমানের বলে ২১ রান নেন ওয়ার্নার-ফিঞ্চ। তাসকিনের করা পঞ্চম ওভারের তৃতীয় ও চতুর্থ বলে দুইটি ছক্কা মারেন ফিঞ্চ। তবে একই ওভারের শেষ বলে ফিঞ্চের উইকেট উপড়ে ফেলেন তাসকিন। দুইটি চার ও চারটি ছক্কায় ২০ বলে ৪০ রান করেন ফিঞ্চ।
পরের ওভারে বাংলাদেশকে দ্বিতীয় সাফল্য এনে দেন শরিফুল। ওয়ার্নারকে বোল্ড করেন তিনি। আউট হওয়ার আগে ১৪ বলে তিনটি চারে ১৮ রান করেন ওয়ার্নার।

জয় থেকে সাত রানে দূরে থাকতে আউট হন ওয়ার্নার। সপ্তম ওভারের প্রথম বলে চার ও দ্বিতীয় বলে ছক্কা মেরে অস্ট্রেলিয়ার জয় নিশ্চিত করেন মিচেল মার্শ। পাঁচ বলে দুইটি চার ও একটি ছক্কায় অপরাজিত ১৬ রান করেন মার্শ।
তাসকিন তিন দশমিক দুই ওভার বল করে ৩৬ রান দিয়ে এক উইকেট নেন। এক ওভারে নয় রান দিয়ে এক উইকেট নেন শরিফুল। দুই ওভারে ৩২ রান দিয়ে উইকেট শুন্য ছিলেন মুস্তাফিজুর। ম্যাচ সেরা হন জাম্পা।

আগামী ৬ নভেম্বর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে গ্রুপ পর্বে শেষ ম্যাচ খেলবে অস্ট্রেলিয়া।Attachments area

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন