বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে হুমায়ূন আহমেদ একটি অমর নাম। তার সৃষ্টির মাধ্যমে তিনি আজও জীবন্ত—পাঠকের হৃদয়ে, স্মৃতিতে ও সাহিত্যের পাতায়। সাহিত্যের পাশাপাশি রঙিন পর্দায়ও তিনি রেখে গেছেন অমরত্বের ছাপ। উপহার দিয়েছেন একের পর এক কালজয়ী সৃষ্টি।
তিনি ছিলেন একাধারে ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, নাট্যকার, গীতিকার ও চলচ্চিত্র নির্মাতা। আজ এ কিংবদন্তির মৃত্যুবার্ষিকী। এই দিনেই থেমে যায় তার সৃষ্টিময় জাদুর বাঁশি।
চলচ্চিত্র জগতেও পা রাখেন গল্পকার হিসেবেই। ১৯৯২ সালের ‘শঙ্খনীল কারাগার’ সিনেমার গল্প তাকে এনে দিয়েছিল সেরা গল্পকার হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও। ১৯৯৪ সালে মুক্তি পায় হুমায়ূন আহমেদ নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘আগুনের পরশমণি’। তারপর একে একে বানিয়েছেন আরো সাতটি সিনেমা।
যার মধ্যে বেশির ভাগ সিনেমা চিরসবুজ, বদলে দিয়েছে বাংলা চলচ্চিত্র অঙ্গনের চেহারা। আজ নন্দিত এ লেখক ও নির্মাতার মৃত্যুবার্ষিকীতে তার সেরা পাঁচটি চলচ্চিত্র নিয়ে প্রতিবেদন। যে সিনেমাগুলো কালজয়ী হয়ে গেঁথে রয়েছে দর্শকহৃদয়ে।

হুমায়ূন আহমেদের আগুনের পরশমণি (১৯৯৪)
বাংলা চলচ্চিত্রে হুমায়ূন আহমেদের যাত্রা শুরু ‘আগুনের পরশমণি’র মাধ্যমে। দেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে নির্মিত এই সিনেমাটি মুক্তির পরই দর্শকের হৃদয়ে স্থায়ী আসন পায়।
যুদ্ধের বিভীষিকা সরাসরি দেখানোর পরিবর্তে হুমায়ূন চিত্রনাট্যের আবহে মানুষের অনুভূতিকে স্পর্শ করেছেন। বিপাশা হায়াত, আসাদুজ্জামান নূর, আবুল হায়াত, ডলি জহুর ও শিলা আহমেদের অভিনয় সিনেমাটিকে আরো জীবন্ত করে তোলে। সরকারি অনুদানে নির্মিত এই চলচ্চিত্রটি সেরা চলচ্চিত্রসহ আটটি বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতেছিল।
হুমায়ূন আহমেদের শ্রাবণ মেঘের দিন (২০০০)

‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ বৃষ্টিভেজা মাটির গন্ধ আর গ্রামীণ প্রেমকাহিনির অনন্য দলিল। ভাটি অঞ্চলের পটভূমিতে মতির প্রেমের গল্প, জাহিদ হাসান, মাহফুজ আহমেদ আর মেহের আফরোজ শাওনের মন ছুঁয়ে যাওয়া অভিনয়—সব মিলিয়ে সিনেমাটি হয়ে ওঠে একসময়ের অন্যতম জনপ্রিয় ও ব্যবসাসফল বাংলা ছবি। সুবীর নন্দীর ‘এক যে ছিল সোনার কন্যা’ গানটি এখনো মানুষের মনে গুনগুনিয়ে ওঠে। এই ছবির জন্য হুমায়ূন আহমেদ সেরা গল্পকার ও সেরা গীতিকারের স্বীকৃতি পান।
হুমায়ূন আহমেদের শ্যামল ছায়া (২০০৪)
মুক্তিযুদ্ধকে ঘিরে হুমায়ূনের আরেক অনন্য নির্মাণ ‘শ্যামল ছায়া’। ২০০৬ সালে অস্কারের বিদেশি ভাষার সিনেমা বিভাগে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এই ছবিটি পাঠানো হয়। স্বাধীনতাযুদ্ধের অনিশ্চয়তা, প্রাণভয়ে মানুষের পালিয়ে বেড়ানো আর মুক্তির স্বপ্ন—সব কিছু ফুটে ওঠে এক নৌকার যাত্রীদের কাহিনিতে। রিয়াজ, মেহের আফরোজ শাওন, স্বাধীন খসরুসহ আরো অনেক শিল্পীর অভিনয় সিনেমাটিকে বর্ণিল করে তুলেছে। গল্পের শেষভাগে হুমায়ুন ফরীদি ছদ্মবেশী মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের ভূমিকায় চমকপ্রদ উপস্থিতি রেখে গেছেন।
হুমায়ূন আহমেদের আমার আছে জল (২০০৮)

সমসাময়িক গল্প নিয়ে হুমায়ূন আহমেদের ভিন্ন স্বাদের চলচ্চিত্র ‘আমার আছে জল’। এই সিনেমার মাধ্যমে বড় পর্দায় অভিষেক ঘটে বিদ্যা সিনহা মিমের। বাবা-মা, ভাই-বোনের সম্পর্কের টানাপড়েন, ভালোবাসা আর ত্যাগ—সব মিলিয়ে মানবিক গল্প বুনেছেন পরিচালক। শাওন, জাহিদ হাসান, ফেরদৌসসহ সবার অভিনয় গল্পকে জীবন্ত করে তোলে। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের পাশাপাশি আন্তর্জাতিকভাবে সমাদৃত হয়েছে এই ছবি।
হুমায়ূন আহমেদের ঘেঁটুপুত্র কমলা (২০১২)
হুমায়ূন আহমেদের চলচ্চিত্র জগতের শেষ উপহার ‘ঘেঁটুপুত্র কমলা’। বাংলা সংস্কৃতির লুপ্তপ্রায় ঘেঁটু গান আর তার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা জমিদারদের বিকৃত যৌন লালসার নির্মম বাস্তবতা ফুটে উঠেছে এই ছবিতে। নিউ ইয়র্কের হাসপাতালে মৃত্যুর আগে পরিচালক নিজেই শেষবারের মতো নিজের ছবিটি দেখে যেতে পেরেছিলেন। মৃত্যুর পর মরণোত্তর সেরা নির্মাতা ও সেরা চিত্রনাট্যকার হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে সম্মানিত হন তিনি। বাংলাদেশ থেকে অস্কার মনোনয়নের তালিকায়ও যুক্ত হয়েছিল সিনেমাটির নাম।
চলমান নিউইয়র্ক ফেসবুক পেজ লাইক দিন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন