সৈয়দ নজরুল ইসলাম: এ কথা আজ সর্বজন স্বীকৃত যে, বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন রপ্তানির উপর নির্ভরশীল। আর রপ্তানির প্রধানত খাত হল তৈরি পোশাক শিল্প। দেশের প্রায় ৮২ শতাংশ রপ্তানি আয় আমরা তৈরি পোশাক শিল্পের মাধ্যমে অর্জন করে আসছি। দেশে তৈরি পোশাক শিল্পের উন্নয়ন সাধারণের মাধ্যমে অর্থনীতিকে বেগবান করে দেশের উন্নয়ন করা সম্ভব।
২০৩০ সালের মধ্যে ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের রপ্তানির টার্গেট সামনে রেখে এ শিল্পে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ চলছে। কিন্তু, করোনা ভাইরাসের পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে পুরো বিশ্বে অর্থনৈতিক অস্থিরতা, দেশে দেশে মুদ্রাস্ফীতির কারণে আর্ন্তজাতিক বাজারে পোশাকের দর পতন, অর্ডার স্বল্পতা, মূল্য কম, সব শিল্পেই পেমেন্ট ইনসিকিউরডসহ রপ্তানিকারকদের মধ্যে এক ধরনের আতংক বিরাজ করছে। অন্য দিকে, সুতা ও ডাইস কেমিক্যালের দাম বৃদ্ধি, ডিজেল, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির ফলে পরিবহন ও উৎপাদন খরচ দ্বিগুণেরও বেশী বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিযোগী দেশগুলো থেকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে পিছিয়ে থাকার কারণে আমাদের দেশের পোশাক শিল্প বর্তমানে কঠিন চ্যালেঞ্জের সম্মুখিন।
এ অবস্থায় রপ্তানি বাণিজ্যকে টিকিয়ে রাখতে সরকার কর্তৃক নীতিগত সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। ‘কস্ট অব ডুইং বিজনেস’ কমানোর লক্ষ্যে বাজেটে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের নিরবিচ্ছিন্ন সরবরাহসহ মূল্য হ্রাসের ব্যবস্থা করতে হবে, ভ্যাট ট্যাক্স কমাতে হবে, ব্যাংক ইন্টারেস্ট সিঙ্গেল ডিজিটের মধ্যে রাখতে হবে, রপ্তানি আয়ে ইনসেন্টিভ অব্যাহত রাখতে হবে। বাজেটে ‘ইজি অব ডুইং বিজনেস’ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সহজীকরণ নীতিকে প্রাধান্য দিতে হবে।
এ মুহুর্তে সরকারের কাছ থেকে যে নীতি সহায়তাগুলো আমরা আশা করছি, সেগুলোর মধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য হল- রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে কর এক শতাংশ থেকে হ্রাস করে আগের মত ০.৫০ শতাংম করা ও আগামী পাঁচ বছর পর্যন্ত ব্যবস্থা রাখতে হবে; তৈরি পোশাক শিল্পের এসেসমেন্টের সময় কর আরোপকালে অন্যান্য আয় যেমন-গেইন অন এসেট ডিসপোজাল, সাব-কন্ট্রাক্ট ইনকাম এবং বিবিধ খরচকে অগ্রহণযোগ্য হিসেবে গণ্য করে স্বাভাবিক হারে (৩০ শতাংশ) কর আরোপ না করে কর্পোরেট কর হার ১২ শতাংশ হারে আরোপ করা ও আগামী পাঁচ বছর পর্যন্ত ব্যবস্থা রাখতে হবে; তৈরি পোশাক শিল্পের সাব-কন্ট্রাক্টের ক্ষেত্রে আয়কর অধ্যাদেশের রু-১৬ এর টেবিল-১ এর আওতায় সাব-কন্ট্রাক্ট প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক চুক্তির দাম পরিশোধের সময় প্রস্তাবিত ধাপ অনুযায়ী উৎসে কর ধার্য করা, ওই করকে চূড়ান্ত করদায় হিসেবে গণ্য করা, অন্যথায় এসেসেমেন্টের সময় কর আরোপকালে কর্পোরেট ট্যাক্স হার ১২ শতাংশ হারে কর ধার্য করতে হবে; রপ্তানি বাণিজ্যের বৃহত্তর স্বার্থে রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পের রপ্তানিকারকদের এক্সপোর্টার রিটেনশন কোটা ফান্ড (ইআরকিউ) থেকে রপ্তানির প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের জন্য পরিশোধিত ফি হতে উৎসে আয়কর কর্তনের হার ২০ শতাংশ হতে হ্রাস করে দশ শতাংশ করতে হবে; একইভাবে, তৈররি পোশাক রপ্তানিতে নগদ সহায়তার ওপর দশ শতাংশ কর প্রত্যাহার। যেহেতু, নগদ সহায়তা কোন ব্যবসায়িক আয় নয়, তাই, নগদ সহায়তার অর্থকে করের আওতার বাইরে রাখাই যুক্তিসঙ্গত।
সোলার পিভি সিস্টেম: বর্তমানে পুরো পৃথিবীতেই জ্বালানী সংকট দেখা দিয়েছে। জ্বালানী সংকটের কারণে শিল্প উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। দেশে শিল্পের প্রসার ও নতুন শিল্প কারখানা স্থাপনের জন্য সোলার পিভি সিস্টেম একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। জ্বালানি সংকট নিরসন, উৎপাদন ব্যয় কমানো ও রপ্তানির ধারা চলমান রাখার জন্য সোলার পিভি সিস্টেমের সরঞ্জামাদি শুল্ক রেয়াতিহারে আমদানির সুযোগ দেয়া একান্ত জরুরি।
লেখক: প্রথম সহ-সভাপতি, বিজিএমইএ
সিএন/এমএ
চলমান নিউইয়র্ক ফেসবুক পেজ লাইক দিন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন