দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে মিরসরাই উপজেলা পরিষদের পুকুর সহ ৪৮ শতক জায়গা অবৈধভাবে ভোগ দখল করে আসছে অনিল চন্দ্র দাস নামে এক ব্যক্তি। উপজেলা পরিষদের মালি হিসেবে কাজ করার সুবাদে ঊক্ত পুকুর পাড়ে অস্থায়ী ঘর নির্মান করে বসবাস শুরু করলেও, পরবর্তীতে রহস্যজনকভাবে এই জায়গার মালিক বনে যায় অনিল চন্দ্র দাস ও তার পরিবারের সদস্যরা। এখন সেখানে গৃহ নির্মাণের পাশাপাশি সুকৌশলে স্থাপন করেছে ‘ভগবান শ্রী কৃষ্ণ জয় শ্রী মা রক্তকুমারী মন্দির’।
ধর্মীয় উপাসনালয়ের নাম ব্যবহার করে উপজেলা পরিষদের জায়গাটি দীর্ঘমেয়াদী ভোগদলখলের পায়তারা করছে অনিলের পরিবার। ক্রমাগত পুকুর ভরাট করে এখন সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে বিশাল বসত ঘর। অথচ এ পুকুর লিজ দিলে সরকার গত ৪০ বছরে সেখানে অন্তত ৮০ লাখ টাকা রাজস্ব পেতো বলে জানিয়েছে মৎস্য বিভাগ।
দীর্ঘদিন ধরে স্থায়ী ভাবে বসবাস এবং দখলদারিত্বের ফলে উপজেলা পরিষদের প্রাণকেন্দ্রের এই জায়গাটি এখন বেহাতের আশংকা করছেন স্থানীয়রা। যদিও অনিল চন্দ্র দাস তার মালি পদ থেকে কয়েকবছর আগে অবসরে গেছেন। এরপরও সরকারী জায়গা ছেড়ে না দিয়ে এখন জায়গাটি স্থায়ীভাবে দখলের পায়তারায় লিপ্ত।
মিরসরাই উপজেলা পরিষদ এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, অনিল চন্দ্র দাস মিরসরাই উপজেলা পরিষদের প্রাণকেন্দ্রে উপজেলা ভূমি অফিস সংলগ্ন পুকুর পাড়ে একটি কুড়ে ঘর করে সেখানে অনিল চন্দ্র দাস বসবাস শুরু করে। মধ্য মঘাদিয়া-৭১ নং মৌজায় ৮ নং খতিয়ানভুক্ত ৫৬১১০ দাগে পুকুরটির আয়তন ৪৮ শতক। পরবর্তীতে সুকৌশলে অনিল চন্দ্র দাস ও তার পরিবার সদস্য মিলে উক্ত মন্দির স্থাপন করে।
উপজেলা পরিষদ সংশ্লিষ্টদের তথ্য অনুযায়ী, লিজ বা লিখিতভাবে বিশেষ অনুমতি না থাকলে সরকারি ভূমির মধ্যে স্থায়ী স্থাপনা, মন্দির করার বিধান নেই। সরকারি মালিকানাধীন পুকুর ভরাট করে গৃহ নির্মাণ বা ধর্মীয় স্থাপনা করা সম্পুর্ণভাবে অবৈধ।
কিন্তু অনিল চন্দ্র দাস এবং তার সন্তান লিটন কুমার দাস সহ পরিবারের সদস্যরা কিসের দাপটে উক্ত সরকারী পুকুর ভরাট করে গৃহ নির্মাণ করে ৪০ বছর ধরে বসবাস করছেন এবং মন্দির স্থাপন করছেন তা নিয়ে বিষ্মিত স্থানীয়রা।
মিরসরাই উপজেলা মৎস দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, মিরসরাই এলাকায় ৪৮ শতক জায়গায় বাণিজ্যিক ভাবে মৎস চাষ করলে প্রতিবছর প্রায় দুই লাখ টাকা আয় করা সম্ভব। সেই হিসেবে বিগত ৪০ বছরে মিরসরাই উপজেলা পরিষদের মালিকানায় থাকা এই পুকুর লিজ দিলে সরকার ৮০ লাখ টাকা আয় করতে পারতো।
এদিকে অনিল দাস ও তার পরিবারের সদস্যদের অসংলগ্ন আচরণে রীতিমতো অতিষ্ট ওই এলাকার আশপাশের স্থানীয় বাসিন্দারা। এসব বিষয়ে স্থানীয়রা প্রতিবাদ করলে সরকারী কর্মকর্তা দিয়ে হয়রানির কথা সহ বিভিন্ন ধরনের হুমকি দেয় আশপাশের বাসিন্দাদের।
সরেজমিন মিরসরাই উপজেলা পরিষদের মালিকানাধীন এই জায়গায় দেখা যায় পুকুর পাড়ের উত্তর পশ্চিম পার্শ্বে অন্তত ৫ শতক জায়গা ভরাট করে সেখানে বসত ঘর ও মন্দির নির্মাণ করা হয়েছে। এই পুকুরটিও এককভাবে অনিল দাস ভোগদখল করছে বলে জানায় স্থানীয়রা।
এদিকে অনিল চন্দ্র দাসের মেঝ ছেলে লিটন চন্দ্র দাস নানা অপকর্মের সঙ্গে জড়িত । তার বিরুদ্ধে প্রতারণা, মাদক বিক্রি, মাদক সেবন, চাঁদাবাজি সহ নানা অভিযোগ রয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের সাথে সখ্যতার প্রভাব ও প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন সরকারি চাকরির নিয়োগে মোটা অংকের অবৈধ অর্থ লেনদেনের সাথে জড়িত লিটন চন্দ্র দাস।
সম্প্রতি পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে সহকারি পদে লিখিত পরীক্ষায় ১ লাখ টাকার অবৈধ লেনদেনের বিনিময়ে এক ব্যক্তির প্রক্সি পরীক্ষায় যুক্ত থাকার কারণে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কাছে হাতে নাতে ধরা পড়ে। এই ঘটনায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন কোতয়ালী থানায় অভিযুক্ত লিটন চন্দ্র দাস সহ প্রক্সি পরীক্ষায় জড়িত সকলকে আসামী করে মামলা দায়ের করেন। এ জালিয়াতি ও প্রতারণা মামলায় উক্ত লিটন চন্দ্র দাস কারাগারেও ছিলেন।
অনিল চন্দ্র দাস ও তার পবিারের সদস্যদের হাতে নিগৃহিত ভুক্তভোগীরা জানায়, অলিন চন্দ্র দাস এবং তার সন্তানরা মিরসরাই উপজেলার সরকারী কর্মকর্তাদের বাসায় কাজ করে। এর ফলে কর্মকর্তারা ওই পরিবারের উপর কিছুটা সদয় থাকে। এই মানবিকতাকে পূঁজি করে লিটন দাশ প্রশাসনের নাম ভাঙ্গিয়ে একের পর এক অনৈতিক কাজ করে এবং নিরীহ লোকজনকে হয়রানি করে। উপজেলা কিংবা জেলা প্রশাসনের ভয় দেখিয়ে একের পর এক অপকর্ম করলেও ধরা ছোয়ার বাইরে লিটন দাস।
সরকারি জায়গায় অবৈধ বসবাস এবং মন্দির বানিয়ে জায়গা দখলের পায়তারার অভিযোগ প্রসঙ্গে লিটন চন্দ্র দাস বলেন, আমার বাবার চাকুরীর সুবাদে উপজেলা পরিষদের জায়গায় আমাদের থাকার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। বাবার অবসরের পর আমার ছোট ভাই এখন ইউএনও অফিসে কাজ করে।
সরকারি জায়গায় মন্দির স্থাপনের বিষয়ে তিনি বলেন, এটি পারিবারিক ভাবে উপসনা করার জন্য করা হয়েছে। প্রত্যেক হিন্দু পরিবারে মন্দির থাকে। উপজেলা পরিষদের পুকুরটি খালি পড়ে আছে। প্রশাসন চাইলে এটি যেকোন সময় ইজারা দিতে পারেন। তাছাড়া আমার বিরুদ্ধে যে অপপ্রচার ছড়ানো হচ্ছে তা সম্পূর্ণ ভুল।
মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং উপজেলা পরিষদের প্রশাসক মাহফুজা জেরিন এর সাথে টেলিফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি সাড়া দেননি।
চলমান নিউইয়র্ক ফেসবুক পেজ লাইক দিন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন