শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

স্বপ্ন ডানা মেলার অপেক্ষায় চুয়েটে শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর

বৃহস্পতিবার, ফেব্রুয়ারী ৩, ২০২২

প্রিন্ট করুন

মুহাম্মদ রাশেদুল ইসলাম: মানবসভ্যতার ইতিহাসে ১৭৬৩-১৭৭৫ সময়কালে জেমস ওয়াটের বাষ্পীয় ইঞ্জিন আবিষ্কারের ফলে কারখানার মেশিনের ব্যবহার ও যান্ত্রিক শক্তি দ্বারা মানুষের ‘কায়িক শক্তির প্রতিস্থাপনের মধ্য দিয়ে প্রথম শিল্প বিল্পবের সূচনা হয়েছিল। ১৮৭০-১৯১৪ সময়কালে বিজ্ঞানী মাইকেল ফারাডে, বেঞ্জামিন ফ্র্যাংকলিং, আলেসান্দ্রো ভোল্টাদের হাত ধরে বিদ্যুৎশক্তি আবিষ্কার হওয়ায় উৎপাদন কাজে আমূল পরিবর্তনের মাধ্যমে শুরু হয় দ্বিতীয় শিল্প বিপ্লব। ১৯৬৯ সাল থেকে পরবর্তী সময়কালে কম্পিউটার, ইন্টারনেট ও মোবাইল আবিস্কারের মাধ্যমে যোগাযোগের অভূতপূর্ব বিপ্লবের সময়টা ছিল তৃতীয় শিল্প বিপ্লবের। তৃতীয় শিল্প বিপ্লবের প্রায় অর্ধশতাব্দী পরে শুরু হয়েছে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জাগরণ। ক্লাউস সোয়াব ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী ২০১৬ সালে তার ‘দ্য ফোর্থ ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভোল্যুশন নামের বইয়ে সর্ব প্রথম চতুর্থ শিল্প বিপ্লব কথাটি ব্যবহার করেন। মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে সেই চতুর্থ শিল্প বিপ্লব এখন একটি বাস্তবতা। চতুর্থ শিল্প বিপ্লব ঘটছে মূলত ইন্টারনেটের সাথে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যোগের মাধ্যমে। এ বিপ্লবের যুগে আপনি পৃথিবীর যে কোন প্রান্তে অবস্থান করেও ইনোভেটিভ কোন আইডিয়া/স্টার্টআপের মাধ্যমে গোটা দুনিয়াকে নিজের প্রতিভার কথা জানান দিতে পারেন। সাথে রয়েছে মিলিয়ন-বিলিয়ন ডলারের হাতছানি। মুহূর্তেই হয়ে উঠতে পারেন একজন সফল উদ্যোক্তা।

বর্তমানে কম্পিউটার, মোবাইল ও ইন্টারনেট ছাড়া একটা মুহূর্তও আমরা কল্পনা করতে পারি না। বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসের দুঃসময়ে জুম, স্ট্রিমইয়ার্ড, ওয়েবিনার, গুগল ক্লাসরুম, ওয়ার্ক ফ্রম হোম, ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি প্রভৃতি শব্দগুলো চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের বাস্তবতাকেই যেন আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে যাচ্ছে। প্রযুক্তির ব্যবহার ও উৎকর্ষতা বাড়াতে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছেন দেশ-বিদেশের ফ্রিল্যান্সার প্রযুক্তিবিজ্ঞানীরা। নানা প্রযুক্তি সেবা/পণ্য, উদ্যোগ বা স্টার্টআপের মাধ্যমে দিন দিন তারা আমাদের জীবনযাত্রাকে অনন্য মাত্রায় নিয়ে যাচ্ছেন। বাংলাদেশেও আইটি ফ্রিল্যান্সারদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যহারে বাড়ছে। দক্ষতার দিক থেকেও বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সাররা বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে সন্তোষজনকভাবে এগিয়ে চলেছে। দেশের অর্থনীতিতে সুপরিকল্পিত ও শক্তিশালী অবদান রাখার জন্য এ সেক্টরের দক্ষ ও সম্ভাবনাময় তরুণ প্রজন্মকে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর আওতায় এনে সংগঠিত করা ছিল সময়ের দাবি। সেই প্রেক্ষীতে দেশের তথ্য প্রযুক্তি খাতে সফল উদ্যোক্তা তৈরি, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে গবেষণা ও উদ্ভাবনী কার্যক্রমকে উৎসাহিত করা ও ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়া কোলাবোরেশনকে সম্মৃদ্ধ করার মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে অধিক ভূমিকা রাখার নিমিত্তে আইসিটি বিভাগের অধীন বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের তত্বাবধানে দেশে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে সর্ব প্রথম চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (চুয়েট) নির্মিত হচ্ছে শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর। প্রায় ১২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রায় পাঁচ একর জায়গাজুড়ে নির্মিত প্রকল্পটির নির্মাণকাজ প্রায় শেষ হয়ে এখন উদ্বোধনের প্রহর গুণছে। এটি সফলভাবে বাস্তবায়ন হলে দেশের তথ্য-প্রযুক্তি খাতে নতুন দিগন্তের উন্মোচন হবে। পাশাপাশি ডিজিটাল বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় এটি নতুন মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে। বলা হয়ে থাকে, ইনকিউবেটরে এক ডলার বিনিয়োগ করলে ৩০ ডলার আয় করা যায়। সেই হিসেবে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিতে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখবে চুয়েটের এ শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর প্রকল্প।

ইনকিউবেটরের ইতিহাস: ১৯৫৯ সালে দিকে আমেরিকার নিউইয়র্কে বাটাভিয়া ইন্ডাস্ট্রিয়াল সেন্টারের মাধ্যমে ইনকিউবেটর সংক্রান্ত উদ্যোগ সর্ব প্রথম সফলভাবে শুরু হয়। বাংলাদেশে সরকারি পর্যায়ে আইসিটি বিভাগ ও বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ২০১২ সালের দিকে ইনকিউবেটর কার্যক্রমের ধারণা শুরু হয়। সেই সময়ে তারা কয়েক দফা ইনকিউবেটর স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছিল। বেসরকারি উদ্যোগে বিজনেস ইনোভেশন অ্যান্ড ইনকিউবেটশন লিমিটেড সংগঠনটিও ইনকিউবেটর নিয়ে কাজ করে। ২০১৬ সালের দিকে এসে মূলত ডিজিটাল উদ্যোক্তাদের নিয়ে ইনকিউবেটর ধারণাটি হাইটেক পার্ক ও মোবাইল অপারেটর বাংলালিংকের হাত ধরে আরো পরিচিতি পেতে শুরু করে। বর্তমানে বিশ্বে প্রায় দশ হাজার আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর রয়েছে।আন্তর্জাতিক সংস্থা ন্যাশনাল বিজনেস ইনকিউবেশন অ্যাসোসিয়েশনের ২০০৫ সালের তথ্য মতে, কেবল উত্তর আমেরিকায় বিজনেস ইনকিউবেটরের মাধ্যমে প্রায় দশ মিলিয়ন লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের পাশের দেশ চীনে ৭০০ এর অধিক ও ভারতে ৭০ এর অধিক ইনকিউবেটর রয়েছে। চীন, ভিয়েতনাম ও ভারতে ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক ইনকিউবেটর স্থাপনের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। তথ্য ও প্রযুক্তি খাতে গড়ে উঠেছে নতুন-নতুন সফল উদ্যোক্তা।

ইনকিউবেটরের ধারণা: ইনকিউবেটর মানে আমরা সাধারণত বুঝি হাঁস-মুরগির ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানোর যন্ত্র। কিন্তু এ ইনকিউবেটরে না আছে ডিম, না ফুটবে বাচ্চা। বিজনেস ইনকিউবেটর মূলত এমন একটি লাভজনক অথবা অলাভজনক প্রতিষ্ঠান/সংস্থাকে বোঝায়, যা সম্ভাবনাময় ও নতুন কিংবা প্রারম্ভিক দশার ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান তথা কোম্পানিগুলিকে ও ব্যক্তিগত ব্যবসায়িক উদ্যোক্তাদেরকে বিভিন্ন ধরনের সমর্থন ও সম্পদে প্রবেশাধিকার সেবা দিয়ে তাদের ব্যবসায়ের বিকাশ সাধনে সহায়তা করে। অর্থাৎ কোন ব্যবসায়, উদ্যোগ বা সেবাকে নিবিড় পরিচর্যার মাধ্যমে একটি সফল ও বাজার উপযোগী পণ্য/সেবায় রূপদানের এ ব্যাপারটিকে ব্যবসায় অংকুরোদগম বা বিজনেস ইনকিউবেশন বলে।

কী ধরনের সেবা মিলবে ইনকিউবেটরে: আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর মূলত একটি ইন্টিগ্রেটেড প্রতিষ্ঠান। যেখানে সম্ভাব্য উদ্যোক্তাদের সব ধরনের সেবা ও সহযোগিতা দেয়া হবে। এখানে একই ছাদের নীচে সব প্রয়োজনীয় অবকাঠামো, আধুনিক যন্ত্রপাতি, ল্যাবরেটরি ও আনুষাঙ্গিক সুবিধা নিশ্চিত করে কোন প্রযুক্তি সেবা/পণ্য, স্টার্টআপ, নতুন উদ্যোগ ও আইডিয়াকে পূর্ণাঙ্গ একটা প্রোডাক্ট অথবা সার্ভিসে রূপ দিতে সহায়তা দেয়া হয়। পাশাপাশি বিশেষজ্ঞ পরামর্শ প্রদান, সফট স্কিলস ডেভেলপমেন্ট, কারিগরি প্রশিক্ষণ, স্টার্টআপ পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ, সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের গমনাগমনসহ উদ্যোক্তাদের আবাসিক সংস্থান, অফিস সরঞ্জাম ও প্রশাসনিক সহায়তার ব্যবস্থা থাকবে। এমন প্রতিষ্ঠানের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে নতুন নতুন আইডিয়া, উদ্ভাবন বা গবেষণালব্ধ ফলাফলকে প্রোডাক্ট অথবা সার্ভিসে রূপান্তর ঘটানোর লক্ষ্যে প্রারম্ভিক সহায়তা করা। মূলত এর মাধ্যমে প্রযুক্তি খাতে উদ্যোক্তাদের সহযোগিতা করা হয়। এটি এক ধরনের উদ্যোক্তাদের সমর্থন-প্রদায়ক প্রতিষ্ঠান।

শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর: ডিজিটাল বাংলাদেশের লক্ষ্য সফলভাবে অর্জনের জন্য দক্ষ জনবল গড়ে তোলা ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতে দেশীয় সক্ষমতা যুগোপযোগী করা ও উদ্যোক্তা তৈরির প্রয়োজনীয়তা ছিল অপরিহার্য। বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য হচ্ছে একাডেমিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে গবেষণা উদ্ভাবন এবং উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য একটি কার্যকরী ব্যবস্থা। এ গুরুত্ব বিবেচনা করে, আইসিটি বিভাগের অধীনে বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ ২০১২ এর ডিসেম্বর থেকে ২০১৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর স্থাপনের জন্য উদ্যোগ নেয়। প্রাথমিকভাবে চুয়েটে ইনকিউবেটর স্থাপনের আইসিটি বিভাগ প্রস্তাব করে ২০১২ সনে। আইসিটি ডিভিশন থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর চুয়েট প্রশাসন প্রস্তাবটি গ্রহণ করে এবং চুয়েট ক্যাম্পাসে প্রকল্পের অনুকূলে প্রায় ৪ দশমিক ৭ একর জমি বরাদ্দ করে। তৎকালীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রেক্ষাপটে এটি ছিল একটি বৈপ্লবিক উদ্যোগ। প্রাথমিকভাবে, এটি চুয়েট আইটি বিজনেস ইনকিউবেশন সেন্টার নামে নামকরণ করা হয়েছিল। কিন্তু নানা জটিলতায় উদ্যোগটি ২০১৫ সালের দিকে বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তী আইসিটি বিভাগের বাজেট মনিটরিং কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে প্রায় ২ বছর পরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) এর ২৬তম সভায় ২০১৭ সালের ৬ জুন একনেক চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ প্রকল্পের অনুমোদন দেন। বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের তত্বাবধানে ২০১৭ সালের জুলাই থেকে ২০১৯ সালের জুনের মধ্যে চুয়েট আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর স্থাপন নামে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। শুরুর দিকে এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ৮২ কোটি ২ লাখ টাকা। পরবর্তী ধাপে সেই ব্যয় ৯৪ কোটি ২৫ লাখ থেকে ১১৭ কোটি ৭ লাখ টাকায় উন্নীত হয়। বর্তমানে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে প্রায় ১২৫ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। করোনা মহামারির কারণে দীর্ঘ দিন ধরে নির্মাণ কাজ বন্ধ থাকায় সর্বশেষ ২০২২ সালের জুলাইয়ে প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করার জন্য নতুন সময়সীমা নির্ধারণ করা হলেও আগামী মার্চ নাগাদ প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করে উদ্বোধন করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

যা থাকছে আইটি বিজনেস ইনকিউবেটরে: শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর প্রকল্পের আওতায় ৫ একর জমির উপর ৫০ হাজার বর্গফুট আয়তনের ১০ তলাবিশিষ্ট একটি ইনকিউবেশন ভবন ও ৩৬ হাজার বর্গফুটের ৬ তলাবিশিষ্ট একটি মাল্টিপারপাস প্রশিক্ষণ ভবন তৈরি হচ্ছে। ইনকিউবেশন ভবনের মধ্যে থাকছে- স্টার্টআপ জোন, আইডিয়া/ইনোভেশন জোন, ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিক জোন, ব্রেইনস্ট্রর্মিং জোন, এক্সিবিশন সেন্টার, ই-লাইব্রেরি জোন, ডাটা সেন্টার, রিসার্চ ল্যাব, ভিডিও কনফারেন্সিং কক্ষ, সভাকক্ষ প্রভৃতি। এছাড়া ব্যাংক ও আইটি ফার্মের জন্য পৃথক কর্ণার, অত্যাধুনিক সাইবার ক্যাফে, ফুড কোর্ট, ক্যাফেটেরিয়া, রিক্রিয়েশন জোন, মেকার স্পেস, ডিসপ্লে জোন, প্রেস/মিডিয়া কাভারেজ জোন প্রভৃতি থাকবে। অন্য দিকে, মাল্টিপারপাস প্রশিক্ষণ ভবনে ২৫০ জনের ধারণক্ষমতাসম্পন্ন সুসজ্জিত অডিটোরিয়াম ও ৫০ জনের ধারণক্ষমতাসম্পন্ন পৃথক ৪টি কম্পিউটার ল্যাব কাম সেমিনার কক্ষ থাকছে। পাশাপাশি প্রতিটি ২০ হাজার বর্গফুট আয়তনের ৪ তলাবিশিষ্ট পৃথক দুইটি (১টি নারী, ১টি পুরুষ) আবাসিক ডরমিটরি ভবন নির্মিত হচ্ছে। প্রতিটি ডরমিটরিতে ৪০টি কক্ষ রয়েছে। এছাড়া একটি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ল্যাব, একটি মেশিন লার্নিং ল্যাব, একটি অপটিক্যাল ফাইবার ব্যাকবোন, একটি সাব-স্টেশন ও সোলার প্যানেল স্থাপন করা হচ্ছে।

কারা কাজ করার সুযোগ পাবেন: তথ্যপ্রযুক্তির সাথে সংশ্লিষ্ট বিভাগসমূহ যেমন- সিএসই, ইটিই, ইইই, আইসিটি/আইআইসিটিতে পড়াশোনা করা গ্র্যাজুয়েটদের পাশাপাশি চুয়েটের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ দেশের প্রযুক্তিজ্ঞানসম্পন্ন যে কোন উদ্যমী উদ্যোক্তা এ ইনকিউবেটরে কাজ করার সুযোগ পাবেন। এখানে উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে যে কেউ তাদের উদ্ভাবনী পরিকল্পনা নিয়ে ব্যবসা কার্যক্রম শুরু করতে পারবেন। ইনকিউবেটরের অবকাঠামো ও অন্যান্য লজিস্টিক সুবিধা ব্যবহার করে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে যেমন কাজ করার সুযোগ মিলবে, তেমনি নিবন্ধিত উদ্যোক্তা হিসেবেও কাজ করার সুযোগ পাবেন। উদ্যোক্তা তৈরির লক্ষ্যে ও উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করার জন্য ইনকিউবেটরে দেশ-বিদেশের বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ প্রদান, সফল উদ্যোগের জন্য সহজ শর্তে ঋণ প্রদান, উচ্চগতির ইন্টারনেট সংযোগ, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ, উদ্যোক্তাদের থাকার জন্য ডরমিটরিসহ সবধরনের সুবিধা নিশ্চিত করা হবে।

কীভাবে একজন উদ্যোক্তা ইনকিউবেটরে কাজ করবেন: ধরুন, শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটরের আপনি একজন উদ্যোক্তা। আপনি দীর্ঘ দিন গবেষণার মাধ্যমে একটি ব্যতিক্রমী ও ইনোভেটিভ আইডিয়া নিয়ে কাজ করে প্রাথমিকভাবে সফলতা পেলেন। ইনকিউবেটর কর্তৃপক্ষও যাচাই-বাছাই করে আপনার সেই উদ্যোগের ব্যাপারে ইতিবাচক। তাদের তত্বাবধানে সেই আইডিয়া/স্টার্টআপটি আপনি আরো বহুদূর এগিয়ে নিতে চান। তখন আপনার সেই উদ্যোগ/স্টার্টআপকে বাণিজ্যিক রূপ দিতে সবধরনের সহায়তা দিতে একযোগে কাজ করবেন ইনকিউবেটর সংশ্লিষ্টরা। এভাবে বাজারে আপনার উদ্যোগটি সফলতার মুখ দেখলে আপনি হয়ে উঠবেন একজন সফল প্রযুক্তি উদ্যোক্তা।

তথ্যপ্রযুক্তি খাতে সরকারের ড্রিম প্রজেক্ট: বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হোসনে আরা বেগম ২০২০ এর ১৩ নভেম্বর শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটরের নির্মাণকাজ পরিদর্শনে এসে প্রকল্পটিকে বর্তমান সরকারের একটি “ড্রিম প্রজেক্ট” হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছিলেন। সরকারের পক্ষ থেকেও এ প্রকল্পের তদারকি, বাজেট কিংবা অন্যান্য সবরকমের সহযোগিতার ব্যাপারে আন্তরিকতার অভাব নেই। সরকার যে কোনভাবেই দেশের প্রথম এ উদ্যোগের সফলতা দেখতে চাইছে। তাই প্রকল্পটিকে ঘিরে সরকার, হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ চুয়েট পরিবারের সকলের প্রত্যাশার পারদ অনেক উঁচুতে। এছাড়া সিটির চান্দগাঁও এলাকায় শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার, আগ্রাবাদের সিংগাপুর-ব্যাংকক মার্কেটে সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক ও আইটি পার্ক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ্ব মানের আইটি পার্ক প্রভৃতির মাধ্যমে পুরো চট্টগ্রামকে ঘিরে একটি আইটি বিজনেস হাব গড়ে তোলার জন্য সরকারের পক্ষ থেকেও নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

গবেষণা ও প্রযুক্তি খাতে বিপ্লব ঘটাবে ইনকিউবেটর: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডায়নামিক নেতৃত্বে ডিজিটাল বিশ্বে বাংলাদেশ এখন একটা উদীয়মান নাম। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতের দ্রুত পরিবর্তন ও তার সুফল ইতোমধ্যে আমরা দেখতে পাচ্ছি। বিগ ডাটা ও মেশিন লার্নিং বর্তমান বাস্তবতায় প্রযুক্তির নতুন ডাইমেনশন। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, ইন্টারনেট অফ থিংস, ক্লাউড কম্পিউটিং, রোবটিক্স, থ্রিডি প্রিন্টিং, ব্লকচেইন, উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন তারবিহীন প্রযুক্তি প্রভৃতি আমাদের সক্ষমতাকে আরো এগিয়ে নিতে সহায়তা করবে। বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় জাতীয় উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে এসব উন্নত প্রযুক্তিকে কাজে লাগাতে হবে। চুয়েটের শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর এসব প্রযুক্তির সমন্বয় ঘটিয়ে দেশের শিক্ষা ও গবেষণা ক্ষেত্রে একটি বিপ্লব তৈরি করবে- এমনটাই প্রত্যাশা করছেন ইনকিউবেটর সংশ্লিষ্টরা।

সৃজনশীল তরুণদের সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিবে: বিজনেস ইনকিউবেটর স্থাপনের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে বিশ্বে তাক লাগিয়েছে চীন ও ভারত। সে পথেই হাঁটছে বাংলাদেশ। চুয়েটের আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর সৃষ্টিশীল তরুণদের জন্য খুলে দিতে পারে অপার সম্ভাবনার দ্বার। এ ইনকিউবেটরের মাধ্যমে দেশের তরুণ প্রজন্মের আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের হাতছানি দিচ্ছে। আমাদের দেশের তরুণরা এখনও শুধুই চাকরির পেছনে ছুঁটছে। নানা প্রতিকূলতার কারণে দেশের তরুণরা উদ্যোক্তা হওয়ার সাহস দেখাতে পারছে না। কিন্তু আইটি বিজনেস ইনকিউবেটরের মাধ্যমে দেশের প্রযুক্তি খাতে উদ্যোক্তা হওয়ার পথ সহজ করে দিবে। এ ইনকিউবেশন সেন্টারে বসে সৃজনশীল আইডিয়া কাজে লাগিয়ে যে কেউ তৈরি করতে পারবেন স্টার্টআপ বা প্রোডাক্টিভ সার্ভিস। যা বাজারজাত করার দায়িত্ব নেবেন ইনকিউবেটর সংশ্লিষ্টরা। প্রয়োজন শুধু কিছু ইউনিক, ইনোভেটিভ ও মার্কেটে ভ্যালু আছে এমন আইডিয়া নিয়ে হাজির হওয়া। সেইসাথে থাকতে হবে প্রযুক্তি জ্ঞান, কাজের প্রতি একাগ্রতা ও সৃজনশীলতা। তাহলে আপনিও হয়ে উঠতে পারেন চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের একজন দক্ষ কারিগর ও সফল উদ্যোক্তা।

লেখক: জনসংযোগ কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

সিএন/এমএ

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন